হাজারো আশ্রয় প্রার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হোম অফিস
সম্প্রতি হোম অফিসের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রত্যখ্যাত আশ্রয় প্রার্থীদের বাহিষ্কার শীঘ্রই কার্যকর হবে। দাতব্য সংস্থাসমূহ জানিয়েছে, ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে আটককৃত লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে সব আশ্রয় প্রার্থীর কেস প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং যাদের কোন বিশেষ আপীল নেই তাদেরকে চলতি সপ্তাহ থেকে ২১ দিনের নোটিশ দিয়ে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করতে বলা হবে।
এই গ্রুপের সরকারী অর্থ সহায়তা লাভের কোন বিধান নেই। ইতোমধ্যে হোম অফিস ‘মর্টন হল’ নামক একটি ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে এবং ইয়ার্লস উড নামক অপর একটি সেন্টার ব্যবহার করছে ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চল থেকে ক্ষুদ্র নৌকা দিয়ে ব্রিটেনে আসা আশ্রয় প্রার্থীদের প্রোসেস বা প্রক্রিয়াকরণের জন্য।
অপরদিকে কিছু প্রত্যখ্যাত আশ্রয় প্রার্থীদের হোম অফিসের অর্থায়নকৃত হোটেলগুলোতে রাখা হয়েছ। অন্যান্যদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সমূহের অর্থে অস্থায়ীভাবে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা জানা যায়নি যে, শোষোক্ত গ্রুপটি বাহিষ্কারের জন্য লক্ষ্যবস্তু হবে কি-না। লকডাউন শুরু পর লন্ডনে হোটেল ও অন্যান্য অস্থায়ী আবাস স্থলে স্থান পাওয়া গৃহহনদের প্রায় অর্ধেক লোকজনকে মাইগ্র্যান্ট বা অভিবাসী বলে মনে করা হয়।
গত মঙ্গলবার চ্যারিটিসমূহের কাছে লেখা পত্রে ‘ইউকে ভিসাজ এন্ড ইমিগ্রেশন’-এর মহাপরিচালক বলেন, ইংল্যান্ডে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত সম্বলিত আশ্রয়প্রার্থীদের অবিলম্বে কার্যকর উচ্ছেদ সংক্রান্ত নোটিশ প্রদান করা হবে। উচ্ছেদের আগে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
গত জুন মাসে ‘পাবলিক ইন্টারেস্ট ল’ সেন্টার’ (পিআইএলসি) লকডাউনের পর সরকারী সহায়তাহীন অভিবাসীদের সম্ভাব্য ভাগ্যের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে। পিআইএলসি’র জনৈক মুখপাত্র বলেন, একজন মানুষের নিরাপত্তা, যত্ন ও আশ্রয়ের বিষয়টি সে কোথায় জন্ম গ্রহণ করেছে কিংবা কী কী কাগজপত্র তার আছে, এর উপর নির্ভর করা কখনো উচিত নয়।
রাফ শ্লিপিং এন্ড হাউজিং বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী লিউক হল গত ২৮ মে কাউন্সিলগুলোকে যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং অভিবাসী উভয় শ্রেণীর রাফ শ্লিপার বা ভাসমান লোকজনের আবাসনের বিষয়ে লিখেন।
ডিটেনশন অ্যাকশন-এর পরিচালক বেলা স্যাংকি বলেন, তার সংগঠন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে অবগত।
তিনি বলেন, এটা একটি কেলেংকারি যে, কভিডপূর্ব সময়ে এসাইলাম সিস্টেমে আটক লোকজনকে তাদের বেঁচে থাকার জন্য দাতব্য সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হয়েছিলো। তিনি আরো বলেন, যখন আমরা মহামারির দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছি তখন পরিবারসহ লোকজনকে গৃহহীনতা ও অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দেয়া সরকারের উচ্চতম পর্যায়ে মানবতার প্রতি নগ্নভাবে অসম্মান প্রদর্শন ছাড়া আর কিছু নয়। এসব লোকজনের অনেকের প্রাথমিক আশ্রয় আবেদন প্রত্যখ্যাত হলেও আপীলে তা পাল্টে যেতে দেখা যাচ্ছে, ফ্লাইটসমূহ ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এমন শাস্তিমূলক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এখন তার চরম শোচনীয় পর্যায়ে আছে। হোম অফিসের জনৈক মুখপাত্র বলেন, এসাইলাম সিস্টেমের চাহিদা হ্রাসের লক্ষ্যে এখন ধাপে ধাপে সহায়তা বিচ্ছিন্নকরণ শুরু হয়েছে। এটা একটি সাময়িক ব্যবস্থা। নিরাপদ হওয়ার সাথে সাথে এর সমাপ্তি ঘটবে।
তিনি আরো বলেন, যারা একটি নেতিবাচক আশ্রয় সিদ্ধান্ত পেয়েছেন, তাদের যুক্তরাজ্যে অবস্থানের কোন অধিকার নেই। তাদেরকে ২১ দিনের ক্ষমার মেয়াদ দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তাদের মূল দেশে ফিরে যাওয়ার পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রত্যাশা, এ সময়েও তাদের আবাসন ও সহায়তা পাবেন। যারা স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ করবেন তাদেরকে সহায়তা দেয়া হবে। তবে যারা স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করবেন না, তাদের বহিষ্কারে বল প্রয়োগের পদক্ষেপ নেয়া হবে।