কারাগারে ঈদ করবেন সাবেক মন্ত্রী এমপি আমলাসহ ২৬ ভিআইপি

এবারও কারাগারে ঈদ করছেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও আমলাসহ ২৬ ভিআইপি। বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের এসব ভিআইপিকে আটক রাখা হয়েছে। বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমান সরকারের আমলের আলোচিত ক’টি মামলায় তাদের জড়ানো হয়েছে। এ তালিকায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ৬ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১৫ ভিআইপি নেতা, একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক এবং সাবেক ৪ গোয়েন্দা ও পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় কাউকে আটক রাখা হয়েছে আবার কাউকে দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
এরা হচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম, সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সিনিয়র নায়েবে আমির আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ ও মাওলানা আবদুস সোবহান, নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএ আজহারুল ইসলাম, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলী, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক তাসনিম আলম, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি সেলিম উদ্দিন।
এছাড়া দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই’র সাবেক পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবুদ্দিন, উপ-পরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন রয়েছেন।
কারান্তরীণ এসব নেতার ক’জন গত ৬ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। তাদের পরিবার আজ সীমাহীন দুর্ভোগ ও কষ্টে দিনাতিপাত করছে। আটক নেতারা সবাই পরিবারের প্রধান। পরিবারের প্রধান কারান্তরীণ থাকায় তাদের পরিবারে যেন ঈদের আনন্দ নেই। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে শোকের ছায়া। খুশির ঈদেও চোখের পানি ঝরে এসব ভিআইপি কারাবন্দির স্ত্রী ও সন্তানদের। কারাগারে বসেই মা, বাবা ও ছেলে হারিয়েছেন কেউ কেউ। এবারের ঈদেও পরিবার-পরিজন থেকে দূরে, নিঃসঙ্গ কারাগারে ঈদুল আজহার দিন কাটাবেন তারা। কারাগারেই তারা ঈদের নামাজ পড়বেন এবং ঈদ উদযাপন করবেন।
এসব ভিআইপি রাজনীতিক ও সাবেক আমলা সরকারের সিদ্ধান্তে কারান্তরীণ থাকায় তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আনন্দের পরিবর্তে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। উচ্চ আদালতে জামিনের পরও নানামুখী মামলায় জড়িয়ে কোনো কোনো নেতাকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ কামনা করেছে অনেকের পরিবার। ঈদের দিন এবং ঈদের পর দিন কারা ফটকে সাক্ষাত্ করবেন প্রায় সবার পরিবারের সদস্য।
প্রসঙ্গত, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ উল্লেখযোগ্য বড় দলগুলোর নেতা এবং শীর্ষ সরকারি আমলাদের অনেকেই কারাবরণ করেছিলেন। তখন শতাধিক সাবেক এমপি-মন্ত্রী ২০০৭ সালের দুটি ঈদ কারাগারে কাটান। ক্ষমতার পালাবদলে এবার বিএনপি ও জামায়াতের সাবেক নেতা এবং এমপি-মন্ত্রীরা কারাগারে ঈদ করছেন।
জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ নিয়ে বর্তমানে কাশিমপুর-১ কারাগারের কনডেম সেলে আটক রয়েছেন। তাকে ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারাহা কাদের চৌধুরী বলেন, পরিবারের কর্তা ছাড়া ঈদ খুবই কষ্টের। তিনি জানান, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কাশিমপুর কারাগারের কনডেম সেলে আছেন। এ বছর ঈদে দেখা করতে পারব কি-না এটা এখনও অনিশ্চিত।
সাবেক স্বরাষ্ট্র্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর দীর্ঘদিন ধরে কারান্তরীণ। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তাকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেয়া হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় তাকে দু’দফা রিমান্ডে নেয়া হয়। সর্বশেষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায়ও তাকে জড়ানো হয়েছে।
তার পরিবার সূত্রে জনা যায়, লুত্ফুজ্জামান বাবরের পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। বৃদ্ধ মা কাঁদতে কাঁদতে চোখ অন্ধ প্রায়। ছোট মেয়ে তাসফিয়া ইবনে জামান বাবার ছবি দেখে ছবি আঁকে আর কাঁদে। সে প্রায় প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছে। ঈদের দিন বাবার সঙ্গে দেখা করতে যেতে চায় সে। মেয়ে ফাছিহা ইবনে জামান, আনাফ ইবনে জামান ও ছেলে লাবিব ইবনে জামানের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ।
সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবারের ঈদও কারাগারেই কাটাবেন। এ নিয়ে প্রায় ১০টি ঈদ তিনি কারাগারে কাটাচ্ছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে কারান্তরীণ রাখা হয়। তার স্ত্রী ও মেয়েরা কারাগারে সাক্ষাত্ করবেন।
