যুক্তরাজ্যে আরো ৬৯টি শাখা বন্ধ করছে এইচএসবিসি
একের পর এক শাখা বন্ধ করছে বৈশ্বিক বৃহত্তম ব্যাংকগুলো। বাদ দেয়া হচ্ছে কম মুনাফার জোগান দেয়া শাখাগুলোকে। কভিডের লোকসান কাটিয়ে মুনাফা বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল পরিষেবার বাইরে থাকা মানুষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ছিঁটকে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যদিও ব্যাংকগুলো এটিকে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে স্থানান্তর হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। কভিড-১৯ মহামারী এ স্থানান্তরকে ত্বরান্বিত করছে বলেও ভাষ্য ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদের। এমন দাবি করে এবার যুক্তরাজ্যে আরো ৬৯টি শাখা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে এইচএসবিসি। গত বছরও ৮২টি শাখা বন্ধ করেছে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংকটি।
গ্রাহক অভ্যাস পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে শাখা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ ব্যাংকটি। এর আগে অন্য ব্রিটিশ ব্যাংক লয়েডস ব্যাংকিং গ্রুপ, হ্যালিফ্যাক্স ও টিএসবি একই পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে এ পদক্ষেপের কারণে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ভোক্তাদের চেয়ে মুনাফাকে অগ্রাধিকার দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বন্ধের সংখ্যা আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং লাখ লাখ মানুষ এখনো সম্পূর্ণ ডিজিটাল হতে প্রস্তুত বা সক্ষম নয়। গত বছরের শুরুর দিকে এইচএসবিসির ৫৯৩টি শাখা ছিল। এ সংখ্যা ৪৪১টিতে নামিয়ে আনা হবে। এর মধ্যে ৯৬টিকে সম্পূর্ণ পরিষেবা আউটলেট হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ শাখাগুলো বিস্তৃত পরিসরে গ্রাহক সেবা দেবে। আগামী জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে বন্ধের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
বন্ধের ঘোষণা দেয়া শাখাগুলো স্কটিশ হাইল্যান্ডের ইনভারনেস থেকে কর্নওয়ালের ফালমাউথ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিউ বন্ড স্ট্রিট, মুরগেট, অ্যাঞ্জেল ইসলিংটন ও সাউথ কেনসিংটনের গ্লোচেস্টার রোডের মতো লন্ডনের হাই-প্রোফাইল স্থানের শাখাগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মহামারীতে এ শাখাগুলোয় লোকসমাগম কমে গেছে। কভিডজনিত বিধিনিষেধ কর্মীদেরও বাসা থেকে কাজে উৎসাহিত করেছে।
এইচএসবিসি বলেছে, মোবাইল ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের জন্য ক্রমবর্ধমান পছন্দের প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেটওয়ার্ককে পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্যাংকটি একজন মুখপাত্র বলেন, অর্ধেকেরও কম গ্রাহক এখন সক্রিয়ভাবে শাখা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন। ২০১৭ সাল থেকে শাখাগুলোয় গড় জনসমাগম ৫০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। এ বন্ধের ফলে ব্রিটিশ ভোক্তাদের সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে কথা বলার জন্য গড়ে চার মাইল দূরে যেতে হবে।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্রিটিশ কোম্পানি হুইস?-এর অর্থবিষয়ক সম্পাদক জেনি রস বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের শাখা বন্ধ হওয়া আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখনো অনেক গ্রাহক দৈনন্দিন কাজকর্ম ও মুখোমুখি পরিষেবার জন্য ব্যাংকের শাখাগুলোর ওপর নির্ভর করেন। এ বন্ধের সিদ্ধান্তে তারা উদ্বিগ্ন হবেন। মহামারী চলাকালীন একাধিক ব্যাংক শাখা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
আর্থিক পরিষেবা সংস্থাগুলো জোর দিয়ে বলেছে, ভোক্তারা অনলাইনে স্থানান্তর হওয়ায় কাউন্টার পরিষেবার আকার ছোট করে আনা হচ্ছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ খুচরা ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান টিএসবি ৭০টি শাখা বন্ধের ঘোষণা দেয়। গত অক্টোবরে লয়েডস গ্রুপ আরো ৪৮টি শাখা এবং সেপ্টেম্বরে ভার্জিন মানি ৩১টি শাখা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। জেনি রস বলেন, ভোক্তারা যত দিন পর্যন্ত নগদ লেনদেন চালিয়ে যাবেন তত দিন পর্যন্ত তাদের সরাসরি পরিষেবা দেয়া ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব।