আশ্রয় প্রার্থীদের বহিষ্কার ত্বরান্বিত করবে

মানবাধিকার আইন বাতিলের পরিকল্পনা করছে ব্রিটিশ সরকার

ব্রিটিশ সরকার আশ্রয় প্রার্থীদের বহিষ্কার ত্বরান্বিত করতে এবং বিদেশে কর্মরত ব্রিটিশ সৈন্যদের সুরক্ষার জন্য মানবাধিকার সংক্রান্ত ইউরোপীয় চুক্তির অংশবিশেষ বাতিলের পরিকল্পনা করছে। প্রস্তাবসমূহ সমন্বয় করছেন ডাউনিং স্ট্রিট-এর সহকর্মীরা। তারা ঐ সব ক্ষেত্রে দাবিসমূহ বাতিলে ইচ্ছুক যে সব ক্ষেত্রে বিচারকগণ তাদের ক্ষমতার বাইরে যাচ্ছেন বলে অনুমিত।

এই বিধিনিষেদসমূহ মাইগ্র্যান্ট ও আশ্রয় প্রার্থীদের যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কার এড়াতে আইনের ব্যবহার প্রতিরোধ করবে এবং বিদেশে ব্রিটিশ সৈন্যদের অভিযানসমূহের পর দাবির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে। মানবাধিকার ক্ষমতাবলী সীমিতকরণে ডাউনিং স্ট্রিটের এই পদক্ষেপ ইইউ প্রত্যাহার আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েছে। সরকার কনভেনশন বা চুক্তির প্রতি অনুগত থাকতে ব্রাসেলস্ কে একটি আনুষ্ঠানিক মুচলেকা বা প্রতিশ্রুতি প্রদানকে প্রতিহত করছে।
জনৈক সরকারী মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার মানবাধিকার সংক্রান্ত ইউরোপীয় কনভেনশন পালনে এবং মানবাধিকার রক্ষায় এবং দেশে-বিদেশে এগুলো সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এজন্য একটি অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক আইনগত প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য কীভাবে তার দীর্ঘকালীন দৃঢ় মানবাধিকার সুরক্ষাকে কার্যকর রাখবে একটি স্বায়ত্তশাসিত দেশ হিসেবে সেটা তার বিষয়। একইভাবে ইইউ ও তার সদস্যদেশসমূহ তাদের নিজেদের আইন বিন্যাস অনুসারে তাদের নিজের মানবাধিকার সুরক্ষা কার্যকর রাখবে।
১৯৯৮ সালে লেবার সরকার কর্তৃক পাশকৃত ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাক্ট’ ব্রিটিশ আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়। এটা দীর্ঘদিন যাবৎ ডানপন্থী রক্ষণশীলের দলের লক্ষ্যবস্তু হয়ে আছে। গত বছর দলটি ইশতেহারে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় যে, আইনটি হালনাগাদ করা হবে এবং ব্যক্তিক অধিকার, জাতীয় নিরাপত্তা এবং কার্যকর সরকারের মধ্যে একটি উপযুক্ত ভারসাম্য নিশ্চিত করা হবে।
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্ট বাতিলে ইতোপূর্বের প্রচেষ্ঠাসমূহ ব্যর্থ হয়। ইইউ প্রত্যাহার চুক্তি বাতিলে বরিস জনসনের হুমকি নিয়ে বাদানুবাদের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক আইনী বাধ্যবাধকতা থেকে বেরিয়ে আসার একটি ব্যাপকতর প্রতিশ্রুতির ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে। ব্রিটিশ বিচার বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট বাকল্যান্ড কিউসি বলেন, এখন আইনটির (মানবাধিকার) বয়স ২০ বছর। আমি মনে করি এ দিকে সযত্ন দৃষ্টি প্রদান আবশ্যক। আমরা একটি পরিপক্ব ও সংবেদনশীল পন্থায় পরীক্ষা ও কার্যের জন্য কাজ করছি। আপনারা জানেন, ১৯৫০ সালে ব্রিটিশ রক্ষণশীল আইনজীবীরা এই বাজে জিনিসটি করেছিলেন। আমরা এটা করেছিলাম কারণ আমরা ইউরোপের নেতৃত্বে ছিলাম, যখন স্বাধীনতার প্রশ্ন এলো তখন আমরা আবার মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিলাম এবং সত্যি বলতে কী এটা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটা আমাদের দেশের জন্য সম্মানের ব্যাজ যা আমরা করেছিলাম। হ্যাঁ, এখন সেই সময় যখন আমরা এর ব্যাখ্যার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আমাদের অসম্মতি ও বিরোধ থাকতে পারে। তবে আপনারা জানেন, সমর্থনের ক্ষেত্রে একটি বিস্তৃত মার্জিন বা সীমানা বিদ্যমান, যা সদস্যদেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব আইন তৈরীর অনুমতি দেয়, যা আমাদের ব্যাপক স্বাধীনতা প্রদান করে।
কাউন্সিল অব ইউরোপ চুক্তিটির পৃষ্ঠপোষক ছিলো, যার রাশিয়া ও তুরস্কসহ ৪৭টি সদস্যদেশ রয়েছে। বেলারুশ একমাত্র ইউরোপীয় দেশ, যে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেনি।
এ ব্যাপারে লেবার পার্টির ছায়া বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এমপি বলেন, দেশে-বিদেশে মানবাধিকারের উন্নয়নে আমাদের দেশের ভূমিকায় লেবার পার্টি গৌরবান্বিত। মানবাধিকার ত্যাগের যে কোন ব্রিটেনের নিরাপত্তাকে ক্ষুন্ন করবে এবং আমাদের দেশকে বিশ্ব মঞ্চের পেছনে ঠেলে দেবে।
ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির পাবলিক ল’-এর অধ্যাপক মার্ক এলিয়ট বলেন, প্রথমে তারা হাত দিলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে। এরপর মানবাধিকার সংক্রান্ত ইউরোপীয় চুক্তিতে, এখন এই উদ্যোগ হচ্ছে ইউরোপীয় মানবাধিকার চুক্তি থেকে প্রত্যাহার।
এ ব্যাপারে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এর আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকরে বলেন, ‘এবং জাতিসংঘ থেকে প্রত্যাহার নয় কেনো?’
লিবারেল ডেমোক্র্যাট জাস্টিস মুখপাত্র উয়েরা হবহাউস বলেন, আইনের শাসনের ওপর রক্ষণশীল সরকারের হামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার আইন মারাত্মক অপরাধীদের বহিষ্কারকরণে আমাদের বাধা দেয় না। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে জনগনের ক্ষমতাকে দুর্বল করার হুমকি দেয়া হচ্ছে, শুধু এ কারণে যে, মাঝে মাঝে আদালত তাদেরকে গণতান্ত্রিক নয় এমন একনায়োকোচিত ও স্বেচ্ছাচারীর মতো কাজের বিরুদ্ধে বিধি আরোপ করছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button