লাব্বায়িক আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক ধ্বনিতে প্রকম্পিত আরাফাতের ময়দান
বিশ্ব মুসলমানের শান্তি, ঐক্য ও সমৃদ্ধি কামনার মধ্য দিয়ে সোমবার পবিত্র হজ পালিত হয়েছে। মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মুসলিমের সর্ববৃহৎ এই সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজীদের আবেগ মেশানো ‘লাব্বায়িক আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক’ ধবনিতে প্রকম্পিত হয়েছে পুরো ময়দান। ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ফরজ। সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর মসজিদ নামিরা থেকে খুতবা প্রদান করেন সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আল শায়খ। কুরআন হাদীসের মূলনীতির ভিত্তিতে বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান। আরাফারাতের ময়দানে নাজিলকৃত কোরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ইসলামই আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। আার আর এই দ্বীন আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। খুতবায় তিনি পরস্পরে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শান্তির বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ফেতনা ফাসাদ রক্তাপাতের অনুমতি নেই। তিনি দাওয়াতের গুরুত্বারোপ করে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানের দায়িত্ব পালনের কথা মুসলমানদের স্মরণ করিয়ে দেন। সমবেত মুসল্লিরা খুতবা শুনেন এবং জোহরের ওয়াক্তে জোহর ও আসরের নামাজ পর পর আদায় করেন একই ইমামের পিছনে। এরপর হাজীরা সুর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে চোখের পানিতে বুক ভিজিয়ে আল্লাহর দরবারে গুনাহ মাফের প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুনা কামনা করেছেন কায়মনো বাক্যে। এবার ২০ লখের বেশী ধর্মপ্রাণ মানুষ পবিত্র হজ পালন করেছেন। তবে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য মতে, এবার বিদেশী হজযাত্রী ১৩ লাখ ৮০ হাজার। যা গত বছরের চেয়ে ২১ ভাগ কম। মসজিদুল হারাম ও মাতাফের সম্প্রসারণ কাজের জন্যই এবার হজযাত্রী হ্রাস করা হয়েছে। এবার ১১৮টি দেশ থেকে হাজী এসেছে বলেও জানানো হয়েছে। এদিকে গতকাল ফজরের নামাজের মক্কায় কাবা ঘরের পুরনো গিলাফ খুলে নতুন গিলাফ লাগানো হয়। প্রতিবছর এই দিন কাবাঘরের গিলাফ পরিবর্তন করা হয়। আজ থেকে প্রায় ১৪শ’ বছর আগে এই দিনে রাসূল (সাঃ) আরাফাতের ময়দানে লক্ষাধিক সাহাবীকে সামনে রেখে ভাষণ প্রদান করেন। যা ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষন নামে পরিচিত। এই ভাষণে তিনি ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করাসহ জীবন পরিচালনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সৌদী আরবের গ্র্যান্ড ইমাম হাজীদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করেন সেই রীতি অনুযায়ীই। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেই হাজীরা হজের মূল কাজটি সম্পন্ন করেছেন। এই ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ। ৮ জিলহজ ইহরাম বেধে মিনায় অবস্থান নেয়ার মধ্য হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সোমবার আরাফাতের অবস্থানের পর ফেরার পথে হাজীরা রাত কাটিয়েছেন আরাফা ও মিনার মধ্যস্থান মুজদালিফায়। সেখান থেকেই কংকর সংগ্রহ করেন পরের তিনদিন জামারায় শয়তানের প্রতিকৃতিতে নিক্ষেপের জন্য। আগামীকাল সকালে হাজীরা মিনার তাবুতে ফিরে গিয়ে জামারায় কংকর নিক্ষেপ করবেন এবং কোরবানী করবেন। কোরবানীর পশু জবাইয়ের পরই ইহরাম ভাঙবেন। এরপর হাজীদের মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করতে হবে। এই তাওয়াফও হজের অন্যতম ফরজ। পাশাপাশি পাশেই অবস্থিত সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সায়ী (দৌঁড়ানো) করবেন। এ সায়ী ওয়াজিব। এরপর মিনার তাঁবুতে ফিরে গিয়ে পর পর পর দুইদিন অথ্যা ১১ ও ১২ জিলহজ জামারাতে তিনটি শয়তানের প্রতিকৃতিতে কংকর নিক্ষেপ করবেন। ১২ জিলহজ ইচ্ছে করলে মীনা ত্যাগ করতে পারবেন। তবে কেউ মীনায় অবস্থান অব্যাহত রাখলে পরদিন ১৩ জিলহজও তাকে কংকর নিক্ষেপ করে তবে মিনা ত্যাগ করতে হবে। এরই মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। মক্কা ত্যাগের আগে হাজীরা বিদায়ী তাওয়াফ করবেন। উল্লেখ্য, হজ ইসলামের ফরজ বিধান। সামর্থবান মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। পবিত্র কাবাঘরকে কেন্দ্র করেই মুলত: হজের কার্যক্রম। আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র ইসমাঈল (আ.) কাবাঘর পুন:নির্মান করেন। হজের অধিকাংশ কাজই হযরত ইব্রাহিম, তাঁর স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর সাথে সম্পর্কিত।