ভিসা জটিলতার কারণে ব্রিটেন থেকে হজ্বে যেতে পরলেননা অনেকে
ট্রাভেল এজেন্টগুলো নির্দিষ্ট সময় ভিসা সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ায় এবারের হজ্ব পালনের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে বেশ কিছুসংখ্যক বৃটিশ মুসলমানের। অত্যন্ত ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে গত মঙ্গলবার বিবিসিকে আম্বিয়া খাতুন বলেন, “এ ঘটনা আমার হ্রদয় ভেঙ্গে খানখান করে দিয়েছে, আমি খুবই ব্যথিত”। তিনি হজ্ব পালনের জন্য গত পাচ বছর ধরে তিল তিল করে ছয় হাজার ৮শ’ পাউন্ড জমিয়েছিলেন।
এ সমস্যার শিকার হয়েছেন দুইশ’ মুসলিম পরিবার। যাদের বেশীর ভাগের বসবাস উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডে। এরা প্রত্যেকেই এবারের হজ্ব পালনের জন্য ৫শ’ পাউন্ড জমা দিয়েছিলেন। যদিও এদের অনেকেই হজ্ব শুরুর মাত্র কয়েকদিন আগেও ভিসা পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছিলেন । কিন্তু ভিসার পরিমাণ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টির পরেই তারা আশাহত হন।
রাজকীয় সৌদি দূতাবাস লন্ডন ভিত্তিক ট্রাভেল স্টারসহ মুস্টিমেয় কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সীর নামে ভিসা ইস্যু করে যারা সেগুলো সারা দেশে বিক্রি করে। যেসব পরিবার গ্রেটার ম্যানচেস্টারের এ্যস্টোন ট্রাভেল অন ওল্ডহ্যাম রোড, এ্যস্টোন আন্ডার-লাইন এবং সিটি ট্রাভেল অন ডিকেনসন রোডের মাধ্যমে ভিসার বুকিং দিয়েছিলেন প্রকৃত পক্ষে তারাই সমস্যায় পড়েছেন।
হজ্বের জন্য ৬০০ পাউন্ড জমা দেয়া হুমায়ন খালিদ বলেন , এ্যাস্টোন ট্রাভেল আমাকে বারবার জানিয়েছিলেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমার কাছে দুটি ভিসা পৌছে যাবে এবং আমার ফ্লাইট ডেট দেয়াছিল ৫ অক্টোবর। তিনি বলেন, এর সাথে শুধুমাত্র অর্থ জড়িত নয় এর সাথে আবেগ অনুভূতি সবকিছুই জড়িত। আমরা মানসিকভাবে হজ্বের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম।
গত সোমবার ভ্রমণ নিয়ন্ত্রক , বৃটিশ হজ্ব কাউন্সিল, গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ এবং কাউন্সিলরদের সাথে মুসলমানদের বৈঠকের সময় বিষযটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ইসলামের মৌলিক পাচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ্ব হচ্ছে অন্যতম একটি স্তম্ভ। যে হজ্ব পালনের জন্য প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মুসলমান পবিত্র কাবায় সমবেত হয়।
হজ্বের মধ্যে বেশকিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েেেছ যার সাথে মুসলমানদের বিশ্বাস ও ইব্রাহিম (আঃ) স্মৃতি বিজড়িত।
অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কমপক্ষে জীবনে একবার হজ্ব পালন করা ফরজ।
চলতি বছর প্রায় ২৫ হাজার বৃটিশ মুসলিম হজ্ব পালনের জন্য মক্কায় গমন করবেন।এবারের হজ্ব মওসুমে পবিত্র কাবার সম্প্রসারন কাজ চলতে থাকায় গত জুন মাসে সৌদী কর্তৃপক্ষ হজ্বযাত্রী হ্রাসের ঘোষনা দিয়েছিলেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল তাদের নতুন নিয়মে আভ্যন্তরীন হাজীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ এবং বিদেশী হাজীর সংখ্যা ২০ শতাংশ হ্রাস করা হবে।
অপরদিকে ট্রাভেল এজেন্সীগুলোর পক্ষ থেকে বৃটিশ মুসলমানদের নিকট ক্ষমা চাওয়া হয়েছে ্ তাদের স্বপ্ন ভঙ্গের জন্য। এ্যস্টোন ট্রাভেল কর্মকর্তা বাবর হুসাইন বলেন , আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেয়ার। ইতোমধ্যেই আমরা টিকেটের টাকা ফেরত দেয়ার ঘোষনা দিয়েছি।
হুসাইন আরো বলেন, ভিসা সমস্যার কথা জানার পরে তিনি ভীষনভাবে মর্মাহত এবং লজ্জিত । সিটি ট্রাভেলস-এর এক মুখপাত্র বলেন, সামান্য কমিশনের বিনিময় তিনি এ্যাস্টোন ট্রাভেলস-এর পক্ষ থেকে ১৫টি প্যাকেজ বিক্রি করেছিলেন।
তিনি বলেন , এজন্য আমি গভির ভাবে দুঃখিত। আমি জানি শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ এজন্য যথেষ্ট নয় । তাই বিমার সাহায্য নিয়ে যে কোন ধরনের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া সিটি ট্রভেলস-এর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে তারা আগামী ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা ফেরত দেয়া হবে। অপরদিকে বৃটিশ হজ্ব কাউন্সিল এ বিষয় পুলিশের সাথে যোগাযোগের জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন । কাউন্সিলের চীফ এক্সিকিউটিভ রশিদ মোগরাদিয়া বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা খুবই ক্ষুব্ধ, কারণ তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে ।
যুক্তরাজ্যে এবার যা গটলো তাকে খুবই অস্বস্তিকর ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যদি মনে করেন যে তারা প্রতারনার শিকার হয়েছেন তাহলে তাদের উচিত এ্যাকশন ফ্রডের সাথে যোগাযোগ করা।