মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান
সুচিকে ‘প্রতিদান’ দিল সেনাবাহিনী!
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী নৃশংসতা, নারকীয়তা আর তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। নিজের সারাজীবনের অর্জন বিসর্জন দিয়ে সেই সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন গণতন্ত্রের প্রতীক, শান্তির প্রতীক হয়ে ওঠা অং সান সুচি। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি কিভাবে এই সেনাবাহিনীকে বাঁচাতে মিথ্যাচার করেছেন! নিজের অর্জন, মর্যাদা জলাঞ্জলী দিয়ে অবলীলায় বলে গেছেন, রাখাইনে কোনো গণহত্যা হয়নি। তবে সেখানে সহিংসতার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সেই সেনাবাহিনী তাকে ‘প্রতিদান’ দিয়েছে!
সোমবার ভোরে সুচি ও দেশটির প্রেসিডেন্টকে সেই সেনাবাহিনী আটক করেছে। বিশ্ব মিডিয়ায় বলা হচ্ছে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অথচ এই সেনাবাহিনীর জন্য তিনি সারা বিশ্বের কাছে নির্লজ্জের মতো মিথ্যা বলেছেন। নিজের অর্জিত সারা জীবনের পুরষ্কার, পদক জলাঞ্জলি দিয়েছেন।
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের বিচার আদালতে মামলা করে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। সেখানে শুনিানির দ্বিতীয় দিনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বক্তব্য রাখেন সুচি। এদিন তিনি রাখাইনে সহিংসতার কথা স্বীকার করলেও একে কোনোভাবেই গণহত্যা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানির সূচনা বক্তব্যে সুচি বলেন, দুঃখজনকভাবে গাম্বিয়া রাখাইন রাজ্যের একটি অসম্পূর্ণ, ভ্রান্তিকর চিত্র উপস্থাপন করেছে৷ তবে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি ‘জটিল’ বলে উল্লেখ করেন তিনি ৷ রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ‘দুর্দশার’ কথাও এসময় স্বীকার করেন সুচি৷ কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে হত্যা ও অন্য সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ও শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করেন৷ পাশাপাশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে হওয়া চুক্তির কথাও তুলে ধরেন তিনি৷
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতি নিধনের উদ্দেশে গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে রিপোর্টি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ মানবাধিকার বিষয়ক বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রামাণ্য হিসেবে তুলে ধরতে থাকে কিভাবে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। কিভাবে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোর চিহ্ন মুছে দেয়া হচ্ছে। কিভাবে স্বামী, সন্তান, আত্মীয়দের সামনে রোহিঙ্গা যুবতীদের ধর্ষণ করেছে মানুষরূপী সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য। গ্রামের পর গ্রাম যখন আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে, নারীর সম্ভ্রম নিয়ে যখন ছিনিমিনি খেলা করতে থাকে সেনাবাহিনী, তখন মানবতার নেত্রী হিসেবে পরিচিত, শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সুচি ছিলেন একেবারে নীরব। যেন, তিনি উপভোগ করছিলেন দৃশ্য। তার এমন ভূমিকায় নিন্দার ঝড় ওঠে সারাবিশ্ব থেকে। ছি ছি প্রকাশ করা হয়। একে একে কেড়ে নেয়া হয় তার সব পদক। এমনকি তাকে দেয়া শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার ফিরিয়ে নেয়ার দাবি ওঠে। সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে, মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করে, কমপক্ষে ১৫ বছর গৃহবন্দি থেকে, শেষ পর্যন্ত তিনি সেনাবাহিনীর কাছে কি তবে মাথা নত করে দিয়েছিলেন! তাকে নিয়ে গর্ব করতো যে বিশ্ব, তারা তার মুখের ওপর ঘৃণাবৃষ্টি বর্ষণ করতে থাকলো! তাহলে কি অর্জন করলেন সুচি!
বিশ্ব মিডিয়ায় খবর প্রচারিত হয়, মন্তব্য কলামের পর কলাম ছাপা হয়। তাতে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছেন সুচি। শেষটা বলে দিচ্ছে তেমনেই। সেনাবাহিনী তাকে নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারে। তিনি একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর, অথচ রোহিঙ্গা নির্যাতনের সময় তিনি সেনাবাহিনীর ভয়ে কথা বলার সাহস পান না! আবার যখন নভেম্বরের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক স্বার্থে আঘাত লেগেছে, তখন তারা তাকে, প্রেসিডেন্টকে আটক করেছে। তবে কি সুচি সেনাদের হাতের পুতুল নন!