বাংলাদেশে মাথাপিছু ঋণ প্রায় ৮৫ হাজার টাকা
বাংলাদেশে ঋণের বোঝা বাড়ছে। আজ যে শিশুটি জন্ম নেবে, তার মাথায় ৮৪ হাজার ৭৭০ টাকা ঋণের দায় চাপবে। কারণ বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু এই অঙ্কের ঋণ রয়েছে। যা গত এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ৬৬৩ টাকা। আগামী এক বছরে তা আরও কমপক্ষে ১৩ হাজার ৬০ টাকা বাড়বে। ফলে ওই সময়ে মাথাপিছু ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে প্রায় ৯৮ হাজার টাকা। এ কারণে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটেও ব্যয়ের দিক থেকে চার নম্বরে রয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধের খাত। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে মানুষের মাথাপিছু বরাদ্দ ৩৭ হাজার ৩৩৩ টাকা। এ হিসাবে ঋণ মাথাপিছু বরাদ্দের দ্বিগুণেরও বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর আদায় করতে না পারায় সরকারকে বেশি ঋণের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ ১১ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৩ কোটি এবং সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত মিলিয়ে এই ২ লাখ ১০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এছাড়া এই পরিমাণ ঋণ জিডিপির ৩৫ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ। এ হিসাবে প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ ৮৪ হাজার ৭৭০ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭৫ হাজার ১০৭ টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে ৯ হাজার ৬৬৩ টাকা।
এরপর আগামী অর্থবছরে আরও ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। ফলে ঋণের স্থিতি আরও ১৩ হাজার ৬০ টাকা বাড়বে। এই ঋণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কারণ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে ঋণ নেওয়া হয়, তার বিপরীতে সরকারকে বছরে ১০ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। এ কারণে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে ৬৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। যা দুটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের চেয়েও বেশি। এক্ষেত্রে ঋণ না কমলে এই টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা যেত।
বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের (ব্রডমানি) পরিমাণ ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে আমানত ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা এবং জনগণের হাতে নগদ টাকা ১ লাখ ৮৪ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। আবার আমানতের মধ্যে মেয়াদি আমানত ১১ লাখ ৫৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা এবং তলবি আমানত ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।