পাঁচশ’ টাকা আর মোবাইল ফোনের বিনিময়ে রায় ফাঁস !

মাত্র পাঁচশ’ টাকা ও চীনের তৈরি সিমম্ফনি মোবাইল ফোনের বিনিময়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায়ের খসড়া ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেছেন সরকারপক্ষের আইনজীবীরা। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী নয়ন আলী আদালতে এমন জবানবন্দি দিয়েছে বলে দাবি করেছেন সরকারি আইনজীবীরা।
এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অস্থায়ী কর্মচারী নয়ন আলীকে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম নিজ হাতে সিমম্ফনি এক্সপোরার মোবাইল ফোন দিয়েছিলেন।
আট দিন রিমান্ডের পাঁচ দিন শেষে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মঈনুল ইসলাম ভুইয়ার কাছে তিনি ওই জবানবন্দি দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ইন্সপেক্টর মোহাম্মাদ শাহজাহান স্বীকারোক্তি গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করেন। গত ৫ অক্টোবর এ আসামিসহ ট্রাইব্যুনালের আরেক কর্মচারী ফারুক আহমেদকে আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
নতুন বার্তা ডটকম সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, জবানবন্দিতে নয়ন জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ২০ এপ্রিল তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে যোগদান করেন।
তার কাজ ছিল আলমারি থেকে মামলার নথিপত্র এজলাসে নিয়ে যাওয়া এবং এনে রাখা। বেঞ্চ অফিসার গৌরিচন্দ্রের নির্দেশে তিনি ওই কাজগুলো করতেন।
একই ধরনের কাজ রাসেল ও রশিদ নামে আরো দুজন করতেন। কিন্তু তাদের মধ্যে নয়ন কম্পিউটার চালাতে পারতেন। এটা বেঞ্চ অফিসার গৌরিচন্দ্রসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সবাই জানতেন। কম্পিউটার জানার সুবাদে ট্রাইব্যুনালে ছোটখাটো লেখালেখির কাজ বেঞ্চ অফিসার এবং পিও’র কম্পিউটারে বসে তিনি টাইপ করতেন।
জবানবন্দিতে নয়ন আরও জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি দেশের বাড়িতে যান। বাড়িতে যাওয়ার তিন/চার দিন আগে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী ফারুক আহমেদ তাকে ডেকে বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার আদেশের তারিখগুলো তাকে এনে দিতে হবে। এরপর নয়ন ওইদিন কম্পিউটার থেকে একশ’টি আদেশ ও সাকা চৌধুরী নামের ফোলডার বাছাই করে রাখেন। তার দুই দিন পর ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের জুনিয়র মেহেদী হাসান এবং ফারুক তাকে খাবার রুমে ডেকে নিয়ে একটি পেনড্রাইভ দিলে তিনি আদেশগুলো ও সাকা চৌধুরী নামের ফোলডার পেনড্রাইভে করে এনে দেন।
এরপর একদিন ব্যারিস্টার ফখরুলের কাকরাইলের চেম্বারে গেলে ব্যারিস্টার ফখরুল তাকে ৫০০ টাকা দেন এবং তারপর একদিন তাকে একটা সিমম্ফনি এক্সপোরার মোবাইল ফোন দিয়ে বলেন, ওই সিমে এই মোবাইলে শুধু মেহেদীর সঙ্গে কথা বলবা। এর নম্বর ০১৭৮৬৯৮৯০৯৮। আর মেহেদীর নম্বর ০১৭৩২১০৭৮০১। এরপর চার-পাঁচ দিন ধরে যা টাইপ হতো তা তিনি পেনড্রাইভে করে মেহেদীকে দেন। সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এভাবে তিনি ফাইল সরবরাহ করেছেন।
এরপর ১ অক্টোবর রায়ের দিন বেঞ্চ অফিসারের মুখে শুনতে পান রায় হওয়ার আগেই রায় অনলাইনে প্রকাশ হয়ে গেছে। মেহেদীকে ফোন করে জানালে তিনি নয়নকে ব্যারিস্টার ফখরুলের চেম্বারে যেতে বলেন। চেম্বারে গেলে মেহেদী জানান, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ম্যানেজার ও তার পরিবারের লোকজন ওই কপি নিয়ে গেছে। এরপর বেঞ্চ অফিসার অফিসে ডাকলে তিনি ঘটনা বলে দেন।
গত ৪ অক্টোবর মধ্যরাতে নয়ন আলী ও ফারুক আহমেদকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। নয়ন আলী ওই ট্রাইব্যুনালের মাস্টাররোলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং ফারুক দুই নং ট্রাইব্যুনালের অফিস সহকারী।
উল্লেখ্য, ট্রাইব্যুনালে ঘোষণার আগেই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁস নিয়ে তোলপাড় চলছে। ফাঁসকারী ওয়েবসাইটটি জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার থেকে রায় ফাঁস হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায় কেন আইন মন্ত্রণালয়ে গেল তা নিয়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button