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু দণ্ডাদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-২। বর্তমানে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে রয়েছেন। এবারই প্রথম তিনি কারাগারে ঈদ করছেন।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আলহাজ নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু গত আটটি ঈদ কারাগারে কাটিয়েছেন। দিন দিন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি। তার একটি চোখের অবস্থা খুবই খারাপ। স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না। কারান্তরীণ অবস্থায়ই গত ২০১১ সালে প্রিয় বাবাকে হারিয়েছেন। ঈদের দিন সকালে তার স্ত্রী, সন্তান ও মা কারাগারে সাক্ষাত্ করতে যাবেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু রয়েছেন নাটোর জেলা কারাগারে। গত ঈদুল ফিতরে কারাগারেই তিনি ঈদ করেছেন।
দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে চলতি বছরের ১১ মে সকালে পত্রিকা অফিস থেকে অটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে বিভিন্ন মামলায় কায়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর-২ কারাগারে আটক রয়েছেন। গত ঈদুল ফিতর কারাগারেই করেছেন। গ্রেফতারের আগে প্রায় তিন মাস তিনি পত্রিকা অফিসেই অবস্থান করছিলেন।
কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর তৃতীয়বারের মতো ঈদ করবেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম। গত ১৫ জুলাই চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রথম ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় তাকে। পরে এ দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন গোলাম আযম। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে কারাভোগ করছেন। ৯১ বছরের বয়োবৃদ্ধ এই রাজনীতিবিদকে ছাড়া তার পরিবারের সদস্যরা এবারও ঈদ করছেন।
গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহ হিল আমান আযমি বলেন, আব্বা ছিলেন বৃহত্তর পরিবারের সবচেয়ে বড় মুরব্বী। ১৯৭৮ সালের পর থেকে তিনি মসজিদে ঈদের খুতবা দিয়ে আসছেন। মুসল্লিরা এবার ঈদে আব্বার জন্য চোখের পানি ফেলছেন। তিনি বলেন, আমাদের ঈদ বিষাদপূর্ণ হবে বলে মনে হচ্ছে। অনুমতি দিলে ঈদের দিন গোলাম আযমের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা দেখা করবেন বলে জানান তিনি।
জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা একেএম ইউসুফকে গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের এক আদেশে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জামায়াতের এ নেতার বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর-১ কারাগারে আটক রয়েছেন।
কারাগারে অষ্টমবারের মতো ঈদ করবেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। তিনি বর্তমানে কাশিমপুর-১ কারাগারে আটক আছেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে ১৩টি মামলায় জড়ানো হয়। বিভিন্ন মামলায় তাকে ২৪ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
মাওলানা নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন বলেন, আমরা আব্বুকে ছাড়া ঈদ করছি। এটা একটা কষ্টকর ব্যাপার। ঈদের পর দিন কারাগারে তাদের পরিবারের সদস্যরা দেখা করবেন বলে তিনি জানান।
জামায়াতের নায়েবে আমির প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রয়েছেন কাশিমপুর-১ কারাগারের কনডেম সেলে। ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে। ২০১০ সালের ২৯ জুন শহীদবাগের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মাওলানা সাঈদীকে গ্রেফতার করে। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ ১৩টি হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ৩১ দিন রিমান্ডে নেয়া হয় বর্ষীয়ান এই আলেমে দ্বীনকে। এছাড়া সেফ হোমেও তাকে একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কারান্তরীণ অবস্থায়ই তিনি প্রিয় মা এবং বড় ছেলে মাওলানা রাফিক বিন সাঈদীকে হারিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত মাওলানা সাঈদীর সাতবার জামিনের আবেদন করা হয়।
মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ বিন সাঈদী বলেন, আমাদের ঈদ যেন জেলখানার চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে আমার বাবার কথিত বিচার চলাকালীন সরকারের মিথ্যাচারের ছুরিকাঘাতে ইন্তেকাল করেছেন বড় ভাই রাফিক বিন সাঈদী। বাবা কারাগারে থাকা অবস্থায় যেমন বড় ভাইকে হারিয়েছি, তেমনি দাদিকেও হারিয়েছি। সুতরাং আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ বলতে কিছু নেই।
মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী জানান, বর্তমানে আমার বাবা কারাগারে ফাঁসির কনডেম সেলে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মাত্র ৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট প্রশস্থ সাইজের বন্ধ রুমে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তিনি বলেন, ৭৪ বছর বয়স্ক শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও তার মানসিক মনোবল আল্লাহর মেহেরবানিতে পর্বতসম।
তিনি আরও জানান, আমরা আশা করি এবং বিশ্বাস করি আপিল বিভাগ তড়িঘড়ি না করে মামলাটি পরিপূর্ণভাবে শুনবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। বাবার সঙ্গে আমরা মাসে একবার দেখা করার সুযোগ পাই। শেষবার যখন দেখা হয়, তখন তিনি আমাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, লাখো-কোটি কোরআনপ্রেমিকের দোয়া ও চোখের পানির বিনিময়ে তিনি অবশ্যই আবারও কোরআনের ময়দানে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। এ বছর ঈদের দিন অথবা ঈদের পর দিন কারাগারে মাওলানা সাঈদীর সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করবেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সোবহানকে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে একটি মামলায় হাজিরা দিতে পাবনা যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পূর্ব টোল প্লাজা এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করে। পরে তাকে পাবনা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মাওলানা সোবহানকে গ্রেফতার দেখানোর পর বর্তমানে তিনি কাশিমপুর-১ কারাগারে আটক আছেন।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ কারাগারের কনডেম সেলে। গত ১৭ জুলাই চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। তাকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ এ পর্যন্ত ১২টি মামলা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ তাকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়ানো হয়। বিভিন্ন মামলায় তাকে ২৭ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। সেফ হোমেও তাকে একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মুজাহিদের মেজ ছেলে আলী আহমদ মাবরুর বলেন, ঈদের দিন বাবার শূন্যতা খুব বেশি অনুভব করব।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ড নিয়ে কাশিমপুর-২ কারাগারের কনডেম সেলে রয়েছেন। এ দণ্ডের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামান আপিল করছেন। আপিল মোকদ্দমাটি শুনানির অপেক্ষায় আছে। কামারুজ্জামানকে ২০১১ সালের ১৩ জুলাই হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ পর্যন্ত ৮টি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং বিভিন্ন মামলায় ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেয় আদালত।
দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে মানবতবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর-২ করাগারে রয়েছেন। মানবতাবিরাধী অপরাধ মামলাসহ এ পর্যন্ত ৭টি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম গত বছরের আগস্টে জামিনে মুক্তি পাওয়ার তিন দিন পর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক করে পুলিশ। ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে আদেশের জন্য রেখেছে। প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি কারাগারে রয়েছেন। বর্তমানে গাজীপুর জেলা কারাগারে আটক আছেন।
দলের প্রচার সম্পাদক ও সাপ্তাহিক সোনার বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলম রয়েছেন কাশিমপুর-১ কারাগারে। তাকে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। সন্ত্রাসী অপরাধের মতো ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরিয়ে তাকে হাজির করা হয় আদালতে।
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৭ জুন মতিঝিলস্থ দৈনিক নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বর্তমানে তিনি কাশিমপুর-২ কারাগারে আটক আছেন। তিনি চতুর্থবারের মতো কারাগারে ঈদ করবেন। তার পরিবারের সদস্যরা ঈদের দিন তার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে। এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার খুলনা কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান কাশিমপুর-১ কারাগারে, সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গাজীপুর জেলা কারাগার ও ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি সেলিম উদ্দিন কাশিমপুর-১ কারাগারে আটক আছেন। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এখন কারাগারে আছেন। সেখানেই তাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button