দুই পক্ষই নিজস্ব অবস্থানে অটল
রোববারের মধ্যে ব্রেক্সিট নিয়ে চূড়ান্ত বোঝাপড়া
ব্রেক্সিট নিয়ে রোববারের মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি অথবা চুক্তিহীন ব্রেক্সিট যাই হোক না কেন, দুই পক্ষই নিজস্ব অবস্থানে অটল রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে বোঝাপড়া এখনো অধরা রয়ে গেছে। বুধবার সন্ধ্যায় বরিস জনসন ও উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের নৈশভোজেও মতপার্থক্য কাটানো সম্ভব হয় নি। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তেও আশা ছাড়তে প্রস্তুত নয় দুই পক্ষ। তাই রোববার পর্যন্ত আলোচনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন দুই নেতা। এই সময়কালের মধ্যে হয় বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে বোঝাপড়া হবে, অথবা ১ জানুয়ারি চুক্তি ছাড়াই পাকাপাকিভাবে ইইউ ত্যাগ করবে ব্রিটেন।
বুধবারের ‘খোলাখুলি’ আলোচনায় কোনো সমাধানসূত্রের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রকাশ্যে দুই পক্ষই যে যার অবস্থানে অটল রয়েছে। ফন ডেয়ার লাইয়েন সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। জনসন চুক্তির জন্য চেষ্টায় কোনো ত্রুটি না রাখার উপর জোর দেন। তবে একাধিক ইইউ নেতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যে ইইউ ত্যাগ করার পরেও সদস্য থাকার সুবিধা পেতে হলে ব্রিটেনকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে।
বুধবার সকালে বরিস জনসন বলেছিলেন, যে কোনো প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ইইউ-র চাপে ব্রিটেনের সার্বভৌমত্ব ছেড়ে দেয়া সম্ভব নয়। একমাত্র ইইউ সেই দাবি ত্যাগ করলে ভালো চুক্তি হওয়া সম্ভব। একই দিনে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষে ভাষণে তিনি বলেন, ব্রিটেনের স্বার্থে ইইউ-র অভ্যন্তরীণ বাজারের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে কোনো ঝুঁকি নেয়া হবে না। অর্থাৎ ৪৫ কোটি ক্রেতা ও গ্রাহকের এই বাজারের নাগাল পেতে হলে ইইউ-র শ্রম, সামাজিক ও পরিবেশগত মানদণ্ড মেনে চলতে হবে, বলেন ম্যার্কেল। তবে তিনিও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আশা ত্যাগ করেন নি।
এমন অনিশ্চয়তার ফলে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ব্রাসেলসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে ব্রেক্সিট নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফন ডেয়ার লাইয়েন ইইউ নেতাদের বরিস জনসনের সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কে জানাবেন। রবিবারের মধ্যে ঐকমত্য সম্ভব হলে ইইউ-র বিভিন্ন পর্যায়ে সেই চুক্তি অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিশেষ করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট চুক্তির খসড়া ভালো করে খতিয়ে দেখে তবেই বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে।
ইইউ ত্যাগ করার সুবিধা-অসুবিধা এখন থেকেই টের পেতে শুরু করেছে ব্রিটেন। বুধবার সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ব্রিটেন। ইইউ-সিঙ্গাপুর বাণিজ্য চুক্তি নকল করেই দুই পক্ষ ঐকমত্যে এসেছে। অন্যদিকে বিমান চলাচল শিল্পের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-র মধ্যে যে বিরোধ চলছে, তার আওতায় দুই পক্ষ পরস্পরের উপর শাস্তিমূলক শুল্ক চাপাচ্ছে। ইইউ ত্যাগ করার পর ব্রিটেন সেই অধিকার হারাবে বলে ওয়াশিংটন সতর্ক করে দিয়েছে।