নানামুখী চ্যালেঞ্জে যুক্তরাজ্যের বাজেট-২০২১
নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে জারি করা লকডাউন ও বিধিনিষেধে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। তার ওপর চলতি বছরের শুরু থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আলাদা চলতে গিয়ে বিভিন্ন সংকটে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার। রেকর্ড পরিমাণ ঋণের বোঝা, সরকারি খাতের ঋণ, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও ভোক্তাব্যয় হ্রাসসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। এ পরিস্থিতিতে আগামী বুধবার দেশটির অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ২০২১ সালের বাজেট ঘোষণা করতে চলেছেন। নতুন বাজেটের প্রধান বিষয়ই হবে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে টেনে তোলা। এক্ষেত্রে বিপুল অংকের এ অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে ঋষি সুনাক কর বৃদ্ধির পথ বেছে নিয়েছেন।
বাজেটে স্বল্পমেয়াদি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে জুন পর্যন্ত মজুরি ভর্তুকি বাড়ানো, ব্যবসাগুলোকে সহায়তা এবং পাঁচ লাখ ডলারের কম মূল্যের আবাসন কেনার ক্ষেত্রে জিরো স্ট্যাম্প শুল্ক আরো তিন মাস বর্ধিত করার মতো বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের জুলিয়ান জেসপ বলেন, আগামী এপ্রিলে মজুরি ভর্তুকি দেয়া ফোরলগ স্কিম শেষ হতে চলেছে। কিন্তু আমরা এখনো লকডাউনে রয়েছি। তাই চ্যান্সেলরের ওপর আবার স্কিমগুলো বাড়ানোর চাপ রয়েছেন।
চলতি মজুরি ভর্তুকি কর্মসূচি ১১ মাসের জন্য চলছে। মহামারীতে বেকারত্বের হার কমাতে সহায়তা করা এ কর্মসূচির আওতায় ১ কোটি ১২ লাখ ব্রিটিশ তাদের মজুরি পাচ্ছেন। জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৭ লাখ চাকরিকে সহায়তা করেছে এ কর্মসূচি। এর মধ্যে ৯ লাখ ৩৮ হাজার কর্মসংস্থান পাইকারি ও খুচরা খাতের। নতুন বাজেটে এ কর্মসূচি এপ্রিলের পরও অব্যাহত রাখা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা করোনার সীমাবদ্ধতার অবসান ঘটাতে আগামী গ্রীষ্মের আগে পর্যন্ত এ কর্মসূচিকে দীর্ঘায়িত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
নতুন বাজেটে জ্বালানি শুল্ক, করপোরেশন কর, আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তিদের শুল্ক বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এছাড়া সুনাক অনলাইন ডেলিভারিগুলোতে একটি নতুন করের পরিকল্পনা করছেন এবং এ বছরের শেষ নাগাদ আত্মনির্ভরশীলদের ওপরে অতিরিক্ত কর আরোপ করতে যাচ্ছেন। বাজেটে করপোরেশন করের হার ১৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা এবং মূলধনি আয়ে কর বাড়ানো হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে লকডাউন শিথিলের পর পর্যায়ক্রমে এসব কর বাড়ানো হবে। এরপর কর বৃদ্ধির জন্য উচ্চ উপার্জনকারী এবং করপোরেশনগুলোর দিকে নজর দেয়া হতে পারে।
কর বাড়ানো নিয়ে অর্থমন্ত্রী সুনাক টরি ও লেবার পার্টির আইন প্রণেতাদের চাপের মুখে রয়েছেন। আবার কনজারভেটিভ পার্টির কয়েকজন এমপিও কর বাড়ানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তবে সাবেক কনজারভেটিভ চ্যান্সেলর লর্ড কেন ক্লার্ক জনগণের আর্থিক পুনর্নির্মাণের জন্য সুনাককে ভ্যাট, জাতীয় বীমা ও আয়কর বাড়ানোর বিষয়ে বিবেচনা করতে উৎসাহিত করেছেন।