ইসলাম নিয়ে ম্যাখোঁর বিতর্কিত মন্তব্য

ফরাসি পণ্য বয়কটের হিড়িক, বয়কট বন্ধের অনুরোধ ফ্রান্সের

আসন্ন নির্বাচনে ইসলামবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গদের ভোট বাগে রাখার কৌশল

ইসলাম ও মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আরব অঞ্চলসহ মুসলমাম বিশ্বে ফরাসি পণ্য বয়কটের হিড়িক পড়ে গেছে। অনেক খ্যাতনামা চেইন শপসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিয়েছে ফরাসি পণ্য বিক্রি। করোনাকালে এই বয়কটের সুদূরপ্রসারী প্রভাব আঁচ করতে পেরে আরব দেশগুলোর প্রতি পণ্য বয়কট বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে প্যারিস।

এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুরোধ জানায়, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের পর সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে ফ্রান্সের পণ্য; বিশেষ করে খাদ্যপণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাকও দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি মুসলমানপ্রধান দেশে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বয়কটের এসব আহ্বান ভিত্তিহীন এবং অবিলম্বে এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে সব ধরনের আক্রমণাত্মক মনোভাব, যা একটি উগ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উসকে দিচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে।’ ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ইসলামবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ভোট বাগে রাখতেই এমন বিতর্কিত অবস্থান নিয়েছেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
সম্প্রতি ফ্রান্সের একটি বিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রদর্শন করেন ধর্মবিদ্বেষী এক শিক্ষক। এর জেরে চেচেন বংশোদ্ভূত এক কিশোর গলা কেটে হত্যা করে তাকে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। চালানো হতে থাকে ইসলাম ও মুসলমানবিরোধী প্রচারণা।
হত্যাকান্ডের তদন্তে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছেন, শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি তার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মহানবীর (সা.) কার্টুন দেখানোর পর তা নিয়ে বিতর্কেরও আয়োজন করেন। তারপর থেকেই হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন তিনি। গত শুক্রবার নিজ কর্মস্থল মিডল স্কুলের সামনের সড়কেই হামলার শিকার হন প্যাটি।
ওই ঘটনার পর কথিত ‘ইসলামী বিচ্ছিন্নতাবাদের’ বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রম্নতি ব্যক্ত করেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। তিনি বলেন, ‘এই বিচ্ছিন্নতাবাদ ফ্রান্সের মুসলমান সম্প্রদায়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। ফ্রান্সের সরকারি ভবনে মোহাম্মদকে (সা.) ব্যঙ্গ করে চিত্র প্রদর্শন বন্ধ হবে না।’ এরপর রোববার এক টুইট বার্তায় ম্যাখোঁ বলেন, ‘আমরা কখনোই ইসলামী মৌলবাদীদের কাছে নতি স্বীকার করবো না।’
তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থনের নামে ইসলামবিরোধী ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রদর্শন ও বক্তব্যকে উসকানি দিয়ে বলেন, ‘আমরা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য গ্রহণ ও যুক্তিযুক্ত মতামতকে প্রতিহত করি না।’
এরপর থেকে আরব বিশ্বের দেশগুলোতে ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের হিড়িক পড়ে যায়। অনেক আরব দেশেই ফরাসি পণ্য, বিশেষ করে মেক আপ সামগ্রী ও সুগন্ধী আর বিক্রি করা হচ্ছে না। কুয়েতের বেসরকারি সংস্থা গ্রাহক সমবায় সমিতিগুলো এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ফরাসি পণ্য বয়কট করেছে। দেখা গেছে, দেশটির কয়েকটি দোকান থেকে ফরাসি কোম্পানির পণ্য সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
রোববার আরব বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ সৌদি আরবে হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে ফ্রান্সের ফরাসি বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্যারফুর বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। জর্ডান ও কাতার, সৌদি আরবেও একইভাবে ফরাসি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ভোট বাগে রাখতে ম্যাখোঁর এমন বিতর্কিত মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এক বিবৃতিতে এরদোয়ান বলেছেন, ‘ম্যাখোঁর মানসিক চিকিৎসা করা দরকার।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। পশ্চিম ইউরোপের সংখ্যালঘু সংগঠনও বলেছে, ম্যাখোঁ ‘ইসলামোফোবিয়া’ (ইসলাম ভীতি) বাড়াতে সাহায্য করছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button