মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মরিয়া দুই প্রার্থী
রেকর্ড ভোটের পুর্বাভাস
আগামী ৩ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন ভোটারদের মন জয় করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এদিকে, দেশটিতে করোনাভাইরাসের তান্ডব সত্ত্বেও রেকর্ড সংখ্যক ভোটারের ভোটদানের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর এক সপ্তাহ বাকি। এই নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন সোমবার থেকে আরও জোরাল প্রচার শুরু করেছেন। এরই মধ্যে ডাকযোগে বিপুল সংখ্যক ভোট পড়লেও বিশেষ করে মনস্থির করে উঠতে পারেননি, এমন ভোটারদের মন জয় করতে জোরালো চেষ্টা করছেন দুই প্রার্থী। ডাকযোগে ভোটের প্রবণতা সার্বিক ভোটদানের ওপর দেখা গেলে গত ১০০ বছরে সবচেয়ে বেশি মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে পূর্বাভাস দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
যে সব রাজ্যে সাফল্যের ওপর নির্বাচনে জয় নির্ভর করবে, সেগুলোকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সোমবার তিনি পেনসিলভেনিয়া রাজ্যে প্রচার চালিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে মিশিগান, উইসকনসিন, নেব্রাস্কা, অ্যারিজোনা ও নেভাদা রাজ্যও সফর করবেন। অন্যদিকে, বাইডেন ডেলাওয়ার রাজ্যে নিজের ঘাঁটি আগলে সেখান থেকেই প্রচারে মনোযোগ দিচ্ছেন। আজ (মঙ্গলবার) অবশ্য তিনি জর্জিয়ায় প্রচার চালাবেন। দক্ষিণের রক্ষণশীল রাজ্যগুলোতে সমর্থন আদায় করতে তিনি বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছেন। জনমত জরিপে দেশজুড়ে এগিয়ে থাকলেও ফ্লোরিডা ও পেনসিলভেনিয়ার মতো ‘সুইং স্টেট’কেও (দোদুল্যমান) তিনি অবহেলা করছেন না। মঙ্গলবার তিনি অরল্যান্ডো শহরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন।
এদিকে, বিশ্বের অন্য অনেক প্রান্তের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও করোনাভাইরাস মহামারি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। প্রায় প্রতিদিনই সংক্রমণের রেকর্ড ভেঙে অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। শনিবার প্রায় ৯০ হাজার মানুষ সংক্রমণের শিকার হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসের কারণে মারা গেছে। দপ্তরের একাধিক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স প্রচার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার রাতে ভাইস প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, পরীক্ষায় পেন্স ও তার স্ত্রীর করোনাভাইরাস নেগেটিভ এসেছে। তবে একইদিন পরীক্ষায় পেন্সের চিফ অব স্টাফ মার্ক শর্টের করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। তারপরও শর্টের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকা ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে হোয়াইট হাউস ফেডারেল আইন অনুযায়ী পেন্সের ‘জরুরি কর্মী’ পদমর্যাদার কথা উলেস্নখ করে তিনি প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে এই পদমর্যাদা দমকল কর্মী বা পুলিশ কর্মকর্তা এবং সামনের সারিতে থাকা চিকিৎসা কর্মীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
পরীক্ষায় পেন্সের আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ সহযোগীর কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে বলে রোববার ‘সিএনএন’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসে চিফ অব স্টাফ মার্ক মেডোস। মেডোস দাবি করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন মহামারি নিয়ন্ত্রণ করবে না। তার বদলে টিকা ও ওষুধের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। তার মতে, একমাত্র ভ্যাকসিন ও থেরাপির মাধ্যমেই করোনাকে পরাজিত করা সম্ভব।
মেডোসের কাছে সঞ্চালক জেক টেপার জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র কেন মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। জবাবে তিনি বলেন, ‘কারণ এটি জ্বরের মতোই একটি সংক্রামক ভাইরাস।’ চিফ অব স্টাফ আরও দাবি করেন, ট্রাম্প প্রশাসন একে নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাত দিন আগেও যখন করোনার প্রকোপ বেড়ে চলেছে, তখনই এমন স্বীকারোক্তি দিলেন ট্রাম্পের এ সহযোগী। যদিও ট্রাম্প ভাইরাস মোকাবিলায় অগ্রগতি দাবি করেছেন।
ট্রাম্প ভাইরাস মোকাবিলায় অগ্রগতির দাবি করলেও ডোমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন তার বিরুদ্ধে করোনার কাছে আত্মসমর্পণের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প শিবির যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের সুরক্ষার মৌলিক দায়িত্বও ত্যাগ করেছে। বাইডেন এ প্রসঙ্গে মেডোস-এর মন্তব্যের উলেস্নখ করেন। তার মতে, ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই হাল ছেড়ে দিয়ে এই বিপদ উপেক্ষা করে এসেছে। তাদের আশা ছিল, করোনাভাইরাস নিজে থেকে চলে যাবে। অথচ বাস্তবে তেমনটা ঘটেনি। ক্ষমতায় এলে বাইডেন দেশের সব মানুষের জন্য বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের টিকার ব্যবস্থার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন।
এদিকে, ট্রাম্প শিবির বাইডেনকে অশীতিপর হিসেবে তুলে ধরে তার শারীরিক দুর্বলতার একটা চিত্র তুলে ধরছে। ৭৭ বছর বয়সি বাইডেন প্রচারের ধকল সহ্য করতে না পেরে গত বৃহস্পতিবারের বিতর্কের আগে পাঁচ দিন বিরতি নিয়েছিলেন বলে ট্রাম্প টিম দাবি করছে।