সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার পূর্ণ বক্তব্য
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সোমবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তার বক্তব্যের পূর্ণ বিবরণ এখানে তুলে ধরা হলো।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আসসালামু আলাইকুম।
জাতীয় জীবনের এই ক্রান্তিকালে আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রিয় দেশবাসীর উদ্দেশে কিছু কথা বলতে চাই। আজ এমন এক সময়, যখন আমাদেরকে ঠিক করতে হবে, আমরা তারা গণতন্ত্র নাকি স্বৈরশাসনকে বেছে নেবো। দেশের অবস্থা সম্পর্কে আপনারা জানেন। গত কয়েক বছরে একের পর এক ঘটে গেছে নানান মর্মান্তিক ঘটনা। রানা প্লাজা ধ্বসে হাজারের বেশি শ্রমজীবী মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশবাসী স্তম্ভিত। এই শোচনীয় ঘটনা বিশ্ববিবেককেও নাড়িয়ে দিয়েছে। শেয়ারবাজারের নিষ্ঠুর লুণ্ঠনে ৩৩ লক্ষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে বসেছে। হলমার্ক, ডেসটিনি, ব্যাংকের তহবিল তছরুপ, পদ্মা সেতু কেলেংকারীর মতো ঘটনা কেবল কল্পনাতীত দুর্নীতিরই চিত্র নয়, বিশ্বে আমাদেরকে নানাভাবে কলংকিত করেছে। দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক দখলের চেষ্টা এবং নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হেনস্তা, সম্মানিত নাগরিকদের অসম্মান, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান ও সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের ওপর নিবর্তনের ঘটনা সমাজের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের আতংকিত করেছে। এই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইতিহাসের পৃষ্ঠা নাগরিকদের রক্তে সিক্ত হয়েছে। ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশে নিষ্ঠুর আক্রমণ, পিলখানা হত্যাযজ্ঞ, বিচারবহির্ভূত অবাধ হত্যাকাণ্ড, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, শ্রমিক নেতা আমিনুলসহ বহু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর গুম, খুন জনজীবনকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। বিচারবিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ ও নগ্ন দলীয়করণে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু হত্যাকারীরা বিচারের আওতায় আসেনি। ক্ষমতাসীনরা দ্রুত পেয়ে যান তাদের কাক্সিত রায়। খুনের মামলার আসামীরা মুক্তি পায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমায়। আইনের শাসন সুদূরপরাহত। প্রশাসন, পুলিশকে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে ব্যবহার এবং সরকারি দলের ছাত্র ও যুব শাখার সন্ত্রাসী কার্যক্রম শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সম্পদ দখল, তাদের উপসনালয়ে হামলার নৃশংস ঘটনা আমাদেরকে কলংকিত করেছে। জাতীয় ঐক্যকে করেছে বিপন্ন। এই অবস্থায় জাতীয় ঐক্যকে সংহত করা এবং জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান, পাহাড়ের মানুষ-সমতলের মানুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে মিলে আমাদেরকে গড়ে তুলতে হবে জাতীয় ঐক্য। গড়তে হবে অখ- জাতীয় সত্ত্বা। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে গণতন্ত্রের জন্য। একত্র হতে হবে আজকের অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তির জন্য। পরিবর্তনের জন্য। বাংলাদেশের মানুষ সহজাতভাবেই গণতন্ত্রপ্রিয়। গণতন্ত্রের জন্য তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এসেছে। এর জন্য আমরা গৌরব অনুভব করি। এই গণতন্ত্র রক্ষার জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ খুলে দেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সেই পথ কিভাবে রুদ্ধ করা হয়েছে আপনারা জানেন। আমি আর এখন বিস্তারিত বিবরণ দিতে চাইনা।