রাজার সাথে সাক্ষাৎ
আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হলেন ঋষি সুনাক
যুক্তরাজ্যে প্রথম অশ্বেতাঙ্গ, এশীয় প্রধানমন্ত্রী
প্রথা মেনে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের দরবারে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রী পদের নিয়োগপত্র নিলেন ঋষি সুনাক। লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে রাজার সঙ্গে সাক্ষাত করে নিয়োগপত্র নেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্ট সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি। এর পর প্রধানমন্ত্রীর দফতর তথা বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে দলীয় জাতীর উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন তিনি।
বক্তৃতায় ঋষি বলেন, ‘আমি দেশকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে নিয়ে যাব। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্রিটেন আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে। সেখান থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।’ সেই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে ঋষির অভিযোগ, মহামারি পরে বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে অস্থির করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন।
গত ৫ জুলাই বরিস জনসনের ইস্তফার পর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন লিজ ট্রাস। তার দেড় মাস পরেই ফের বদলে গিয়েছেন ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা। কেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে আসীন হয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দেয়া তার কর্তব্য জানিয়ে ব্রিটেনের নাগরিকদের ঋষির আশ্বাস, ‘আস্থা অর্জন করতে হয়। আমি আপনাদের আস্থা অর্জন করব।’
ব্রিটেনে নতুন সরকার গড়ার জন্য রাজা চার্লসের আমন্ত্রণ পেয়ে বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়েছিলেন ঋষি। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভিতরে নিয়ে যান রাজকীয় রক্ষী বাহিনীর (রয়্যাল গার্ডস) প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল জনি থম্বসন। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে লিজ ট্রাসের ইস্তফার পরে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের দৌড়ে একাধিক নাম উঠে এসেছিল। শেষ পর্যন্ত সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন-সহ অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা সরে দাঁড়ানোয় ভোটাভুটি ছাড়াই নির্বাচিত হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি।
গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী পদে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটাভুটিতে জয়ী ট্রাসকে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেছিলেন ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে গিয়ে রানির হাত থেকে নিয়োগপত্র নিয়েছিলেন ঋষিকে হারিয়ে টোরি নেত্রীর পদে আসীন ট্রাস। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে দেড় মাস কাটানোর পরেই ইস্তফা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, অশ্বেতাঙ্গ, এশীয়, প্রথম হিন্দু নেতা সুনাক ১৮১২ সালের পর সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী এবং সবচেয়ে দ্রুত প্রধানমন্ত্রী পদে পৌঁছানোর রেকর্ড গড়েছেন। যুক্তরাজ্যে ২০১৫ সালে প্রথম এমপি হওয়া দিয়ে শুরু তার। তারপর মাত্র সাত বছরেই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এবং একইসঙ্গে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন ঋষি সুনাক। কারণ, ইতিহাসের পাতায় একঝাঁক রেকর্ড গড়ে অনেক প্রথমের জন্ম দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ পদে বসছেন তিনি।
সুনাক এই প্রথম যুক্তরাজ্যে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসীর সন্তান, একজন অশ্বেতাঙ্গ, এশীয় এবং প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতা হিসাবে দেশ চালাবেন। এখানেই শেষ নয়, গত ২০০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে মাত্র ৪২ বছর বয়সে প্রথম যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীও হচ্ছেন তিনি।
দেশটির রাজনীতির ইতিহাসে সাম্প্রতিক সময়ে ২০১০ সালের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের চেয়েও ছোট সুনাক। ২০১০ সালে ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় তার বয়স ছিল ৪৩। আর এর আগে ১৮১২ সালে সর্বকনিষ্ঠ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন টোরি দলের রবার্ট জেনকিনসন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় সদ্য ৪২ এ পা দিয়েছিলেন তিনি।
বয়সের রেকর্ড ছাড়াও আধুনিক যুগে প্রথমবার এমপি হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে দ্রুত প্রধানমন্ত্রী পদে পৌঁছানোর রেকর্ড গড়েছেন সুনাক। যুক্তরাজ্যে গত সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে বরিস জনসন এবং লিজ ট্রাসের পর সুনাক হচ্ছেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। ইতিহাস সৃষ্টি করে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবেও ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশ করছেন তিনি।