ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনুন
হেফাজতের সমাবেশে জনসমুদ্র, শান্তিপূর্ণভাবে দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালিত
ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সর্ম্পক ছিন্ন করুন
ফ্রান্সে মহানবী (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন প্রকাশের প্রতিবাদে বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোকে দেশটির সাথে পরিপূর্ণভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহবান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। দেশটিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মহানবী (সা.)এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ফ্রান্সের সকল পণ্য বর্জন করে ঈমানী দায়িত্ব পালনের আহবান জানানো হয়। যারা নবী (সা.) ও কুরআনের সাথে বেয়াদবি করবে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানানো হয় বিক্ষোভ সমাবেশে।
মহানবী (সা.) ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও পূর্ব বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহবান জানান। ফ্রান্স বিরোধী দাবি দাওয়া মেনে নেয়া না হলে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে সরকারের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেয়া হয় আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে মহানবী (সা.) অবমাননার প্রতিবাদে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনুন।
ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার নবীপ্রেমিক মুসল্লি খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আজকের পূর্ব ঘোষিত ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন। ’বিশ্বনবীর অপমান সইবে নারে মুসলমান’ ’ম্যাখোঁর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ ’বিশ্বমুসলিম এক হও লড়াই করো’ ফ্রান্স বিরোধী শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হঠে রাজপথ। নবীপ্রেমিকদের স্বতঃস্ফূর্ত পদচারনায় মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা। সেই সমাবেশ বেলা বাড়ার সাথে সাথে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। হাজার হাজার নেতা-কর্মী বিভিন্ন প্লেকার্ড হাতে নিয়ে অংশ নেয়। এতে রাজধানীর প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগের কবলে পড়েন। ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের সাইনবোর্ড, নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি ভূঁইগড়, পোস্তগোলা, নয়াবাজার, শাহবাগ, গাবতলী, মহাখালী, টংগী এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ১২ টা ৮ মিনিটে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ফরাসি দূতাবাস অভিমুখে লাখো মুসল্লির মিছিল শুরু হয়। একটি ট্রাকে আরোহণ করে মিছিলে নেতৃত্ব দেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ও আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী। মিছিলটি শান্তিনগর এলাকায় পৌঁছলে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়। সেখানে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী মোনাজাতের মাধ্যমে ঘেরাও কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরী আমীর আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জ্বী, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ও আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহফুজে খতমে নবুওয়ত এর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মো. নূরুল ইসলাম জেহাদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচির আহবায়ক মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি ও বাহাদুরপুর পীর সাহেব মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান, বেফাক এর মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, ঘেরাও কর্মসূচির সদস্য সচিব মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক শাইখুল হাদিস মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, হেফাজতে ইসলাম কামরাঙ্গীরচর জোনের সভাপতি ও খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী,বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী মাওলানা শফিক উদ্দিন ও মুফতি মাসউদুল করিম। বিক্ষোভ সমাবেশ পরিচালনায় ছিলেন মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লাম জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, এতোদিন ব্যক্তিগতভাবে নবী (সা.) এর সাথে বেয়াদবি করা হয়েছে। এখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশটি ওয়ালে ওয়ালে মহানবী (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন প্রকাশ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোকে ফ্রান্সের সাথে পরিপূর্ণভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। মহানীর সাথে বেয়াদবির কারণে দেশটি সকল পণ্য বর্জনের মাধ্যমে ঈমানি পরীক্ষা দিতে হবে। আল্লামা বাবুনগরী জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ফ্রান্সের সকল পণ্য বর্জনের জন্য নির্দেশনা জারি করুন। তিনি বলেন, রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। দোকানদার ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নবী (সা.) ইজ্জতের ওপর আঘাত এসেছে তাই ফ্রান্সের সকল পণ্য দোকান থেকে ফেলে দিন। আল্লামা বাবুনগরী বাংলাদেশ সরকারসহ মুসলিম দেশগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, নবী(সা.) ও কুরআনের সাথে যারা বেয়াদবি করবে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন করুন। আল্লামা বাবুনগরী শান্তিপূর্ণ দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করায় সকলকে মোবারকবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী বলেন, অত্যন্ত ব্যাথ্যার সাথে বলছি ফ্রান্স নবী (সা.) সাথে বেয়াদবি করে দুই শত কোটি মুসলমানের হ্নদয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিন্টে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত এ আগুন নেভানো যাবে না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, অনতিবিলম্বে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনুন। ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ করুন। আমাদের দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হলে হেফাজতের আন্দোলন ঈমানী আন্দোলনের রূপ নিবে। আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, মসজিদের শহর ঢাকায় মূর্তি নির্মাণ বন্ধ করুন।