কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে উঠছে
বরিস জনসনে আস্থা নেই ইইউ নেতাদের
ব্রেক্সিট চুক্তির শর্ত ভেঙে ব্রিটেনের ভাবমূর্তির ক্ষতি করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন। সে কারণে তার উপরে আস্থা রাখতে পারছেন না ইইউ নেতারা। ফলে বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে আইনি রক্ষাকবচের উপর জোর দিচ্ছেন তারা। কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে উঠছে। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিটেনের সঙ্গে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সম্পর্কের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
নভেম্বরের শুরুর মধ্যে বোঝাপড়া চূড়ান্ত না হলে আগামী ১ জানুয়ারি চুক্তি ছাড়াই পাকাপাকিভাবে ইইউ ত্যাগ করবে ব্রিটেন। তাই আলোচনায় সাফল্যের জন্য চাপ বাড়ছে। অন্যদিকে আইন প্রণয়ন করে ব্রেক্সিট চুক্তির শর্ত ভাঙায় ব্রিটেনের উপর ইইউ-র আস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাই ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়ে চুক্তি সম্ভব হলেও ব্রিটেন যে সেই চুক্তিরও শর্ত ভাঙবে না, তা নিশ্চিত করার জন্য আইনি রক্ষাকবচের জন্য চাপ বাড়ছে।
ফাইনান্সিয়াল টাইমস সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও অন্যান্য ইইউ নেতারা ব্রিটেনের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে সেই চুক্তি কার্যকর করার জন্য কড়া নিয়মের উপর জোর দিচ্ছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপর আর আস্থা না থাকায় এই বিষয়টির উপর তারা জোর দিচ্ছেন। আগামী শীর্ষ সম্মেলনে তারা ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে-কে স্পষ্ট জানিয়ে দেবেন যে, প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ও ব্রিটিশ কোম্পানিগুলির মধ্যে ন্যায্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে বোঝাপড়া সম্ভব হলেও তা নিশ্চিত করতে রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ ব্রিটেন শর্ত ভাঙলে ইইউ-র হাতে পালটা পদক্ষেপ নেবার ক্ষমতা থাকবে। ফ্রান্স ও অন্য কিছু দেশ ব্রিটেনের জলসীমায় মাছ ধরার অধিকারের ক্ষেত্রেও কড়া অবস্থান নিচ্ছে। ‘অন্যায্য’ বোঝাপড়ার তুলনায় চুক্তি ছাড়াই সম্পর্কে ইতি টানতে প্রস্তুত ফ্রান্স।
এই অবস্থায় মিশেল বার্নিয়ে কীভাবে ব্রিটেনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন, সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে। কারণ, শেষ পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে কিছু আপোশ সম্ভব না হলে বাণিজ্য চুক্তি অবাস্তব হয়ে পড়বে। ব্রিটেন চুক্তি ভাঙার কারণে ইইউ-র কড়া অবস্থান সেই নমনয়ীতার তেমন সুযোগ রাখছে না। রোববার বরিস জনসন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ মতপার্থক্য দূর করতে অগ্রগতির উপর জোর দেন। তার মতে, চুক্তি সম্ভব হলে দুই পক্ষই লাভবান হবে। তবে সেটা আদৌ সম্ভব না হলে ‘অস্ট্রেলিয়ার আদলে শর্ত’ মেনে নিতেও প্রস্তুত ব্রিটেন। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো বাণিজ্য চুক্তি নেই।
ফ্রান্সের ইউরোপের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ক্লেমঁ বোন রোববার বলেছেন, নভেম্বরের শুরুতেই ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে হবে। শুধু আপোশের খাতিরে ইইউ কোনো চুক্তি মেনে নেবে না। চাপের মুখে কোনো ক্ষতিকর শর্ত মানা হবে না। বরিস জনসন শনিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁকে বলেন যে, তিনি চুক্তির খাতিরে সব রকম পথ খতিয়ে দেখবেন। জনসন নিজে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করলেও সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। ইইউ আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করার আগে ব্রিটেনের কাছ থেকে আরও কিছু ছাড় আদায় করতে চাইছে।