ধীরে ধীরে কোমায় চলে যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার
ধীরে ধীরে কোমায় চলে যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার? এমন পরিস্থতিতে বাজারকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র অর্থাৎ আইসিইউতে হস্তান্তর করে সরকারের তত্ত্ববধানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব নিলে কোমার ঝুঁকি থেকে বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাদের মতে, শেয়ারবাজারের সর্বশেষ ভরসাস্থল হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক দূরদর্শিতায় পরিচয় দিলে নিভে যাওয়া প্রাণে আবারো স্পন্দন জেগে উঠতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারব্যবসা করেন এমন কয়েকজন বিনিয়োগকারী এ বিষয়ে জানান, বিনিয়োগকারীদের সহায়তার উপর ব্যাংকগুলোর পোদ্দারি চলে। যে সব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ২০ থেকে ৪০ কোটি টাকা ছিল শেয়ারবাজার থেকে সেগুলো শত শত কোটি টাকা তুলে নিয়ে হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। আজ শেয়ারবাজারে চরম সংকটপূর্ণ মুহূর্তে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। এ ধরনের স্বার্থপরতার পিছনে মূলত দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, একটি দেশের শেয়ারবাজারের প্রাণ হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান দায়িত্বশীল রোল প্লের করলে বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসার উৎসাহ পান। কারণ, ২০০৯-১০ সালে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙ্গে পুঁজিবাজারে টাকার স্রোত আসার নজির এদেশের আপামর জনগণ ও বিনিয়োগকারীরা দেখেছেন। ২০০৯-১০ সালে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মার্জিন লোন কমানো বাড়ানোর বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল। ওই সময় ব্যাংকগুলো যে বিনিয়োগকারীর ১০০ টাকা বিনিয়োগ ছিল তাকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত লোন দিয়েছে। এতে বাজার উঠেছে পর্বতসীমায়। বিনিয়োগকারীদের পর্বতে উঠিয়ে দিয়ে ব্যাংকগুলো মই সরিয়ে ফেললে বালির বাধেঁর মতো ধসে পড়ে বাজার। আর এতে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে অগনিত বিনিয়োগকারী। ২০১০ সালে বাজারে গড়ে ট্রেড ভলিউম ছিল ১৬০০ কোটি টাকা। বর্তমানে সেই ট্রেড ভলিউম নেমে এসেছে ২০০ কোটি টাকা ঘরে। যা দেশের সকল বিনিয়োগকারীর হৃদয়ে প্রচন্ড থাক্কা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা বলতে এ বাজারে কেউ নেই বললেও ভুল হবে না।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বাজার বিভিন্ন সময়ে যেভাবে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে, এতে কারসাজিকারীরা লাভবান হয়েছে। আর বিনিয়োগকারীরা এ সময়ে তাদের শেয়ারে লোকসান কমাতে যতবারই সমন্বয় করেছে, ততবারই ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর সঙ্গে আবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। একইসঙ্গে ক্রমান্বয়ে লেনদেন কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকায় ধীরে ধীরে কোমায় চলে যাচেছ বাজার। সময় থাকতে বাজারকে বাঁচাতে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক এগিয়ে না আসলে এ দায়ভার শেয়ারবাজারের ইতিহাসের পাতায় কালো অধ্যায় হয়ে লেখা থাকবে।
এ বিষয়ে কয়েকজন বাজার বিশ্লেষক জানান, শেয়ারবাজারকে অনুৎপাদনশীল খাত বলে খাটো করার কোনো অবকাশ নেই। কারণ, এ বাজারের টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলো বিশাল পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া আরো ২০টি খাতের বিভিন্ন কোম্পানি এ বাজার থেকে ক্যাপিটাল রেইজ করে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এ অবদানের পেছনে রয়েছে এদেশেরই বিনিয়োগকারী। তাই বর্তমান বাজার পরিস্থিতি গভীর সংকটে যাওয়ার আগেই সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংককে ইতিবাচক দিক নির্দেশনা দিয়ে বাজারের স্বাভাবিক অবস্থান অটুট রাখতে কাজ করা উচিত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।