ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক সংঘর্ষে নিহত ২, আহত শতাধিক
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক চারটি সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ৩০টি বসত বাড়ি ও একটি মার্কেটের ৭-৮টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় দাঙ্গাবাজরা। পুলিশ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে ৬০ রাউন্ড টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। নিহতরা হলেন- ইসমাইল মিয়া (৪৫) ও সামসুল ইসলাম (৪০)।শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুরে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রামে ইকবাল চেয়ারম্যান ও আবদুল হাই চেয়ারম্যানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে শুক্রবার সকাল থেকে দু’দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। দুপুরের পর সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দু’দল পুরো এলাকাকে রণক্ষেত্রে পরিণত করে। সংঘর্ষে প্রতিপরে ধাড়ালো অস্ত্রের আঘাতে ইসমাইল মিয়া ও সামসুল ইসলাম নিহত হয় ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। নিহতদের লাশ সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে ঈদের দিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বেহাইর গ্রামের কালা গাজির গোষ্ঠীর একটি ছেলেকে মারধোর করে নাগর বাড়ির ছেলেরা। এর জের ধরে শুক্রবার সকালে নাগর বাড়ির পক্ষে আম্বর বাড়ি, রহমত পাড়া, আদলের বাড়িসহ ছয়টি গোষ্ঠীর কয়েকশ’ দাঙ্গাবাজ সকাল ছয়টার দিকে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে কালা গাজী গোষ্ঠীর লোকজনের উপর হামলা চালায়। সংঘর্ষ চলাকালে আলফাজের মার্কেটের ছয়টি দোকান এবং মনোর বাড়ির দু’টি দোকানসহ কালা গাজীর গোষ্ঠীর কমপে ৩০টি বসতবড়ি ব্যাপক ভাঙচুর ও বেশ কয়েকটি গরু লুট করে নিয়ে যায়। চার ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে নারীসহ কমপে ৪০ জন আহত হয়। আহতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে অর্ধশত রাউন্ড টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিপে করে। পুলিশ এসময় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয় দাঙ্গাবাজকে আটক করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ মনিরুজ্জামান পিপিএম জানান, পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছে চায়ের স্টলে রাজনৈতিক আলোচনায় বাকবিতণ্ডায় এবং প্রধান মন্ত্রীকে কুটক্তির জের ধরে জের ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় ৪০ জন আহতসহ ভাঙচুর হয় ৭-৮ টি বাড়িঘর। শুক্রবার সকালে এ সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশ জানায় এলাকার বিএনপি সমর্থক বিল্লাল মিয়ার সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থক তোফাজ্জল হোসেনের বাকবিতণ্ডার জের ধরে এ সংঘর্ষ হয়েছে।
সরাইল থানার ওসি উত্তম চক্রবর্তী জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে কবর খোঁড়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপরে হামলায় ১০ জন আহত হয়েছে। জানা গেছে, গত বুধবার রাতে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের মতি মিয়া (৭০) মারা যায়। পরদিন সকালে কবর খুঁড়তে গেলে একই গোষ্ঠীর জমসিদ মিয়া ও তার লোকজন বাধা দেয়। এর জের ধরে জমসিদ মিয়া নেতৃত্বে কবর খোঁড়ার সরঞ্জাম দিয়ে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করে। আহতদের সরাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার ভোর রাতে শহরের দাসপাড়ায় প্রতিমা বিসর্জন শেষে অজিত দাসের পুত্র অনু দাস ও ছাত্রলীগকর্মী উজ্জলের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী কমপে ১০ জনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। আহতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত সজল বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করে।