সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে ব্রিটিশ তরুণরাও

Syriaসিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে ‘জিহাদ’ চালিয়ে যাচ্ছেন বহু বিদেশি ‘মুজাহিদ’। তাঁদের লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন ঘটানো। এটিকে তাঁরা তাঁদের ইমানি দায়িত্ব বলে মনে করছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু ব্রিটিশ তরুণও আছেন।
ব্রিটেনের উন্নত ও আয়েশি জীবনযাপন ছেড়ে সিরিয়ার মাটিতে লড়াইরত এই ব্রিটিশ নাগরিকদের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভ।
প্রশ্ন উঠেছে, পশ্চিমা উন্নত জীবন পায়ে ঠেলে অন্য একটি দেশে লড়াই করতে যাওয়া এই তরুণেরা আসলে কারা? তাঁরা সেখানে গেলেন কেমন করে? তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য কী? তাঁরা কি যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তার জন্য আসলেই কোনো হুমকি?
এমআই ফাইভ বলেছে, সিরিয়ায় বর্তমানে শ দুয়েক ব্রিটিশ নাগরিক আসাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। সিরিয়ায় যত সংখ্যক বিদেশি লড়াই করছেন, তার প্রায় ১০ শতাংশই যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে যাওয়া। এ ছাড়া বেশির ভাগ  বিদেশি বিদ্রোহীর মধ্যে সৌদি আরব, তিউনিসিয়া ও লিবিয়া থেকে যাওয়া লোকজন রয়েছে।
বিবিসির অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, তুরস্কের সীমান্তবর্তী আতমা নামক এলাকায় যুক্তরাজ্য থেকে যাওয়া অন্তত ২০ জন তরুণের একটি দল আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
তাঁদের মধ্যে এক তরুণ নিজেকে আবু মুহাদজার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেছেন, তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তাঁর পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত। পরিবারের সবাই জানেন তিনি কোথায় কী করছেন। মুহাদজার বলেন, অন্য সব মা-বাবার মতো তাঁর মা-বাবাও তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
বিবিসি বলেছে, তারা সিরিয়ার একজন মুসলমান সাংবাদিকের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন জিহাদির সাক্ষাত্কার নিয়েছে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ওই জিহাদিরা টেলিফোন বা স্কাইপে বিবিসির সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি। এ কারণে তাঁদের পরিচয় প্রত্যক্ষভাবে বিবিসির পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
সিরিয়ায় এসে কেন জীবন বাজি রেখে লড়াই করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আবু মুহাদজির বলেন, বেশ কিছু কারণে তিনি অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে আছে ধর্মীয় দায়বদ্ধতা। তিনি মনে করেন, মুসলিম ভূখণ্ডকে আসাদের মতো শাসকের হাত থেকে হেফাজত করা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। এ ছাড়া মানবিক দায়বোধও তাঁকে ‘জিহাদের ময়দানে’ এনেছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, লড়াই করার পাশাপাশি মানবিক সাহায্যের কাজও তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন।
লন্ডনের কিংস কলেজের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব র্যাডিক্যালাইজেশনের গবেষক শিরাজ মাহের বলেন, সিরিয়া এখন বিশ্বের তরুণ জিহাদিদের জন্য চুম্বকক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিরিয়া যেন তাঁদের আকর্ষণ করছে। যাঁরাই ‘ইসলাম রক্ষার জিহাদে’ যোগ দিয়ে আত্মোত্সর্গের কথা চিন্তা করছেন, সিরিয়া তাঁদের কাছে আদর্শ ক্ষেত্র বলে মনে হচ্ছে।
মাহের বলেন, মজার ব্যাপার হলো, উত্তর আফ্রিকার আল কায়েদা ইন দ্য ইসলামিক মাগরিব কিংবা আল শাবাব সংগঠনগুলো বিদেশি জিহাদিদের একচেটিয়া সিরিয়াগামিতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা ইতিমধ্যেই বিদেশি জিহাদিদের বলেছে, ‘আমাদের কথা ভুলে যাবেন না। আমাদেরও বিদেশি যোদ্ধাদের প্রয়োজন আছে। সবাই সিরিয়ায় যাবেন না।’
শিরাজ মাহের বলেছেন, যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সূত্র থেকে তিনি জেনেছেন, ব্রিটিশ জিহাদিদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিপ্রাপ্ত; তাঁদের বয়স ২০ বছরের কোঠায় এবং তাঁরা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মুসলমান। তিনি মনে করেন, ঠিক কতজন ব্রিটিশ নাগরিক সিরিয়ায় লড়াই করছেন, সে বিষয়টিই এখন ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে কর্মরত সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা রিচার্ড ব্যারেট বলেছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সিরিয়ায় এখন আসাদবিরোধী যোদ্ধাদের মধ্যে বিদেশিরাই সংখ্যায় বেশি। তিনি বলেন, স্থানীয় বিদ্রোহী গ্রুপগুলো বিদেশিদের উপস্থিতি নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত হয়ে পড়েছে। তাদের আশঙ্কা, বিদেশ থেকে আসা জিহাদিরা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আফগানিস্তান কিংবা সোমালিয়ায় ঢোকা যতটা কঠিন, সেই তুলনায় তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় ঢোকা অনেকটাই সহজ।
বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদেশিদের কেউ কেউ সিরিয়ায় গেছেন নিজের খরচে, নিজের চেষ্টায়। অনেকে আবার সংগঠিত হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে গেছেন।
ব্রিটেনের সঙ্গে পশ্চিমা অন্য দেশগুলোর রেল যোগাযোগ আছে। এসব দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে জর্ডান, লেবানন ও তুরস্কের লিঙ্কপয়েন্ট আছে। এসব রুট ব্যবহার করে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে তরুণেরা সিরিয়ায় ঢুকছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button