জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি
যুক্তরাজ্যে ব্যাংক গ্রাহকদের ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে
যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম বন্ধকি ঋণদাতা হিসেবে পরিচিত লয়েডস ব্যাংকিং গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে লয়েডস ব্যাংকে ঋণের আবেদনের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ শতাংশ। কারণ হিসেবে ক্রমবর্ধমান জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
লয়েডস ব্যাংকের একটি গবেষণা বলছে, যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠানটির ২ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে চিন্তিত। সেই সঙ্গে এ পরিস্থিতি তাদের সঞ্চয়ের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন তারা।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চার্লি নান বলেন, ঋণ নেয়ার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা মোকাবেলা করতে চাইছেন গ্রাহকরা। এ মুহূর্তে ব্যাংকটির প্রতি ১০ গ্রাহকের মধ্যে আটজনের চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবে গড়ে ৫০০ পাউন্ডের কম অর্থ সঞ্চিত রয়েছে।
ব্যাংকটির গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ২০ শতাংশ গ্রাহক বাড়তি খরচ কমিয়ে দিয়েছেন যেন প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো কেনার মতো অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন।
এ বিষয়ে চার্লি নান বলেন, গ্রাহকরা চিন্তিত। আর বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা ভাবলে তাদের আসলে চিন্তিত হওয়াটা স্বাভাবিক। দেখা গিয়েছে, যুক্তরাজ্যের ৮০ শতাংশ গ্রাহকের ব্যাংকের চলতি বা সঞ্চয়ী হিসাবে ৫০০ পাউন্ডের কম অর্থ রয়েছে। এমনকি মাত্র ১ শতাংশ গ্রাহক তাদের নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে পারছেন। ঋণ নেয়ার জন্য গ্রাহকের সংখ্যা বাড়লেও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন তারা।
গত মে মাসে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি। সে সময় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। একটি পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছরের শেষাংশে এ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ শতাংশ হতে পারে। কারণ হিসেবে জ্বালানি, খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামালের বাড়তি দামকেই দায়ী করা হচ্ছে।
লয়েডস ব্যাংক বলছে, এরই মধ্যে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যয় আঁটসাঁট করার প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। ১০ লাখের বেশি মানুষ শরীরচর্চাকেন্দ্রের সদস্যপদ এবং ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলোর নিবন্ধন বাতিল করেছেন। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গত মাসে ব্যাংকটির ৬৪ হাজার কর্মীকে ১ হাজার পাউন্ড করে বাড়তি অর্থ প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়েছে।
চার্লি নান বলেন, লয়েডস ব্যাংকের গ্রাহকরা পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। তারা দেশের অর্থনীতি নিয়েও চিন্তিত। নান সতর্ক করে বলেন যে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হতে পারে। আমার মনে হয়, সমষ্টিগতভাবে আমরা অত্যন্ত নেতিবাচক পরিস্থিতির কথা ভাবছি।
এ কর্মকর্তা আরো বলেন, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে শক্তিশালী অনেক বিষয় রয়েছে। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহক অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী ও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন। যারা এখনো অর্থ ব্যয় করছেন, ভোগ করছেন এবং চাহিদা তৈরি করছেন। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তাদের চাহিদার জায়গাগুলো নির্ধারণ করে সে খাতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। সে হিসেবে পর্যটন একটি ভালো খাত হতে পারে। কারণ দেখা গিয়েছে যে ছুটির দিনে পর্যটন খাতে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিল দেয়ার পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৩০০ শতাংশ বেড়েছে।