অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন

ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি নীতি বর্ণবাদী

ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েল বর্ণবাদী আচরণ করছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ইহুদি প্রধান দেশটির অভ্যন্তরে ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে তাদের নীতি, আইন, আচরণ প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের সমান বলেও উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল নিজেদের স্বার্থে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নির্যাতন ও কর্তৃত্বের একটি প্রাতিষ্ঠানিক শাসন বজায় রেখেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বর্ণবাদকে মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির সরকার। তারা প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যানও করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখমাত্র অ্যামনেস্টিকে দোষারোপ করে বলেন, ইসরায়েল বিদ্বেষের জন্য পরিচিত সংগঠনগুলোর মিথ্যা, অসঙ্গিপূর্ণ ও ভিত্তিহীন দাবিগুলোই অ্যামনেস্টি তাদের প্রতিবেদনে নতুন করে উল্লেখ করেছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সরকার জানায়, ইহুদি জাতি হিসেবে রাষ্ট্রটির টিকে থাকার অধিকারকে অস্বীকার করা হয়েছে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে। এর কঠোর ভাষা ও ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েলকে খারাপভাবে উপস্থাপন করা এবং ইহুদি-বিদ্বেষের আগুনে ঘি ঢালার জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির প্রকাশিক প্রতিবেদনটিকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনটিতে নিষ্ঠুর বর্ণবাদ, বর্জন, নিপীড়ন, ঔপনিবেশিকতা, বর্ণবাদ এবং ফিলিস্তিনি জনগণ যেসব অত্যাচার সহ্য করেছে তা মুছে ফেলার হীন প্রচেষ্টার কঠিন বাস্তবতার বিস্তারিত বিবরণ এতে উঠে এসেছে বলে উল্লেখ করে এ মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলের প্রায় সাড়ে ৯৪ লাখ জনগণের ২০ শতাংশের বেশি আরব জনগোষ্ঠীর, যাদের বেশিরভাগ নিজেদের ফিলিস্তিনি বলে পরিচয় দেয়। ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। আরো প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকায় বসবাস করেন। ইসরায়েল ২০০৫ সালে গাজার দখল ছেড়ে দিলেও জাতিসংঘ এখনো অঞ্চলটিকে ইসরায়েলের অধিকৃত ভূমি বলে বিবেচনা করে।
পশ্চিম তীরের বেশির ভাগ ফিলিস্তিনিই নিজেদের কর্তৃপক্ষের শাসন মেনে চলে। অন্যদিকে গাজায় বসবাসরহ ফিলিস্তিনিরা মিলিশিয়া গোষ্ঠী হামাসের শাসন মেনে চলে। পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমের প্রায় ১৪০টি বসতিতে ছয় লাখের বেশি ইহুদি বসবাস করেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বসতি অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হলেও ইসরায়েল তা মানে না।
সরকারি নীতি অনুযায়ী, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ইসরালের প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন বলছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের নিম্ন শ্রেণীর অ-ইহুদি হিসেবে বিবেচনা করে এবং তাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে।
তিনটি প্রধান আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বর্ণবৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালের বর্ণবাদী অপরাধ দমন ও শাস্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন। ওই কনভেনশনে একটি জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের দ্বারা অন্য কোন জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সংঘটিত অমানবিক কাজ এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের নিপীড়ন করাকে বর্ণবৈষম্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button