নিজাম উদ্দীন সালেহ’র স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘অতীত দিনের সিলেট’

বায়েজিদ মাহমুদ ফয়সল: নিজাম উদ্দীন সালেহ’র রয়েছে বহুমাত্রিক পরিচিতি। তিনি একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, অনুবাদক, গবেষক ও কবি। প্রখর স্মৃতিশক্তি ও রুচিশীল মানসের অধিকারী তিনি। খ্যাতির জন্য তিনি কখনও লিখেননি। সাংবাদিকতা পেশার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হলেও একজন লেখক ও গবেষক পরিচয়ে তিনি উদ্ভাসিত। আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা ও শেকড়সন্ধানী গবেষণা তার মৌলিক কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত। ছড়া, কবিতা ও প্রবন্ধে তিনি সমান সিদ্ধহস্ত। মৌলিক সৃষ্টিকর্মের পাশাপাশি তার সাহিত্য ভাণ্ডারে রয়েছে অনেক উজ্জ্বল অনুবাদকর্ম। অগ্রসর চিন্তা ও আদর্শিক চেতনায় তাঁর লেখা বিরল ঔজ্জ্বল্যে স্বতন্ত্র। সরলসভ্য জীবন ও বাগ্মী স্নিগ্ধতা তাকে সালংকার চরিত্রবৈশিষ্ট্যে শোভিত করেছে। একজন শেকড় ও ঐতিহ্যসন্ধানী লেখক হিসেবে স্বজন সুজন ও সুধীজনের কাছে তিনি স্বনামে পরিচিতি।
নিজাম উদ্দীন সালেহ’র জন্ম ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ নভেম্বর সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার রাজাপুর গ্রামের জায়গীরদার বাড়িতে। পৈতৃক নিবাস ওসমানী নগর থানার তাহিরপুর গ্রাম। তাঁর পিতার নাম মরহুম মৌলবী আবদুল জলিল ও মাতা মরহুমা আফিজুন্নেসা জায়গীরদার।
তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় সিলেট শহরের সৈয়দ হাতিম আলী জুনিয়র হাইস্কুলে। পরে তিনি সিলেট এইডেড হাইস্কুলে ভর্তি হন। তিনি সিলেট এমসি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

গত অর্ধ শতাব্দীব্যাপী সিলেট ছোট্ট মফস্বল শহর থেকে বিবর্তিত হয়ে বিভাগীয় নগরী হয়ে ওঠার দীর্ঘ ইতিহাস যে কারোর বিস্ময় উদ্রেক করতে পারে। নতুন প্রজন্ম বিস্মিত নয় রীতিমত হতবাক হয়ে পড়বে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে কেমন ছিলো তাদের প্রিয় শহর, তা জানতে পেরে। এই ইতিহাস ও ঐতিহ্যভিত্তিক স্মৃতিচারণধর্মী গ্রন্থে সিলেট শহরে ইরানী চশমাওয়ালীদের চশমা ও কাবুলীওয়ালার মস্কটি হালুয়া বিক্রি, বড়শী দিয়ে মাছ ধরার মতো পাখি শিকার, ঘোড়া গাড়িতে দুধ বিক্রয়, ১ আনার সিঙ্গেল চা, ২ আনা দামের এক কাপ চা, ৩ মাইলের রিকশা ভাড়া ৪ আনা, পর্দাঘেরা রিকশায় মহিলা যাত্রীদের যাতায়াত, হ্যান্ডেল টেনে বেবী ট্যাক্সি ও অন্যান্য গাড়ি চালানো, সিনেমা হলে উর্দু সিনেমা, মর্নিং শো’তে ইংরেজি মুভি, টিলাগড়ের সাবাল পীর ও পাঁচটেকী ডাক্তারের কাহিনী, বিহারী ও জুনাগড়িদের ব্যবসা বানিজ্য, ১২ আনায় বিরিয়ানী, পাহাড়ি বাঘের উৎপাত, টিয়া পাখি দিয়ে ভাগ্য গণনা, বানরের বাঁদরামি, ৫ শ’টাকায় এক কিয়ার জমি ক্রয়, স্থানীয় ও বহিরাগত দ্ব›দ্ব, জমিদারদের প্রভাব-প্রতিপত্তি, বাইসাইকেল ও মোটর সাইকেলের সংখ্যা, মানুষের মৃত্তিকা ভক্ষণ, মিষ্টির মূল্য ৪ আনা, ছাতার দাম ১০ টাকা, শার্টের দাম দেড় টাকা, প্যান্ট ৩ টাকা, ৫০০ টাকার খুনিয়া নোট, নাগরী স্যার ও উর্দু স্যারের কাহিনী, আট আনার ফুটবল, আইপি ইসলামের কাÐ, স্কুলে বামন সহপাঠী, ১২ আনার যমুনা শাড়ি ইত্যাদি অসংখ্য বিষয় বিধৃত হয়েছে সাংবাদিক ও কবি নিজাম উদ্দীন সালেহ এর স্বলিখিত ২৩১ পৃষ্ঠার স্মৃতিচারণধর্মী এই গ্রন্থে।
পঞ্চাশ বছর আগের সিলেট শহর এবং সেই ষাটের দশক থেকে বিগত অর্ধ-শতাব্দির খুঁটিনাটি ঘটনাবলী ও অভিজ্ঞতার এক ঐতিহাসিক দলিল ও সামাজিক বিশ্লেষণ ‘অতীত দিনের সিলেট’। গ্রন্থের লেখক সিলেট নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অতীত দিনের টুকরো টুকরো স্মৃতি অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। গ্রন্থটি নতুন প্রজন্মকে সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button