বদরুল- মীরু-আনছার পরিষদের ২১ প্রার্থীকে নির্বাচিত করা আহবান
বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের নির্বাচন ১২ জুন
প্রায় ১২ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকার তহবিল-সমৃদ্ধ শিক্ষামুলক সংগঠন প্রবাসী বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১২ জুন রোববার পূর্ব লন্ডনের ওয়েলক্লোজ স্ট্রিটের এনজাইন ইয়ুথ ক্লাবে। নির্বাচনে বদরুল-মীরু-আনছার পরিষদ (ঘর প্রতীক) এবং সাদ-নজমুল-মুজিবুর পরিষদ (সানফ্লাওয়ার প্রতীক) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২৩ মে সোমবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের রিজেন্ট লেইক ব্যানকুয়েটিং হলে বদরুল- মীরু-আনছার পরিষদের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সংস্কৃতিকর্মী আমিনা আলীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ ফজল উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ বদরুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সেক্রেটারি প্রার্থী মিজানুর রহমান মীরু।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে আমরা যে পরিষদ নিয়ে ভোটারদের মূল্যবান ভোট প্রত্যাশা করছি তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে এবং আমাদের পরিষদের অঙ্গীকার অবগত করতে আজ আপনাদের সামনে এসেছি। আমাদের পরিষদের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা মূলত প্রাধান্য দিয়েছি প্রার্থীদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সততাকে। একইসাথে আমাদের প্রার্থীরা বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের যেন প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । আর এসব প্রার্থীরা বসবাস করেন লন্ডন, বার্মিংহাম, ওল্ডহাম, ম্যানচেস্টার, নটিংহাম, লুটনসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে। এছাড়া নতুন প্রজন্ম যেন তাদের শেকড়ের সাথে আরো সম্পৃক্ত হতে পারে সেদিকেও অগ্রাধিকার দিয়ে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে । নবীণ ও প্রবীণের এই মেলাবন্ধন সংগঠনের কাঙ্খিত উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
তিনি প্রবাসী বালাগঞ্জ- ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে তাদের প্যানেল যেসব জনগুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার নিয়ে ভোটারদের ভোট প্রার্থনা করছে তা তুলে ধরেন । সেগুলো হলো: (১) জরুরী ভিত্তিতে ট্রাস্টকে বাংলাদেশে নিবন্ধনের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা , (২) বিভিন্ন ইউনিয়নের স্কুল ও কলেজের মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদানের প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করা, (৩) মহিলাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহন করা, (৪) বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী চালু করা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিষদে যেমন রয়েছে সুপরিচিত আলেমে দ্বীন তেমনি রয়েছে ব্রিটেনে কর্মরত আইনজীবী, কবি, সাহিত্যিক, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী। আমাদের বিশ্বাস, যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা ভোটাররা মূল্যায়ন করবেন। এছাড়া সংগঠনের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের পরিষদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা ভোটারদের সদয় বিবেচনার জন্য সকলের কাছে তুলে ধরছি। এরপর তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী বদরুল ইসলাম প্রবাসী বালাগঞ্জ- ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক সফল সাধারণ সম্পাদক এবং চেয়ারপার্সন। একজন দক্ষ সংগঠক ও নিবেদিতপ্রান সমাজকর্মী বদরুল ইসলাম। দেশের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের আজীবন সদস্য এবং অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষানুরাগী সদস্য তিনি। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন । অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ বদরুল ইসলাম ঘর মার্কায় প্রবাসী বালাগঞ্জ- ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মূল্যবান রায় প্রত্যাশী।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মিজানুর রহমান মীরু একজন কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক হিসেবে ইতোমধ্যে নিজের কাজের প্রমান দিয়েছেন। তিনি সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আবারো তিনি সংগঠনকে এগিয়ে নিতে এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কোষাধ্যক্ষ প্রার্থী মোহাম্মদ আনছার মিয়া একজন সফল ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক। তিনি বর্তমানে সংগঠনের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনের ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করে ইতোমধ্যে তিনি নিজের সাংগঠনিক যোগ্যতার প্রমান দিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদকের মতো তিনিও অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সংগঠনের আর্থিক স্বচ্ছতা সংরক্ষনে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর পৈতৃক ভিটা বালাগঞ্জ উপজেলার (বর্তমানে ওসমানীনগর উপজেলা) দয়ামীরে। দেশের এই সূর্য সন্তানের এলাকায় আমাদের মাতৃভূমি হওয়ায় আমরা গর্ববোধ করি। তাই এই এলাকার উন্নয়নে আমাদের উচিত দলমত নির্বিশেষে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করা। প্রবাসী বালাগঞ্জ- ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে বদরুল -মীরু -আনছার পরিষদে ঘর মার্কায় ভোট দিয়ে সুষ্ঠুভাবে এলাকার উন্নয়নে আমরা যেনো দায়িত্ব পালন করতে পারি- এই রায় ও দোয়া প্রত্যাশী।
সংবাদ সম্মেলনে ২১ সদস্য বিশিষ্ট প্যানেলকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। প্রার্থীরা হলেন: মোঃ বদরুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, মোঃ ফজল উদ্দিন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী, মোঃ আব্দুল বাছিত সহ সভাপতি প্রার্থী, মোঃ বাহাউদ্দিন সহ সভাপতি প্রার্থী, মিজানুর রহমান মীরু সেক্রেটারি প্রার্থী, রুহেল আহমেদ, সহ সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী, শিবাক আহমেদ সহসাধারণ সম্পাদক প্রার্থী, মোহাম্মদ আনছার মিয়া কোষাধ্যক্ষ প্রার্থী, বাবুল আহমেদ কামালী সহ-কোষাধ্যক্ষ, আছাওর আলী মেম্বারশীপ সেক্রেটারী প্রার্থী, মোঃ আলিম আল রাজী জামান সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী, জামান আহমদ প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক পদপ্রার্থী, মোঃ আলী হোসেন দপ্তর সম্পাদক প্রার্থী ও রওশন আরা চৌধুরী মহিলা সেক্রেটারী প্রার্থী।
নির্বাহী সদস্যপদে প্রার্থী সর্বজনাব আলহাজ মওলানা মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, জাকির হোসেন, আসক আলী, মতিউর রহমান, বাবলা আহমদ লেবু , মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ও নূর মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মাসুদ আহমদ, কবির উদ্দিন, আব্দুল গফুর ও রহিমা খাতুন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানান, সিলেটের বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর এলাকার শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে এলাকার যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা মিলে ১৯৯১ সালে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এখন এই সংগঠনের ট্রাষ্টি সংখ্যা ৩৮১০ জন। এই সংগঠনের নামে বাংলাদেশের তিনটি ব্যাংকে প্রায় ১২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা মুলধন হিসেবে জমা আছে । এই সঞ্চয় থেকে বছরে মুনাফা আসে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। এই টাকা থেকেই প্রতি বছর এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি প্রদান করা হয়। দুই উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে এই বৃত্তি প্রদান করা হয়। ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে একাদ্বশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি শিক্ষার্থীকে ৪ হাজার টাকা করে এবং ডিগ্রী পর্যায়ের শিক্ষার্থীকে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৩০ বছরে কমপক্ষে ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করেছেন প্রবাসী বালাগঞ্জ-ওসমানী নগর এডুকেশন ট্রাস্ট। এলাকায় শিক্ষার প্রসারে এই সংগঠন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই সংগঠন যুক্তরাজ্যের কমিউনিটি সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং এর তহবিলে সঞ্চয়ের পরিমানও সবার চেয়ে বেশি। এই সংগঠনকে অনুকরণ করে যুক্তরাজ্যে আরো অনেক এডুকেশন ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সংগঠনে নির্বাচিত হয়ে কাজ করা অত্যন্ত মর্যাদার।