নতুন সতর্কবার্তা সামনে আনল প্রকাশিত এক গবেষণা
করোনার চেয়েও বেশি ভয়ংকর চুক্তিহীন ব্রেক্সিট
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার কিংবা ব্রেক্সিটের অন্তর্বর্তীকাল শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। আর এই ব্রেক্সিট নিয়ে যুক্তরাজ্যের জন্য নতুন সতর্কবার্তা সামনে আনল প্রকাশিত এক গবেষণা। গবেষণায় বলা হচ্ছে, ইইউর সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হলে দারুণ ক্ষতির মুখে পড়বে ব্রিটেনের অর্থনীতি। এমনকি এ ক্ষতি বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত ক্ষতিকেও ছাড়িয়ে যাবে।
থিংক ট্যাংক ইউকে ইন এ চেঞ্জিং ইউরোপ প্রকাশিত গবেষণা বলছে, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আর এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে কভিড-১৯-জনিত ক্ষতির তিন গুণ। থিংক ট্যাংক আরো জানিয়েছে, বর্তমানে চলমান মহামারীর রাজনৈতিক ও অর্থনেতিক প্রভাব নিয়ে প্রচুর আলোচনার কারণে ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি না হওয়ার ক্ষতির বিষয়টি চাপা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্বল্পমেয়াদে ব্রাসেলসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য সম্পর্ক নিশ্চিত করা না গেলে তা বাস্তবে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য দুঃসংবাদে পরিণত হবে, যার নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে ছাড়িয়ে যাবে বতর্মান স্বাস্থ্য সংকটকেও।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের (এলএসই) সঙ্গে থিংক ট্যাংক ইউকে ইন এ চেঞ্জিং ইউরোপ আরো জানিয়েছে, ইউরোপীয় ব্লকে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে যুক্তরাজ্যের যে ক্ষতি হতো, ব্রেক্সিটের কারণে আগামী বছরগুলোয় ক্ষতি তার চেয়ে অনেক বেশি হবে। মারাত্মক প্রভাব পড়বে দেশটির প্রবৃদ্ধিতে। প্রতিবেদনে গবেষকরা লেখেন, কভিড-১৯-এর অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বল্পমেয়াদে ব্রেক্সিটের ক্ষতিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার যে দাবি করা হচ্ছে, তা প্রায় সঠিক। এমনকি সবচেয়ে নৈরাশ্যবাদী পরিস্থিতিও এমন বলছে না যে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ফলে দেশের উৎপাদনের পতন ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের পতনের চেয়ে বেশি হবে। তবে এলএসইর সঙ্গে এ গবেষণায় দেখা গেছে, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ফলে দীর্ঘমেয়াদে ব্রিটেনের মোট অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ কভিড-১৯-এর কারণে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের দেয়া ক্ষতির পূর্বাভাসের দুই থেকে তিন গুণে গিয়ে দাঁড়াবে। এ হিসাবে আগামী ১৫ বছরে ব্রিটেনের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বর্তমানের তুলনায় নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে। অন্যদিকে এ সময়ে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে জিডিপির এ পতন হবে ২ দশমিক ১ শতাংশ। তবে এমন অবস্থায় এ পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে, যখন মহামারীর সার্বিক প্রভাব নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। তাছাড়া ইউরোপে এরই মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে।
কোনো চুক্তি না হলে সবার প্রথমে সংকট দৃশ্যমান হবে ইউরোপীয় সীমান্তগুলোয়। ফলে সীমান্তে পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ সারির পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যপণ্য ও ওষুধের সংকট দেখা দিতে পারে। তাছাড়া আমদানি ও রফতানিকারকদের জন্য নতুন করে শুল্ক আরোপ ও দাপ্তরিক নথিপত্রের বাধ্যবাধকতার কারণে মূল্যবৃদ্ধির সম্মুখীন হবেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়েই। এ অবস্থায় ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৫ অক্টোবর চুক্তি সম্পাদনের তারিখ ঠিক করেছে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনার পরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, যদি কোনো চুক্তির সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তিনি আলোচনা থেকে সরে আসবেন। অথচ এর আগে তিনি একটি দ্রুত ও সহজ চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ইউকে ইন এ চেঞ্জিং ইউরোপের পরিচালক আনন্দ মেনন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলছেন যে চুক্তি না হওয়া খুব একটা মন্দ নয়। কিন্তু আমাদের প্রতিবেদন বলছে, এতে যুক্তরাজ্যের সার্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে; যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশটির অর্থনীতির ওপর। শুধু অর্থনীতিই নয়, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের কারণে রাজনৈতিক সংকটও সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সংকট তো সৃষ্টি হবেই, একই সঙ্গে প্রভাব পড়বে উত্তর আয়ারল্যান্ডের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও।