ফাইজারের করোনা টিকা উদ্ভাবনে নেপথ্যে যে মুসলিম দম্পতি
ফাইজার দাবি করেছে, তাদের তৈরি টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকরী। জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের সঙ্গে এই টিকা তৈরির কাজ করছে ফাইজার। এই টিকা তৈরিতে যারা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন, তারা হলেন তুরস্ক বংশোদ্ভূত উগুর শাহিন ও ওজলেম তুরেসি দম্পতি। জার্মানির মেন্জ-এ বায়োএনটেক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা উগুর ও ওজলেম। ২০০৮-এ অস্ট্রিয়ার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফ হুবেরের সঙ্গে বায়োএনটেক সংস্থা তৈরি করেন তারা। এই দম্পতির তৈরি বায়োএনটেকে এখন কাজ করেন ১৫শ’ কর্মী। ৫৫ বছর বয়সি শাহিনের জন্ম তুরস্কে। বাবা-মা’র সঙ্গে একসময় জার্মানিতে চলে আসেন তিনি।
৫৩ বছর বয়সি টুরেসির জন্ম জার্মানিতে। কিন্তু তাঁর বাবা-মা তুর্কি। হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ইমিউনোলজিস্ট টুরেসি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন৷
জন্মসূত্রে উগুর ও তুরেসি দুজনেই তুর্কি মুসলিম। শৈশব থেকেই মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখতেন উগুর। কোলঙের একটি হাসপাতালে কাজ করার সময় তুরেসির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার। দুজনেরই স্বপ্ন ছিল ক্যান্সার চিকিত্সা নিয়ে গবেষণা করা। ক্যান্সারের চিকিত্সায় ইমিউনোথেরাপি নিয়ে তাদের সংস্থা গবেষণা এখনও চালাচ্ছে।
সিএনএন এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিজ্ঞানী উগুর শাহিন ও তুরেসিকে বিশ্ব দীর্ঘদিন মনে রাখবে। সংক্রামক রোগ ও টিউমারের চিকিৎসাক্ষেত্রে জীবন উৎসর্গ করেছেন এ জুটি। জীবনের দীর্ঘ সময় ক্যান্সার চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করেছেন দুজন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে এ দুই বিজ্ঞানীর পরিবর্তিত জেনেটিক কোডের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উদ্ভাবন মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। বিশ্বের প্রথম কার্যকর করোনার টিকা হিসেবে যে ফাইজারের টিকাকে দাবি করা হচ্ছে, তার পেছনে রয়েছেন এ দুই মুসলিম বিজ্ঞানী।
২০০৮ সালে জার্মানির মেইঞ্জ শহরে শাহিন ও তুরেসি জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেন। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার করোনার টিকা নিয়ে সুখবর দিয়েছে। নতুন টিকা দিয়ে কোভিড-১৯ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষার দাবি করেছে উৎপাদনকারী দুটি প্রতিষ্ঠান।
করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকেই ফাইজার ও বায়োএনটেক নামের দুটি প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির চেষ্টা করে আসছিল। এবার প্রতিষ্ঠান দুটি জানিয়েছে, তাদের তৈরি টিকা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর।
বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর শাহিন জানিয়েছেন, এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে৷ যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান ও তিনি জানিয়েছেন, টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে৷
যাদের আগে কখনও করোনা সংক্রমণ হয়নি, এমন মানুষের ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে যে টিকা দেয়ার পর শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলেও তাদের কোভিড-১৯ হয়নি৷ জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের এ ট্রায়ালে ৪৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন৷ মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডিএর অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দু’টি৷
উল্লেখ্য, ফাইজার ও বায়োএনটেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকা সরবরাহে এরই মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থের চুক্তি সই করেছে৷ চুক্তি সই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপানের সঙ্গেও৷ ২০২০ সালেই প্রতিষ্ঠান দু’টি পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করবে। ২০২১ সালে আরো ১৩০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিজার৷