অব্যাহত লোকসানে বিমান
বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ৫ বছরেও লাভের মুখ দেখতে পারেনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বরং অব্যাহত লোকসানের জাতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে এ সংস্থাটি।
কিন্তু আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ১৫.৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশ বিমানকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাভজনক করা হবে। বেসরকারী বিমান পরিবহনকে আরো উৎসাহিত করা হবে।’
এছাড়াও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংযোগস্থল হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে সর্বাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে বলেও নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল।
কিন্তু এই সরকারের আমলে বিমান ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৮০ কোটি, ১০-১১ অর্থবছরে ১৯০ কোটি, ১১-১২ অর্থবছরে ৬০৬ কোটি, ১২-১৩ অর্থবছরে ১৯৩ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।
শুধু তাই নয় আগামী অর্থবছরেও বিমান লোকসান দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসনামলে বিমান যথাক্রমে ৬ এবং ১৫ কোটি টাকা লাভ করেছিল।
বিমানের অব্যাহত লোকসান সম্পর্কে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘২০১১-১২ সালে বিমানের লোকসান ছিল ৬শ’ কোটি টাকা। ১২-১৩ অর্থবছরে তার থেকে অনেক কমে এসেছে। ১৩-১৪ অর্থবছরে লস থাকবে না। আর ২০১৫ সাল থেকেই বিমান লাভের মুখ দেখবে।’
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বিমানের জন্ম। ‘৭২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এ সংস্থায় লোকসান হয় ১১৮২.৫৫ কোটি টাকা। ‘০৯-১০ এবং ‘১০-’১১ অর্থ বছরে লোকসান দিয়েছে ২৭০ কোটি টাকা। তবে বিমান ৯৪ থেকে ৯৯ এবং ০৮ ও ০৯ সালে সামান্য লাভও করেছিল। বাকী সব বছরই লোকসান গুনেছে এ সংস্থাটি।
অব্যাহত এ লোকসানের বোঝা রুখতে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাকে কোম্পানিতে রুপান্তর করা হয় ৫ বছর আগে। কোম্পানি হওয়ার পর সংস্থাটি ২ বছর লাভ করলেও বর্তমানে লোকসানের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অর্থ সংকটের কারণে বিমানের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রতিযোগিতামূলক অ্যাভিয়েশন বাণিজ্যে টিকে থাকা এবং বিমানকে আরো লাভজনক ও গতিশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিমান কর্পোরেশনকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রুপান্তর করা হয় ২০০৭ সালে। এছাড়া বিমানের কাছে সরকারের বিভিন্ন পাওনা ইক্যুইটিতে রুপান্তর করা হয় এবং মূল ঋণ ও সুদ পরিশোধের দায় থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
কোম্পানিটি প্রথম ও দ্বিতীয় বছর যথাক্রমে ৫.৯১ ও ১৫.৫৭ কোটি টাকা লাভ করে। এরপরই চলতে থাকে লোকসানের বোঝা। যা এখনো অব্যাহত আছে।
শুরুতে বিমানের রুট ছিল ২৬টি। বর্তমানে তা কমিয়ে ১৬টি রুট করা হয়েছে। এই ১৬ রুটেও আবার লোকসানের দোহাই দিয়ে ফ্লাইট সিডিউল কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।
আর বিমানের এ নীতির সুযোগে বিদেশী এয়ালাইন্সগুলো কাজে লাগাচ্ছে। অর্থাৎ বিমানের রুট ও ফ্লাইট সিডিউল যত কমছে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো তত বাড়াচ্ছে। ফলে দিন দিন বিমানের আকাশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি নতুন করে বিমানের দু’একটি রুট বাড়ানো হয়েছে।
বিমানের অব্যাহত লোকসানের কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অপ্রয়োজনীয় জনবল ছাটাই করা হয়েছিল। ওই সরকারের মেয়াদ শেষ হলে বর্তমান সরকার তাদের আন্তর্জাতিক স্কেল দিয়ে আবার নিয়োগ দেয়। ফলে কোনো ভাবেই বিমানকে লাভের মুখ দেখানো যাচ্ছে না।
সুত্র আরো জানায়, দিন দিন জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি, বিমানের স্বল্পতা এবং অধিক তেলখেকো পুরনো বিমানের কারনেও লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।