দরগাহ গোরস্তানে চিরনিদ্রায়
চলে গেলেন আজিজুল হক মানিক
দীর্ঘদিন রোগভোগের চিরস্থায়ী ঠিকানায় চলে গেলেন সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধি আজিজুল হক মানিক। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিলো ৬২ বছর।
তিনি ছিলেন একাধারে দৈনিক জালালাবাদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মর্যাদাপূর্ণ ১ নং ওয়ার্ডের দুইবারের সাবেক কাউন্সিলর, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের (কেমুসাস) সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মদন মোহন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাবেক নির্বাচত জিএস ও এবং ছাত্রজীবনে বিতর্কে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন।
শুধু কর্মজীবনে নয়, ব্যক্তিজীবনেও নিরহঙ্কার ও অমায়িক মানুষ ছিলেন আজিজুল হক মানিক। তার জীবনযাপনে ছিলো নান্দনিকতা। জীবনের প্রায় সবটুকু জুড়েই তার সৃষ্টিশীলতার ছাপ নানাভাবে ছড়িয়ে রয়েছে।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সপ্তাহখানেক আগে তাকে শামসুদ্দীন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। রাত পৌনে ২টায় তাঁর লাশ দরগা মহল্লাস্থ বাসায় নেয়া হয়। এসময় এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নানা শ্রেনীপেশার মানুষ তাকে একজনজর দেখতে ভীড় জমান বাসায়। অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে, ভাই-বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। তার বড় ছেলে নৌবাহিনীতে কর্মরত।
আজ শুক্রবার বাদ জুমআ মরহুমের নামাজে জানাজা হযরত শাহজালাল (র.) মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। তবে কক্সবাজার থেকে তার পুত্র সিলেট ফেরার পর বেলা ৩টার দিকে তাকে দাফন করা হয় দরগাহ কবরে।
আজিজুল হক মানিক ভাষা সৈনিক ও গ্রন্থাগার আন্দোলনের পথিকৃৎ, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সম্পাদক এবং মাসিক আল ইসলাহ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মুহম্মদ নুরুল হকের বড় পুত্র। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও বাংলা-উভয় বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে মদন মোহন কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনি জিএস পদে নির্বাচিত হন। আজিজুল হক মানিক ২০১৫-১৬ সেশনে কেমুসাসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া স্কুল এন্ড কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনপ্রিয় প্রভাষক ছিলেন। এছাড়া তিনি ২০১৪-১৫ সেশনে সিলেট প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দৈনিক জালালাবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন বেশ কয়েকবছর। বহুমাত্রিক প্রতিভার মেধাবী আজিজুল হক মানিক ছিলেন একজন তুখোড় বক্তাও।
২০০৩ সালে প্রথম সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন আজিজুল হক মানিক। তার এলাকা শাহজালাল (র.) মাজার ও আশপাশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারও কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
২০১০ সালে ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আজিজুল হক মানিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ রোগের চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ব্যাংকক হাসপাতালেও চিকিৎসা নেন। ঢাকার সিআরপিতেও ফিজিওথেরাপি নেন। কিন্তু সব চিকিৎসাকে ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি পাড়ি দিলেন অনন্তলোকে।
শুক্রবার বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহনে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিত্বের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান, মহানগর আমীর ফখরুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবীর, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ রেনু প্রমুখ।