কার ঈদ কোথায়

Politic Eidপবিত্র ঈদুল আযহা বুধবার। এবারের ঈদ এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন রাজনীতির মাঠ তেঁতে আছে। এতে দেশবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন কার অধীনে হবে সেই প্রশ্নেই এই উত্তাপ। কোরবানীর ঈদেও পড়েছে তার প্রভাব। এবারের ঈদে রাজনীতিকদের রকমফের জানাচ্ছেন রোমান কবির, আরেফিন শাকিল ও আব্দুল আলীম:
আওয়ামী লীগ
ত্যাগের মহিমায় উজ্জল ঈদুল আযহা বা কোরবানীর ঈদ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানী করেন। এই ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয় সপ্তাহখানেক আগে থেকে। গরু কেনা, তার অঅদর যত্ন করা থেকে পুরো সপ্তাহ চলে পরিবারে উৎসবের আমেজ। রাজনীতিকদের জন্য কোরবানীর ঈদে থাকে বাড়তি পাওয়া। নির্বাচনী এলাকায় নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরা যায়। আর এবার তার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ভোট খুব আসন্ন বলে।
নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ অনেক আগে থেকেই ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। কোরবানীর ঈদ তাই তাদের এই প্রচারণায় যুক্ত করবে নতুন মাত্রা। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তাই দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের বেশিরভাগই যাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। কেউ কেউ ঢাকায় ঈদ করলেও ঈদের পর ছুটে যাবেন নিজ এলাকায়।
প্রতিবারের মত এবারও ঈদ ঢাকায় করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদের দিন সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বিদেশি কূটনৈতিক, সুপ্রিমকোর্টের বিচারক, আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস আরটিএনএন- কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও ঈদ করবেন ঢাকায়। তবে ঈদের পরপররই কিশোরগঞ্জের নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাবেন তিনি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ঈদ করবেন তার নিজ নির্বচনী এলাকা ঝালকাঠী। তবে ঈদের পরেই তিনি ফিরে আসবেন ঢাকায়।
উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ প্রতিবারের মত এবারো তার ভোলার নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করবেন। তিনিও সেখানের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ঈদের দিনই ফিরবেন ঢাকায়।
পূজা ও ঈদ পাশাপাশি হওয়ায় একটু বেশি ব্যস্ত উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। পূজার দিনগুলো তিনি ঢাকায় পার করলেও ঈদ করবেন সুনামগঞ্জে নিজ নির্বাচনী এলাকায়।
উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূনও ঈদ করেন নিজ এলাকা ভোলার মানুষের সঙ্গে। ইতোমধ্যেই তিনি সেখানে চলে গেছেন। তবে ঈদের দিন রাতেই ফিরবেন ঢাকায়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবার ঈদ করছেন নিজ নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলে। আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ঈদ করবেন ঢাকায় তার নির্বাচনী এলাকায়।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ঈদ করবেন ঢাকায়। তবে তিনি ঈদের পরেই তার নিজ নির্বাচনী এলাকা শেরপুরে যাবেন। মোহাম্মদ নাসিম ঈদ করবেন সিরাজগঞ্জের তার নিজ এলাকা কাজিপুরে। ইতোমধ্যে তিনি তার নিজ এলাকায় চলে গেছেন। ঈদ শেষে ১৮-১৯ তারিখে ঢাকায় ফিরে আসার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ ঈদ করবেন তার এলাকায় ফরিদপুরে। এখনো নির্ধারিত না হলেও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের তার নিজ এলাকা কুষ্টিয়ায় ঈদ করার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবার ঈদ করবেন ঢাকায়। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ঈদ করবেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার নিজ নির্বাচনী এলাকায়।
এছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঈদ করবেন দিনাজপুরে, আহমদ হোসেন ঈদ করবেন নেত্রকোনায়, বিএম মোজাম্মেল ও আফম বাহাউদ্দিন নাছিম ঈদ করবেন শরীয়তপুরে।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জয়পুরহাটে, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ঈদ করবেন সিলেটে।
স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু ঈদ করবেন মুন্সিগঞ্জে। ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহাল লাইলী ঈদ করবেন নোয়াখালীতে।
সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতারা ঈদ করছেন এলাকায়। তবে যারা এলাকায় ঈদ করতে পারছে না তারা ঈদের আগে ও পরে এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অংশ নিয়েছেন দলীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে।
বিএনপি
