ব্রিটেনে নির্বিঘ্নে চলছে গাঁজার চাষ
রাশিদ রিয়াজ: প্রায় ৫ লাখ বাড়িতে গাঁজার চাষ চলছে নির্বিঘ্নে। ব্রিটেনের লন্ডন শহরের আশে পাশে ছাড়াও দেশটির বিভিন্ন স্থানে অনেক বাড়ি ঘর এখন হয়ে উঠেছে নিরাপদ মারিজুয়ানা কারাখানা। গাঁজা চাষ থেকে শুরু করে এর প্রক্রিয়াজাতের নিয়ন্ত্রণের রিমোট কন্ট্রোল গডফাদারদের হাতে। তাই পুলিশ কখনো হানা দিতে পারে আর না দিলে এভাবেই গাঁজার চাষ বাড়তে থাকে গার্ডেনিং প্রিয় ব্রিটিশদের ঘরে ঘরে।
কোনো ব্যক্তি তার ঘরের ভেতরে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বা ছাদে অর্থাৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে মাত্র ৯টি গাঁজা গাছের চাষ করতে পারলে এ থেকে তার আয় হয় বছরে কম করে হলেও ৪০ হাজার পাউন্ড। মন্দায়, বেকারত্বে তাই অনেক ব্রিটিশ তরুণ তরুণী ঝুঁকে পড়ছে গাঁজা চাষে। বয়স্ক ব্যক্তিরাও আছেন এ তালিকায়। ধরা খেলে জেল খাঁটতে হয়। তাই আরো কঠিন শাস্তির কথা চিন্তা করছে আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠান।
কোকেইন বা হিরোইন চাষের চেয়ে গাঁজা চাষে শাস্তি কম। তাই তদন্তে দেখা গেছে বাগানের পাতাবাহারের চেয়ে একটি গাঁজা গাছ অনেক প্রিয় হয়ে উঠছে অনেকের কাছে। যারা ধূমপানে আর মজা পাচ্ছেন না তারা গাঁজা সেবন শুরু করেছেন এবং তাদের ৮০ ভাগ সরবরাহকারি হচ্ছে এসব ঘরে গাঁজা চাষীরা। অনেকে শখ করে বা রোমাঞ্চ অনুভব করে গাঁজা চাষ করে টু পাইস ভাল কামাতে পেরে সিরিয়াস হয়েই পুরোদস্তুর এ কাজে নেমে পড়ছেন। বিভিন্ন ধরনের পথ বাৎলে দিচ্ছে তাদেরই বন্ধু বান্ধব অšত্মত কিভাবে গাছগুলোকে গোপনে বেড়ে উঠতে দিতে হয়।
২০০৮ সালে পুলিশ প্রতিমাসে গড়ে ২৫২টি গোপন গাঁজা চাষের স্থান সনাক্ত করতে পারলেও এখন এ সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫৬’তে এবং সংখ্যা বাড়ছেই। চলচ্চিত্র নির্মাতা কনর উডম্যান বলেন, এক মহিলা তাকে জানিয়েছেন, তিনি তার বেডরুমের জন্যে কর যা দিতে হয় তার বদলে সেখানে গাঁজা চাষ করে কামাচ্ছেন ঢের। ইন্ডেপেনডেন্ট ড্রাগ মনিটরিং ইউনিট বলছে এভাবে লুকিয়ে গাঁজা চাষ হচ্ছে অšত্মত ৫ লাখ ৪ হাজার বাড়িতে এবং প্রতি ৪৪টির একটি বাড়িতে গাঁজা চাষ চলছে।
গাঁজা চাষের উপকরণ বেশ সহজ লভ্য। ৪শ’ পাউন্ড দিয়ে শুরু করা যায়। চারা সংগ্রহ, তাবু, পর্যাপ্ত আলো ও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা হলেই চলে। তারপর হাত পাকলে বড় আকারের ওয়্যার হাউজ ভাড়া করছেন অনেকে। তবে শুরুতে গ্যারেজ হচ্ছে সবচেয়ে আদর্শ স্থান। কারণ পরিত্যক্ত গ্যারেজ ফেলে রেখে শুধু শুধু বিদ্যুৎ বিল গুণতে চায় না কেউ।
পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট মার্ক হ্যারিসন বলেন, ১০টি বাড়িতে যদি ৩০টি গাঁজা গাছের চাষ করা হয় তাহলে বাণিজ্যিকভাবে তা লাভজনক হয়ে ওঠে। গাঁজা চাষের সময় গ্যারেজ বা ঘরের জানালা বন্ধ ও আলো নির্গত না হয় এমন পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি বদ্ধ ঘরের দেয়াল যাতে গরম না হয়ে ওঠে বা ঘনীভবনের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। বিশেষ করে একদিকে আলোর ব্যবস্থা অন্যদিকে ঘরটি থেকে গাঁজা গাছের সুবাস যাতে বের হয়ে না পড়ে এবং অচেনা আগন্তুক সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি দিতে হয়।
তবে পুলিশ এসব গাঁজা চাষের স্থান চিহ্নিত করতে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা ব্যবহার করে থাকে। যা দিয়ে বদ্ধ ঘরের ভেতরের ছবি তোলা যায়। এছাড়া শক্তিশালী বাতি ব্যবহারকারীদের প্রতি পুলিশ বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। ব্রিটেনের উত্তর পশ্চিমে গাঁজা চাষ নিয়ে প্রায়শ গুলির ঘটনা ঘটছে।
লন্ডনে গত আগস্ট মাসে পুলিশ আড়াই মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি মূল্যের গাঁজা উদ্ধার করে। এসময় গ্রেপ্তার করা হয়ে সাড়ে ৩শ’ ব্যক্তিকে। স্কটল্যানড ইয়ার্ড বলছে ৩৭টি মারিজুয়ানা কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়াও ২৭শ’ গাঁজা গাছ ধংস করা হয়। এছাড়া অভিযানে অস্ত্র ও বিপুল নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। রাস্তায় যেভাবে গাঁজা বিক্রি বাড়ছে সে জন্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড।
মাদকের বিরুদ্ধে কর্মরত প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গাঁজা ব্যবহারকারীদের সংখ্যা হাসপাতালে বাড়ছে। গত ৩ বছরে তাদের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। বিশেষ করে কিশোর কিশোরীদের গাঁজা সেবন মারত্মক কারণ এ বয়সে তাদের মানসিক বৃদ্ধি হয়। পুলিশ মনে করছে হাতে নাতে গাঁজা সেবনকারীদের ধরতে পারলে তাদের আরো বড় আকারের শাস্তি ও জরিমানা করা উচিত। সূত্র : ডেইলি মেইল