করোনার নতুন ধরন ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’
ব্রিটেনে করোনার নতুন যে ধরন শনাক্ত হয়েছে তা ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক। একইসঙ্গে সবাইকে নতুন কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, লন্ডনসহ যেসব জায়গায় চার-স্তরের বিধিনিষেধ জারি রয়েছে তা অমান্য করা “পুরোপুরি দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ হবে”।
কিছু সময়ের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড এবং লন্ডনে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ থাকবে জানিয়ে রবিবার হ্যানকক বলেন, দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকা করোনার নতুন ‘স্ট্রেইনের (ধরনের)’ কারণে সরকারকে বড়দিনে বিধিনিষেধ শিথিলের পরিকল্পনা বাদ দিতে হয়েছে।
গত শনিবার যুক্তরাজ্য করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবর জানায়। করোনার নতুন রূপটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ’ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যুক্তরাজ্যও সেখানে পাওয়া ভাইরাসের নতুন ধরনটি নিয়ে তাদের গবেষণা তথ্য ডব্লিউএইচওকে জানাচ্ছে।
বিবিসির স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রতিনিধি জেমস গেলাগহের এক বিশ্লেষণে জানা যায়, করোনা নতুন যে ধরন শনাক্ত হয়েছে সেটি মূল ভাইরাসের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি দ্রুত ছড়ায়। যদিও ভাইরাসের নতুন ‘স্ট্রেইন’ দ্রুত ছড়ালেও সেটি বেশি প্রাণঘাতী নয় বলেই এখনও বিশ্বাস করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
তিনি আরও বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে করোনার নতুন এই স্ট্রেইনটি শনাক্ত হয়। নভেম্বর মাসে লন্ডনের এক–চতুর্থাংশ বাসিন্দা নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে এসে সংক্রমিতের এই সংখ্যা বেড়ে দুই-তৃতীয়াংশ হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়াতেও করোনার নতুন এই ধরনে সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে।
যুক্তরাজ্যে করোনা যেভাবে রূপ পরিবর্তন করেছে ঠিক একইভাবে নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়ায় ভাইরাসটি রূপ বদল করেছে বলে বিবিসি’কে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। কোভিড-১৯ এর টিকার বেলায় নতুন এই ধরনটির ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে কিনা তার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
ভাইরাসের নতুন ওই ধরন ছড়িয়ে পড়া আটকাতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনসহ দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডের বড় অংশজুড়ে এখন নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। নানা দেশও যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনার নতুন ‘স্ট্রেইন’ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ডব্লিউএইচও-র এপিডেমিওলজিস্ট মারিয়া ফন কেরখোভ বলেন, ‘‘মহামারির শুরু থেকে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তনের দিকে নজর রাখছে।”
ডব্লিউএইচও জানায়, ‘‘আমরা নতুন ধরনের ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার পর সেটার বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সেটি সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র এবং সাধারণ মানুষকে জানাব।”
নতুন ভাইরাস সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ হতে পারে। আবার একদিক দিয়ে দেখতে গেলে, এখন আমাদের হাতে সত্যিই আশাবাদী হওয়ার মত কিছু জিনিসও আছে। আমাদের হাতে এখন টিকা আছে এবং আশা করি সেটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে।”
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, করোনার নতুন ধরন দ্রুত অন্য ধরনকে প্রভাবিত করছে। এ কারণে ভাইরাসটির নতুন ধরন সহজ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে এ বিষয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিয়ন্ত্রণ করা গেলে নতুন ধরনটি সাধারণ হয়ে উঠতে পারে।
এই নতুন ধরটি উচ্চমাত্রায় রূপান্তরিত। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি সক্রিয় হতে পারে। করোনার নতুন এই ধরন মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে প্রমাণ নেই। উদ্ভাবনকারী টিকা ভাইরাসের নতুন এই ধরনের বিরুদ্ধেও কার্যকর। তবে ভাইরাসটি যদি আবার পরিবর্তিত হয় এবং টিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, তাহলে সেটি উদ্বেগের বিষয় হবে।