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে ২৫ অক্টোবর ঢাকায় জনসভা ডেকেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে একই দিনে সমাবেশ আহ্বান করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ২৫ অক্টোবর রাজনৈতিক অঙ্গনের ডেটলাইন হওয়াতে বিএনপির অধিকাংশ নেতাই এবার ঢাকায় ঈদ করছেন। কেউ কেউ আবার বরাবরের মত গ্রামে ঈদ করবেন বলেও জানিয়েছেন।
ঢাকায় ঈদ করা নেতারা ঈদের দিন সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বরাবরের মত ঢাকায় ঈদ করবেন এবং পরে সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ঠাকুরগাঁয়ের নিজ এলাকায় এবারের ঈদুল আযহা উদযাপন করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আরটিএনএন- কে জানান, ‘ঈদের দিন নিজ এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে ১৭ অক্টোবর ঢাকায় ফিরবেন।’ তিনি ১৫ অক্টোবর বিমানযোগে ঠাকুরগাঁও যাবেন বলে জানান।
উন্নত চিকিৎসা নিতে ১২ অক্টোবর লন্ডনে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তাই এবারের ঈদ তার লন্ডনে কাটবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অতীতের রীতি ভেঙে ঈদুল ফিতরের মত এবারের ঈদও ঢাকায় করবেন বলে আরটিএনএন- কে নিশ্চিত করেছেন তার জ্যেষ্ঠ ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘রোজার ঈদের মত এই ঈদও আমরা ঢাকায় করছি। গুলশানে ঈদের নামায পড়ে আমরা ম্যাডামের (বেগম জিয়া) কর্মসূচিতে অংশ নেব। ঈদের পরদিন বাবা (খন্দকার মোশাররফ হোসেন) দাউদকান্দি যেতে পারেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ও বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ঢাকায় ঈদ করবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান। ডিওএইচএসে নামায পড়ে দলীয় প্রধানের কর্মসূচিতে অংশ নিবেন। ঈদের পর সময় বুঝে তারা গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে জানান।
সাবেক সচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার ঢাকায় ঈদ করবেন। ঈদের নামায পড়বেন কাটাবন জামে মসজিদে। নামায শেষে সরাসরি যোগ দিবেন দলীয় প্রধানের অনুষ্ঠানে। ঈদের পরদিন নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীন সদস্য ড. আরএ গনি ঈদ করবেন ঢাকায়। গুলশানে ঈদের নামায শেষে যোগ দিবেন দলীয় চেয়ারপারসনের অনুষ্ঠানে। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য তরিকুল ইসলাম যশোরে ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ঈদ করবেন চুয়াডাঙ্গায়। ঈদের দু-একদিন পর তিনি ঢাকায় ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক এবারের ঈদ করবেন নিজ এলাকা নোয়াখালীর সেনবাগে। ঈদের পরদিন ঢাকায় ফিরে ১৭ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে যাবেন নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে।
ঈদ নিয়ে বিশেষ কোনো স্মৃতি আছে কিনা জানতে চাইলে ফারুক আরটিএনএন- কে বলেন, ‘ছোট বেলার ঈদ হচ্ছে অনেক মজার। বাবা নতুন জামা কিনে দিতেন, হাত ধরে ঈদগাঁতে নিয়ে যেতেন। আজ বাবা নেই, রাজনীতি করতে গিয়ে শেষবারের মত মাকেও দেখতে পারেনি।’
বিএনপির এই প্রচার সম্পাদক বলেন, ‘ছোট বেলার ঈদের চেয়ে এখনকার ঈদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাবা-মা ছাড়া ঈদ কাটানো সত্যিই কষ্টের। আমার মতে, ছোট বেলার ঈদই সেরা।’
বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ও যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া  জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব ঢাকায় ঈদ করবেন বলে জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ)
নির্বাচন সামনে রেখে দলের বেশিরভাগ নেতাই নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করার পরিকল্পনা করেছেন। নেতাদের অনেকেই ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় পৌঁছেছেন। তারা নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে এলাকার খবর নিচ্ছেন।
ঈদ উদযাপনে দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ শনিবার গ্রামের বাড়ি রংপুরে চলে গেছেন এবং গ্রামে গিয়েই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আগামীতে তার দলের অবস্থান কি হবে এ বিষয়ে জানিয়েছেন।
দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার তার নির্বাচনী এলাকা বরিশালের বাকেরগঞ্জে ঈদ করবেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের তার নির্বাচনী এলাকা রংপুরে করবেন।
এরশাদ রংপুরে ঈদ করলেও তার স্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ এবার ঈদ করবেন তার নিজ নির্বাচনী এলাকা ও বাবার বাড়ি ময়মনসিংহে। নির্বাচন সামনে রেখে বাড়তি প্রচারণার জন্যই তারা দুজনই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর, গোলাম মো. রাজু, কাজী ফিরোজ রশীদসহ বেশিরভাগ নেতা ঈদ তাদের নির্বাচনী এলাকায় করছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button