২৬ লাখে পৌঁছবে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা!
ব্রিটেনে ‘অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা’ সবে শুরু
যুক্তরাজ্যে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ ২৬ লাখে উন্নীত হবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ব্যয় পর্যালোচনা প্রতিবেদনের আলোকে অর্থমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট ‘অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা’ সবে শুরু হয়েছে। এ বছর ঋণের পরিমাণ ৩৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এটি আমাদের যুদ্ধবিহীন শান্তিপূর্ণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ১৬ দশমিক ২ লাখ। এটি গত বছরের চেয়ে তিন লাখেরও বেশি। নভেল করোনাভাইরাস মহামারী থেকে মুক্তি পেতে ব্রিটেন সরকার ২৮ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে বলেও জানান সুনাক।
করোনা মহামারীতে সরকারের আয় হ্রাস পাওয়ায় ব্যয় কমানোরও খাত খুঁজছে ব্রিটিশ সরকার। হাউজ অব কমন্সে সুনাক বলেন, বেশির ভাগ সরকারি খাতের কর্মীদের বেতন কমানো হবে। কেবল সর্বনিম্ন বেতন পাওয়া কর্মীদের পাশাপাশি নার্স, চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের অন্যান্য কর্মীর বেতন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া জাতীয় আয়ের অনুপাত হিসেবে বিদেশী সহায়তা ব্যয় ২০২১-২২ অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হবে। যদিও এটি বর্তমান আইনে নির্ধারিত শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কম।
সব শেষে ২০১২ সালের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের বেকারত্বের পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৭ সাল এবং ১৯৯৩ সালের শুরুর দিকে কয়েক মাসের জন্য সংখ্যাটি ৩০ লাখ ছাড়িয়েছিল। সুনাক এমপিদের এ বছর অর্থনীতিটি ১১ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুুচিত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন। গত ৩০০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে দেশটির উৎপাদনে এটি সবচেয়ে বড় পতন। যদিও পরের বছর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী।
সুনাক বলেন, প্রবৃদ্ধি ফিরে আসার পরেও আমাদের অর্থনৈতিক ফলাফল ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের আগে প্রাক-কভিড পর্যায়ে ফিরে আসবে বলে মনে হয় না। এছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষতি স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মহামারীর সময়ে সরকারের ব্যয় বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও আয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। চলতি বছর যুক্তরাজ্য ৩৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নেবে বলে আশা করছে। এটি পরের বছর ১৬ হাজার ৪০০ কোটি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে নামিয়ে নিয়ে আসার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আগামী তিন বছরের জন্য পরিকল্পনা নির্ধারণ করবেন বলে সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু মহামারীজনিত অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ পরিকল্পনা এক বছরে পরিণত হয়েছে।
লেবার পার্টির পক্ষে ছায়া চ্যান্সেলর অ্যানেলিজ ডডস বলেন, বিশ্বের সেরা স্থান ও বৃদ্ধ বয়সে সবচেয়ে ভালো জায়গা হিসেবে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য শিগগিরই একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যয় পর্যালোচনা প্রয়োজন। তিনি সুনাকের বক্তব্যে বেক্সিটের বিষয়টি উল্লেখ না করার জন্য সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে এখনো কোনো বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। চ্যান্সেলর কি সত্যিই মনে করেন, তার সরকার প্রস্তুত এবং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যবসাগুলোকে সহায়তা করার জন্য তিনি যথেষ্ট কাজ করছেন?
বাজেট প্রণয়ন অফিস জানিয়েছে, ইইউর সঙ্গে যদি কোনো চুক্তি না হয় এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধি অনুযায়ী যুক্তরাজ্য ও ইইউকে শুল্কসহ বাণিজ্য করতে হয়, তাহলে এটি ব্রিটেনের প্রকৃত জিডিপিকে ২ শতাংশ হ্রাস করতে পারে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের বিভিন্ন অস্থায়ী বাধা এবং এটির প্রভাবের অর্থনৈতিক ধাক্কা বছরের পর বছর ধরে অব্যাহত থাকবে।
তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আলোচনার ফল যেটাই হোক না কেন, যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সরকার আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী নভেল করোনাভাইরাসের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। এটিই এখন মূল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জনগণের চাকরির ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
🇬🇧 We’re going to deliver 𝐭𝐡𝐞 𝐡𝐢𝐠𝐡𝐞𝐬𝐭 𝐬𝐮𝐬𝐭𝐚𝐢𝐧𝐞𝐝 𝐥𝐞𝐯𝐞𝐥 𝐨𝐟 𝐩𝐮𝐛𝐥𝐢𝐜 𝐢𝐧𝐯𝐞𝐬𝐭𝐦𝐞𝐧𝐭 𝐢𝐧 𝐦𝐨𝐫𝐞 𝐭𝐡𝐚𝐧 𝟒𝟎 𝐲𝐞𝐚𝐫𝐬 🇬🇧
💬 @RishiSunak explains 👇 pic.twitter.com/gp44tvVK1P
— Conservatives (@Conservatives) November 25, 2020