সংসদে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাসের দাবি

মহানবী (সা:)-কে অবমাননার প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা

ফ্রান্সে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন প্রদর্শনে সারাবিশ্বে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের বহুদেশ। বাংলাদেশের তৌহিদী জনতা ফুঁসে উঠেছেন। দেশের ইসলামী ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর একের পর এক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন। বাতিল প্রতিরোধ পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া মাদরাসা, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকার গুলশানস্থ ফ্রান্স দূতাবাস ঘেড়াও কর্মসূচি পালন করে। ফ্রান্সের ব্যঙ্গচিত্র কার্টুনের প্রতিবাদে মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা মহানগরী। রাজধানী ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলা ও উপজেলায়ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তৌহিদী জনতা। সবার মুখে এক ছিল একই শ্লোগান ‘ফ্রান্সের পণ্য বর্জন করো/ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ম্যাখোঁর বিচার করতে হবে’।

বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে গুলশানস্থ ফ্রান্স দূতাবাস ঘেড়াও কর্মসূতিতে পথে মিছিলে জনশ্রোতের সৃষ্টি হয়। প্রকম্পিত হয়ে উঠে ঢাকা মহানগর রাজপথ। প্রতিবাদী মিছিল শান্তিনগরে আটকে দেয়া হলেও দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় একই দাবিতে মিছিল হয়েছে।
আজ মঙ্গলবারও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ম্যাখোঁর বিচার এবং দেশটির পণ্য বর্জনের দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঈমানদার মুসল্লিরা বিক্ষোভ করেন। নবী প্রেমিক মুসল্লিরা ফ্রান্সে নবীর ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন প্রকাশের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বে হাজার হাজার মুসল্লি ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইট থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে দূতাবাস ঘেরাও করার লক্ষ্যে বিশাল মিছিল শান্তিনগর বাজারের সামনে পৌঁছলে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়। এসময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারী মুসল্লিদের মাঝে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভ সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই নবী (সা.) ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন প্রকাশের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশের জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি, আগামী শুক্রবার মসজিদের ইমাম খতিবদের প্রতি নবী (সা.) ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে বক্তব্য প্রদান এবং সকল মসজিদ থেকে সাধারণ মুসল্লিদের প্রতিবাদ মিছিল বের করার অনুরোধ জানান। এছাড়া বুধবার বাদ যোহর ইসলামী ঐক্যজোটের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একই দাবিতে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা সমমনা ইসলামী দলসমূহ, সম্মিলিত ইসলামী দলসমুহ এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি বায়তুল মোকাররমে ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ফ্রান্সে নবী (সা.) ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও পূর্ব বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্বের বক্তব্যে দলে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নবী (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন প্রকাশ করায় সারাবিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। গোটা বিশ্বে ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের মাধ্যমে ওদের উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে। ফ্রান্সের কুলাঙ্গার প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত মুসলমানদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ফ্রান্সে নবী (সা.) ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে অচিরেই জাতীয় সংসদ ডেকে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করুন। ফ্রান্সের সাথে সকল প্রকার কূটনৈতিক সর্ম্পক ছিন্ন করতে হবে।
দলের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ূমের পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, দলের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুস আহমাদ, দলের রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা ফজলে বারি মাসউদ, কে এম আতিকুর রহমান, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, মাওলানা নেছার উদ্দিন, জি এম রুহুল আমিন, মুফতি দেলাওয়ার হোসেন সাকী, মাওলানা কামাল উদ্দিন সিরাজী, মাওলানা এ বিএম জাকারিয়া ও মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান।
পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, রাসুল (সা.) কে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন শান্তির দূত হিসেবে। ম্যাখোঁ কুলাঙ্গাররা জানে না মুসলমানরা অন্য ধর্মের কোনো নেতার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ বিদ্রপ করে না। পশ্চিমা দেশের কতিপয় কুলাঙ্গাররা কিছু দিন পর পরই ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে উষ্কানিমূল প্রচারণা চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। পীর সাহেব ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
পীর সাহেব বিক্ষোভ সমাবেশে কতিপয় দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক নিন্দা জানাতে হবে, ফ্রান্সের সাথে বাংলাদেশের সবরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে, ইসলাম ও রাসূলকে (সা.) অবমাননার জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে প্রকাশ্যে বিশ্ব মুসলিমের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, অবিলম্বে ওআইসিতে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনতে হবে, বাংলাদেশে ইসলাম ও মহানবীর (স.) বিরুদ্ধে কটুক্তি বন্ধে কঠোর শাস্তির আইন পাশ করতে হবে, সারাবিশ্বের মুসলমানদের ইসলামবিদ্বেষী ফ্রান্সের পণ্য বর্জন করতে হবে, বিশ্ব মুসলিম নেতা এবং সাধারণ মুসলমানদেরকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রাখতে হবে, যেসমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান ইতোমধ্যে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্য ও নিন্দা জানিয়েছেন এবং ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্রান্স সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে পুলিশ পাহারায় মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে মুসলিম উম্মাহ’র কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। ফ্রান্স সরকার ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া বিশ্বের মুসলমানদের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। নেতৃবৃন্দ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও একজন কুলাঙ্গার শিক্ষা সালাম ও আল্লাহ হাফেজের বিরুদ্ধে উষ্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে মুসলমানদের হ্নদয়ে চরম আঘাত হেনেছে। তারা এ কুলাঙ্গার শিক্ষককে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানান। পরে ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও এর লক্ষ্যে পীর সাহেব চরমোনাইয়ের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শান্তিনগর বাজারের সামনে পৌঁছলে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়। মিছিলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। সেখানে পুলিশ ও মিছিলকারীদের মাঝে কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কি হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button