বর্ণবাদ ও বৈষম্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ
ইসলামোফোবিয়া ও তুর্কোফোবিয়া সংশ্লিষ্ট জাতিগত বিদ্বেষ ও বৈষম্য লাখ লাখ মানুষের অপরিহারযোগ্য ব্যাধি, অকাল মৃত্যু এবং জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির কারন। গত শুক্রবার প্রকাশিত এক নতুন সমীক্ষায় এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, জাতিগত বিদ্বেষ, বর্নবাদ ও বৈষম্যকরন স্বাস্থ্যের ওপর মৌলিক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। কিন্তু এ বিষয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ নির্বিকার। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবি, নীতিনির্ধারক ও গবেষকগনও এ ব্যাপারে উদাসীন। এধরনের বৈষম্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলোকে এমন জায়গায় কিংবা অব্যাহত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সীমাবদ্ধ করে রাখে, একই সঙ্গে এতে স্বাস্থ্যের অবনতি বৃদ্ধি পায় এবং চিকিৎসায় আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন হয়, অথচ এটা পাবার ক্ষমতা খর্ব করে।
সম্প্রতি মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’- এ প্রকাশিত ধারাবাহিক পর্বগুলোর একটিতে বলা হয়েছে, কীভাবে বর্নবাদী স্বাস্থ্যগত অসমতা সৃষ্টি হয় ঐতিহাসিক ব্যবস্থাপনা, ক্ষমতার কাঠামো, নিপীড়ন এবং বৈষম্যমূলক আদর্শসমূহ কর্তৃক। সমীক্ষার এক অধ্যায়ে দেখা গেছে, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ইসলামোফোবিয়া বিশ্বের বিভিন্ন অংশের জনগনের বৈচিত্র্যপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর মানুষের স্বাস্থ্য সমতাকে খর্ব ও ক্ষতিগ্রস্ত করে। অপরিণত জন্ম ও জন্মকালীন ওজন স্বল্পতা, অভ্যন্তরীন অসুস্থতা এবং আত্মমর্যাদার স্বল্পতাসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করে এগুলো। এটা সাংস্কৃতিকভাবে উপযুক্ত স্বাস্থ্য প্রাপ্তি, ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সহিংসতা এবং হেইট ক্রাইম বা ঘৃনা ছড়ানোর অপরাধ, বলপূর্বক বন্ধ্যাকরন, নির্যাতন ও নৃগোষ্ঠীগত ধর্মীয় নির্মূলকরনের জন্ম দেয়।
দ্য ল্যান্সেট- এর প্রধান সম্পাদক রিচার্ড হর্টন বলেন, বর্নবাদ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। তিনি আরো বলেন, আমাদের কাঠামোগত বর্নবাদী সমাজগুলো (পাশ্চাত্যের সাথে সম্পর্কিত) অনেক সম্প্রদায়, পরিবার ও একক ব্যক্তিগনের জন্য অনিরাপদ।
সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোগত জাতি বিদ্বেষের পরিনতির বিষয়টি তুলে ধরেছে বিভিন্ন পর্বে, যাতে বড়ো ধরনের স্বাস্থ্যগত বৈষম্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
দৈনিকে বলা হয়েছে, এশীয় (বাংলাদেশী, ভারতীয় ও পাকিস্তানী পটভূমি সম্বলিত ব্রিটেনের বাসিন্দারা) এবং কৃষ্ণাঙ্গরা ক্যান্সার নির্নয়ের পরীক্ষার জন্য শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে অতিরিক্ত ৬ সপ্তাহ বেশী অপেক্ষা করতে বাধ্য হন।
যৌথভাবে দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য ইউনিভার্সিটি অব ইগজিটার ব্রিটিশ কর্তৃক ন্যাশনাল হেলথ্ সার্ভিস (এনএইচএস) এর অপেক্ষার সময় বিশ্লেষণে এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রাইমারী কেয়ার ডাটাবেজ থেকে জানা গেছে যে, সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রোগীরা ক্যান্সার পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ৮৬ শতাংশ ক্ষেত্রে বেশী সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ সমীক্ষার ফলাফলকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ এবং ‘সম্পূর্ন অগ্রহনযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। শুক্রবারের এই সমীক্ষা পরিচালনাকারীরা এই উপসংহারে উপনীত হন যে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বর্নবাদের নেতিবাচক ফল মোকাবেলায় বর্তমান অবস্থার তুলনায় অধিকতর, গভীরতর ও সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহন করা আবশ্যক এবং অবিচারের বিষয়ে একটি অনুধাবন প্রয়োজন, স্বাস্থ্য সেবায় অসমতা হ্রাসের জন্য।