ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থার বিশেষ স্বীকৃতি পেলেন এমএফএ জামান
করোনাকালীন সময়ে ১০ মিলিয়িন লোক বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন
ভলান্টিয়ার উইক/ স্বেচ্ছাসেবক সপ্তাহ এবং ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) এর ৭৩ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা এমএফএ জামান এর উপর বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। করোনাকালীন সময়ে এমএফএ জামান নাইটিঙ্গেল হসপিটাল সহ এনইচএসের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ২০২০ সালের শুরু থেকে বিলেতে করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়াতে শুরু করে। তখন হাসপাতালগুলোতে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে এনএইচএস হিমশিম খাচ্ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরী ভিত্তিতে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী হাসপাতাল চালু করা হয়। দীর্ঘ কয়েকমাস লকডাউনের পর পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস খুলে দেয়া হয়। বিলেতে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষাধিক লোক মারা গিয়েছে যার মধ্যে রয়েছেন অনেক চিকিৎসক, নার্স । জনগনের জীবন রক্ষার্থে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে করোনা ভেক্সিন দেয়া শুরু করা হয়। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের করোনাকালীন এই বিশেষ কার্যক্রমের প্রায় ১০ মিলিয়িন লোক ভলান্টিয়ার অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যাচ্ছেন।
এনএইচএসের ডাইরেক্টর ড. নেইল চার্চিল ভলান্টিয়ার উইকের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমি গত ১ বছরে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে সমর্থনকারী প্রতিটি স্বেচ্ছাসেবককে ধন্যবাদ জানাই কারণ তাদের সাহায্য ব্যতীত এই মহামারী মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব ছিলো। শুধু করোনা মহামারীই নয়, অতীতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধকালীন সময়ে এই স্বেচ্ছাসেবকরাই তাদের সবকিছু দিয়ে জনগণের জীবন রক্ষার্থে এগিয়ে এসেছেন। তাই এই ভলান্টিয়ার অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের এনএইচএসের প্রাণশক্তি।
১৯৪৮ সালের ৫ ই জুলাই তৎকালীন লেবার পার্টির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এন্যুরিন বেভানের হাত ধরে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) এর যাত্রা শুরু। এটি হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা যেখানে দেশের নাগরিককে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। মূলত জনগণের ট্যাক্সের অর্থ এবং সরকারের অনুদানেই এই বিশাল চিকিৎসা খাত পরিচালিত হয়। ডাক্তার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, দন্ত ও চোখ্য চিকিৎসক, এম্বুল্যেন্স কর্মী, একাউন্টেড, গাড়িচালক, নিরাপত্তারক্ষী, পরিচ্ছন্ন্তাকর্মী সহ বিভিন্ন শাখায় প্রায় ১.৫ মিলিয়ন লোক বর্তমানে এনএইচএস ইংল্যান্ডের বিভিন্ন হাসাপাতাল এবং অফিসে কর্মরত রয়েছেন। বিশ্বের বৃহত্তম নিয়োগকর্তাদের তালিকায় বিলেতের এনএইচএস হলো ৫ম অবস্থানে।
এমএফএ জামান বলেন, আমি ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রতি কৃতজ্ঞ এই স্বীকৃতির জন্য। কিন্তু এই স্বীকৃতি শুধু আমার জন্য নয়; এটি হলো সেইসব ভলান্টিয়ার/ স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য যারা নিজের জীবন বাজি রেখে জনগণের প্রাণ রক্ষার্থে কাজ করে গেছেন। বিলেতে একজন বাংলাদেশী হিসেবে করোনা মহামারীকালীন এবং পরবর্তী সময়ে আমার কাজের ধন্যবাদ স্বরুপ এই স্বীকৃতি সত্যিই আমাকে আরো উৎসাহিত করবে। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমার কাজের বিস্তারিত তুলে ধরায় অনেকে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
২০২০-২১ সাল সত্যিই আমাদের জন্য এক ভয়াবহ সময়। অনেকেই নিজের আপনজন-বন্ধুকে হারিয়েছেন। কেউ তাদের চাকরী হারিয়েছেন। আমি চেষ্টা করেছি আমার সবকিছু দিয়ে সেইসব মানুষের পাশে দাড়াঁতে। করোনা মহামারীর শুরুতে এই কাজে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়াটা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিলো। কারণ চারিদিকে শুধু স্বজন হারানোর কান্নার আ্ওয়াজ আর এক অজানা আতংক সবার মনে। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত বন্ধ আর ট্রেন-বাস ষ্টেশন ছিলো ফাকাঁ। রাস্তায় ছিলো শুধু এম্বুলেন্স আর লাশবাহী গাড়ির দৌড়। এসব কিছুর পর শুধু মানবতার জন্য আমি দেশের মানুষের সেবায় এনএইচএসের সার্ভিসে যোগদান করি। করোনা বিষয়ক সচেতনতা গড়ে তুলতে আমি বৃটেনের এশিয়ান কমিউনিটিতে বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করি। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ছাড়া্ও আমি অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলাম। আমার চ্যারিটি ‘সেইফ এন্ড সেইভ‘ এর পক্ষ থেকে লন্ডনের গৃহহীন পথলোকদের খাবার সরবরাহ করা হয়। লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই গৃহবন্দী ছিলেন তাদের মধ্যে সেইসব বৃদ্ধ, নিঃসঙ্গ ব্যক্তিদের মানসিক অবসাদ দূর করতে তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখা হতো। এই সবকিছুই ছিলো মানবতার সেবায়।
একজন মুসলমান হিসেবে সেই করোনা মহামারীকালীন সময়ে শুধু একটি কথাই শুধু আমার মনে পড়েছে যা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে মানবতার কল্যাণে কাজ করতে। হযরত মোহাম্মদ (স) বলেছেন, কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করোনি। বান্দা বলবে, হে আমার প্রতিপালক। আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কীভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব? তিনি বলবেন, তুমি কী জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কী জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে। হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি? বান্দা বলবে, হে আমার রব, তুমি হলে বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব? তিনি বলবেন, তুমি কী জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তবে আজ তা প্রাপ্ত হতে? – সহীহ মুসলিম
“I’ve enjoyed helping others – particularly with the vaccinations where some people need extra support. As I speak Bengali and Hindi, I’ve been able to give helpful advice and reassurance.”
Inspired by volunteer @mfazaman9? Visit: https://t.co/rACy64ini7 #VolunteersWeek pic.twitter.com/9iMfEVl1mF
— NHS London (@NHSEnglandLDN) June 4, 2021
We received NHS birthday messages from some of our community partners 🎂
Harkarit Singh works for the Sikh Education Service and Mfa Zaman volunteered in London for the vaccination programme. They kindly shared their birthday messages in Punjabi and Bengla 🌈#NHSBirthday pic.twitter.com/oIwh66ztCt
— Barts Health (@NHSBartsHealth) July 5, 2021