‘ক্যাফে নিরো’ চেইন ব্যবসা কিনে নিচ্ছেন মুসলিম বিলিয়নিয়র
ব্রিটিশ মুসলিম বিলিয়নার ভ্রাতৃদ্বয় মহসিন ও জুবের ঈসা ব্যবসায় ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া ‘ক্যাফে নিরো’নামক কফিশপ চেইন কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। ক্যাফে নিরো ব্রিটেনের সর্ববৃহৎ কফিশপ চেইন। এর প্রতিষ্ঠাতা ও নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ারহোল্ডার গেরিফোর্ড।
মহসিন ও জুবের ঈসা ল্যাংকাশায়ার ভিত্তিক ইজি গ্রুপের কর্ণধার। তারা শ্রম ও মেধার বলে এই ব্রিটিশ রিটেইলিং গ্রুপকে দেশের বৃহত্তম প্রাইভেট কোম্পানীসমূহে পরিণত করেছেন। তারা ল্যান্ডলর্ডদের নিকট রেন্ট বিল কর্তনের অনুমোদন চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইজি প্রস্তাবের অধীনে ‘ক্যাফে নিরো’র ল্যান্ডলর্ডদের তাদের নিকট পাওনা বকেয়া বিলের পুরো অর্থ প্রদান করতে হবে। কোভিড-১৯ সংকটের দরুণ ভাড়ার এই অর্থ অনাদায়ী থেকে গেছে।
ঘনিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, ক্যাফে নিরো ইজি গ্রুপের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে কি-না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ক্যাফে নিরো’র স্টোর মালিকেরা চেইনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়নের ব্যাপারে কোম্পানী ভলান্টারি অ্যারেন্জমেন্ট (সিভিএ) প্রস্তাবের ওপর আগামী সোমবার ভোটগ্রহণের পক্ষপাতী। তবে কোম্পানীর অভ্যন্তরীণ লোকজনের মতে, ইজি’র প্রস্তাব এসব ভোটাভুটির বিষয়কে ভাসিয়ে নেবে।
ব্যবসা ক্ষেত্রে ঈসা ভাতৃদ্বয়ের সুনাম তাদের এই প্রস্তাবের ওপর বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। কারণ, তারা এমন একটি গ্রুপ গড়ে তুলেছেন, যাতে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া ৬ হাজারের কর্মস্থলে ৪০ হাজারেরও বেশি লোক কর্মে নিয়োজিত।
উল্লেখ্য, ব্ল্যাকবার্ন-এর মডেস্ট টাউন থেকে উৎসারিত অর্থের মাঝে বেড়ে ওঠেননি এই ভ্রাতৃদ্বয়। এই স্ব-সৃষ্ট বিলিয়নারদের একটি সাধারণ পরিচিতি রয়েছে। ১৯৯৬ সালে তারা একটি পেট্রোল স্টেশন ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ২০০১ সালে তারা নিজেদের ‘ইউরো গ্যারেজেস’ গঠন করেন। এখন ইজি গ্রুপের ১০টি দেশজুড়ে ৬ হাজার সাইট বা কর্মস্থল রয়েছে এবং তাদের কর্মচারীর সংখ্যা ৪৪ হাজার।
২০১২ সালে, তারা ফুটবল টিম ‘ইউরো গ্যারেজেস এফসি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭ সালে ৭৭ লিটল শেফ রোড সাইড রেস্টুরেন্ট ক্রয় করেন এবং সম্প্রতি তারা ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডের ইজি হেডকোয়ার্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের আগমন সপ্তম শতাব্দী থেকে। হয় সাহাবা কিংবা তাবিই’ন হিসেবে তাদের প্রথম আগমন ঘটে। এমনকি জনৈক ব্রিটিশ রাজাও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাত্র ১০০ বছর পর।
ঈসা ভ্রাতৃদ্বয়ের পিতা এখনো এই এলাকায় বসবাস করছেন। যেখানে তারা বেড়ে উঠেছেন কারণ তারা স্থানীয় মসজিদের কাছে থাকতে চান। ভ্রাতৃদ্বয় এখন এর কিছু দূরে তাদের পরিবারের সকল সদস্যের জন্য পাঁচটি সুপার ম্যানশন নির্মাণ করেছেন। তাই এর অর্থ হতে পারে, তাদের পিতা-মাতার জন্য বাইরে যাচ্ছেন।
জুবের ঈসা বলেন, আমরা (ইজি) শূণ্য থেকেই বেড়ে ওঠেছি, আমরা টয়লেট পরিষ্কার করা থেকে সবকিছুই করে আসছি। সব কিছু করতে হচ্ছে আমাদের। তারা যে এলাকায় বেড়ে ওঠেছেন, সেই এলাকার জনৈক ব্যক্তিকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তারা ভাল মানুষ, অত্যন্ত চমৎকার পরিবার।
জুবের মাঝে মাঝে এখানে আসেন তার চুল কাটাতে। তারা ভালো লোক, যারা অত্যন্ত পরিশ্রমী। ঈসা ভাইয়েরা ইতোমধ্যে তাদের পেট্রোল ফোরকোর্ট ব্যবসার মাধ্যমে আসদা’র সাথে ব্যবসা করছেন।
ভ্রাতৃদ্বয়ের মন্তব্য হচ্ছে, আমরা বিশ্বাস করি যে, ইজি’র সাথে আমাদের অভিজ্ঞতা, এর পাশাপাশি কনভিনিয়েন্স ও ব্রান্ড পার্টনারশীপ সংক্রান্ত আমাদের অভিজ্ঞতা এবং টিডিআর। ক্যাপিটাল-এর সাথে আমাদের সকল পার্টনারশীপ ঐ বৃদ্ধির কৌশলকে ত্বরান্বিত ও বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করতে পারে।
ইন্ডাস্ট্রি নেতৃবৃন্দ বলেন যে, ঈসা ভ্রাতৃদ্বয় মৃদুভাষী, সাধারণ প্রকৃতির ও সদাচারী। পেট্রোল রিটেইলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (পিআরএ)-এর চেয়ারম্যান ব্রায়ান ম্যাডডারসন বলেন, ভ্রাতৃদ্বয় উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব। তারা তাদের পেট্রোল স্টেশন ব্যবসায় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দারুণ গতি প্রদর্শন করেছেন।