আরো ১৫ হাজার কোটি পাউন্ডের বন্ড কিনবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড
কভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই)। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি আগেই বন্ড ক্রয় কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল। এবার নতুন দফার লকডাউনের প্রভাব প্রশমনে সরকারি বন্ড কেনার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর ঘোষণা দিল তারা। বিওই জানিয়েছে, তারা আরো ১৫ হাজার কোটি পাউন্ডের (১৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) সরকারি বন্ড কিনবে, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
যুক্তরাজ্যে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে নতুন জোয়ার তৈরি হয়েছে। এ জোয়ার থামাতে নতুন করে চার সপ্তাহের লকডাউন আরোপ করেছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রশাসন। আগের দফার লকডাউন ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। নতুন দফার বিধিনিষেধ এ ক্ষত আরো বাড়াবে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা। এ অবস্থায় অর্থনীতিকে বাঁচাতে নতুন করে সহায়ক নীতির ঘোষণা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছিল। বিওই সেই কাজটাই করেছে।
আজ বিওইর মনিটারি পলিসি কমিটির বৈঠকে গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি ও তার টিম সর্বসম্মতিক্রমে সরকারি বন্ড ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৮৭ হাজার ৫০০ কোটি পাউন্ডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে করপোরেট বন্ড কেনার লক্ষ্যমাত্রা আগের ২ হাজার কোটি পাউন্ডেই অপরিবর্তিত থাকছে। সব মিলিয়ে ৮৯ হাজার ৫০০ কোটি পাউন্ডের বন্ড কিনবে বিওই।
বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়তো তাদের সরকারি বন্ড ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা সাকল্যে ১০ হাজার কোটি পাউন্ড বাড়াতে পারে। বাস্তবে ঘোষণা এল ১৫ হাজার কোটি পাউন্ডের। এই বন্ড কেনার কার্যক্রম শুরু হবে আগামী জানুয়ারিতে। চলবে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ।
বিওই তাদের অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে সংশোধন এনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সংকোচনের হার দাঁড়াতে পারে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, তাদের আগের পূর্বাভাসে যা ছিল ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে চতুর্থ প্রান্তিকে ২ শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছে তারা।
২০২২ সালের আগে ব্রিটিশ অর্থনীতি করোনা-পূর্ব সময়ের অবস্থানে ফিরে আসতে পারবে না বলে মনে করছে বিওই। অবশ্য অর্থনীতি বাঁচাতে মহামারীর প্রথম থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি। গত মার্চের পর থেকে চারবার মুদ্রানীতি শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে তারা, যেন অর্থনীতির তারল্য প্রবাহ বাড়ে এবং ঋণব্যয় কমে যায়। তবে বন্ড ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ালেও সর্বশেষ বৈঠকে মূল সুদের হার দশমিক ১ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে বিওই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ শিথিল মুদ্রানীতি সরকারকে তাদের ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আর সংকটকালে কর্মসংস্থান ও ভোক্তাব্যয়কে চাঙ্গা রাখতে হলে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার কম থাকায় সরকার ঋণব্যয়ের দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ নিয়ে এগোতে পারছে।