বিশ্ব নেতাদের নিন্দা
ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলা, নিহত ৪
২০৬ বছরে এমন হামলা দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেস ভবনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এখন পর্যন্ত গুলিতে এক নারীসহ ৪ জন নিহত এবং কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিগত ২০৬ বছরেও এমন হামলার ঘটনা ঘটেনি। এর আগে ১৮১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে এমন হামলা হয়েছিল।
‘ওয়ার অব ১৮১২’ নামে পরিচিতি যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধুদের সঙ্গে ব্রিটিশ বাহিনীর ওই যুদ্ধ শুরু হয় ১৮১২ সালের জুনে; শেষ হয় ১৮১৫ সালে। ওই যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বাহিনী হামলা করেছিল। ইউএস ক্যাপিটল হিস্ট্রি সোসাইটির বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং রাজধানী ওয়াশিংটনে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর, এ ঘটনাকে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে দুঃখজনক বলেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা যখন গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন, সেই সময় স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটলে ঢুকে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা কংগ্রেস ভবন কার্যত দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে।
এদিকে ক্যাপিটল-এ ট্রাম্প সমর্থকদের ঢুকে পড়া, ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। এ ঘটনায় বিস্মিত ও স্তব্ধ হওয়ার প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্বের রাজনৈতিক নেতারা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘটনাকে “লজ্জাজনক দৃশ্য” বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে “শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল ক্ষমতা হস্তান্তরের” আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, “ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের উচিত শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভোটারদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া এবং গণতন্ত্রের পদদলন না করা।”
এক বিবৃতিতে সাবেক যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ বলেছেন, “এটা পুরোপুরি অসুস্থ এবং হৃদয়বিদারক দৃশ্য। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল কোন দেশে এ ধরণের ঘটনার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলকে বিতর্কিত করা হয়- আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে এর কোন স্থান নেই।”
এক বিবৃতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ইতিহাস সঠিকভাবেই ক্যাপিটলের উপর এই আক্রমণকে মনে রাখবে, আর সেটি হচ্ছে “এই মুহূর্তটি প্রচণ্ড অসম্মান এবং এই জাতির জন্য লজ্জাজনক।”
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, “গণতন্ত্রের উপর এই আঘাতের ঘটনায়” “কানাডিয়ানরা প্রচন্ড বিরক্ত”।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্ন্দান্দেজ জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং সহিংসতার ঘটনার প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।
একইভাবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দোকে সহিংসতাকে প্রত্যাহার করে কংগ্রেসের সদস্যদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনেরা “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের” নিন্দা জানিয়েছেন।
সহিংসতার পরও সেনেটে অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে আজকের দিনটি একটি কালো দিন হিসেবে উল্লেখ থাকবে।”