শীর্ষ রাজনীতিকদের সাথে ‘অনৈতিক তৎপরতা’
উবারের ‘নির্মম’ ব্যবসায়িক পদ্ধতির গোপন নথি ফাঁস
ফাঁস হয়ে পড়া বেশ কিছু গোপন ফাইল থেকে টেক জায়ান্ট উবারের আইন লংঘন, পুলিশের সাথে প্রতারনা, চালকদের সহিংসতাকে ব্যবহার এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের সাথে গোপন লবিইংয়ের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। বৈশ্বিক ব্যবসা সম্প্রসারণকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানটি এসব অপকর্ম করে বলে জানা গেছে। আদালতের মামলা, যৌন হয়রানির অভিযোগ এবং তথ্য-উপাত্ত বিধি লঙ্ঘনের কেলেঙ্কারির মতো সমস্যা লেগেই ছিল তাদের নামের সঙ্গে।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের কাছে নজিরবিহীনভাবে প্রকাশিত প্রায় সোয়া লাখ নথিতে সিলিকন ভ্যালি’র সবচেয়ে বিখ্যাত এক্সপোর্টসমূহের একটিতে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে নৈতিকতার দিক দিয়ে তাদের প্রশ্নবিদ্ধ তৎপরতা প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। ফাঁস হওয়া ফাইলগুলো ৫ বছরের, যখন কোম্পানীটি পরিচালিত হচ্ছিল এর সহ- প্রতিষ্ঠাতা ট্রাভিস কালানিকের মাধ্যমে। এগুলো অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম এবং বিবিসি প্যানারোমাসহ বেশ কিছুসংখ্যক মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হয়।
ট্র্যাভিস কালানিক বিশ্বের বিভিন্ন নগরীতে ক্যাব সার্ভিসের ওপর শক্তি প্রয়োগের প্রচেষ্টা চালান, যদিও তা ছিল আইন ও ট্যাক্সি নীতিমালার লংঘন।
ডাটা সূত্রে দেখা যায়, বৈশ্বিক তীব্র পাল্টা প্রতিক্রিয়াকালে উবার বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, বিলিয়নারগণ, রাষ্ট্রের উচু পর্যায়ের ব্যক্তিগণ এবং মিডিয়া ব্যারণদের সাথে কৌশলী সম্পর্ক গড়ে সমর্থন সহায়তা লাভের চেষ্টা করে। এসব নথির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ৮৩ হাজারেরও বেশী ই-মেইল, আই-মেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, যেগুলো ২০১৩ ও ২০১৭ সালের মধ্যে করা হয়। কালানিক ও তার টিম নির্বাহীদের মধ্যে এগুলো বিনিময় হয়।
উবার কর্তৃপক্ষ তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন সময় তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী জো বাইডেন, ফ্রান্সের ম্যাক্রণ, আইরিশ প্রধানমন্ত্রী এন্ডা কেনি, ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর জর্জ ওসবোর্নের সাথে বৈঠক ও যোগাযোগ করেন।
উবারের ‘নির্মম’ ব্যবসায়িক পদ্ধতিগুলো ব্যাপকভাবে জানাই ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটি তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোন পর্যন্ত হাত লম্বা করেছিল ফাইলগুলো প্রথমবারের মতো সে ব্যাপারে ধারণা দিয়েছে। ফাইলগুলো দেখায় কীভাবে ব্রাসেলসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন প্রাক্তন ইইউ ডিজিটাল কমিশনার নীলি ক্রোস তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উবারে যোগদানের জন্য আলোচনা চালাচ্ছিলেন। এর পরে তিনি গোপনে কম্পানিটির পক্ষে লবিং করেছিলেন। এতে করে সম্ভবত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছিল।
উবার বলছে, তাদের অতীতের কার্যকলাপ ‘বর্তমানের মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’। কম্পানি হিসেবে তারা এখন অতীতের চেয়ে আলাদা।