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ, আপনারা জানেন, বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটসহ সকল বিরোধীদল ও বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। আমরা শান্তিপূর্ণ পন্থায় এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছি। মূলত: গণসংযোগ ও প্রচারাভিযানের মাধ্যমে। আমাদের সেইসব শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতেও কিভাবে বাধা দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে তা আপনারা ভালোভাবেই জানেন। তবুও আমরা শান্তি বজায় রাখতে এবং জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদী কোনো কর্মসূচিতে যাইনি। আমরা বরাবর আশা করি, সরকার জনগণের দাবির প্রতি সম্মান দেখাবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশার অনুকূলে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু তাদের অনড় অবস্থান এবং জনসাধারণ ও বিরোধীদলের প্রতি যুদ্ধংদেহী আচরণ সকলকে হতাশ করেছে। সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পটভূমিতে গত ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। সকলের আশা ছিল, এই ভাষণে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে মিল রেখে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের ব্যাপারে সুষ্পষ্ট বক্তব্য থাকবে। কিন্তু তা না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও সচেতন দেশবাসীকে হতাশ করেছে। ইতোমধ্যে ব্যক্ত প্রতিক্রিয়া থেকে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে তাঁর সরকারের উন্নয়নের যে ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে আমি সে সম্পর্কে মন্তব্য করবো না। কোন্ সরকারের আমলে দেশ কতটা এগিয়েছে ও পিছিয়েছে তা দেশবাসী ভালো জানেন। কতটা শান্তিতে, স্বস্তিতে, নিরাপত্তায় তারা আছেন, উন্নতির ফল তারা কতটা ভোগ করছেন তা’ জনগণ তাদের নিত্যদিনের জীবন-যাপন ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বুঝতে পারেন। তবে তিনি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে অতীতে ফিরে গিয়ে আমাদের সরকারের আমল নিয়ে অসত্য বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। এ সম্পর্কে আমি সংক্ষেপে কিছু কথা বলবো। আমাদের সময়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিস্তারের অভিযোগ তিনি তুলেছেন। দেশবাসী জানেন, এই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিস্তার আওয়ামী লীগের বিগত সরকারের আমলেই ঘটেছিল। যশোরে উদীচীর গানের আসরে, রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে, পল্টনে সিপিবির জনসভাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে এবং খুলনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপসনালয়ে, বানিয়ারচরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের গীর্জায় জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলায় বহু নিরাপরাধ মানুষ জীবন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিজের জেলা গোপালগঞ্জে বিপুল আকৃতির শক্তিশালী বোমা পাওয়ার ঘটনা তাঁর আমলেই ঘটেছিল। কোনো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। বরং প্রকৃত সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের আড়াল করে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও দায়িত্বশীল নেতাদের গ্রেফতার করে হেনস্তা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে সৃষ্ট এই জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস আমাদের সরকারের আমলেও অব্যাহত ছিল। তবে আমরা জঙ্গীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হই। তাদের সংগঠন ও তৎপরতা নিষিদ্ধ করি। শীর্ষ জঙ্গীনেতাদের গ্রেফতার ও তাদের বিচারের ব্যবস্থা করি। আমাদের সরকারের আমলেই শীর্ষ জঙ্গীদের বিচারে মৃত্যুদ- হয়, পরে তা কার্যকর করা হয়েছে। আমাদের সর্বাত্মক প্রয়াসে জঙ্গীবাদের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ ভেঙে দেয়া সম্ভব হয়। আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গঠন করি। এই বাহিনী ব্যাপক সাফল্য ও সুনাম অর্জন করে। র্যাবকে আমরা কখনো বিরোধী দলের কর্মসূচি দমনের কাজে অথবা অন্য কোনো রাজনৈতিক বা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করিনি। আমরা এই দমন অভিযানের পাশাপাশি মুসলিম প্রধান এই দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনমতকে সংগঠিত করার জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আলেম সমাজকেও কাজে লাগাই। এতে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ মানুষেরাও সোচ্চার হয়ে উঠেন। অপর পক্ষে শান্তিপ্রিয় ধর্মীয় সংগঠন ও ধর্মভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জঙ্গীবাদকে একাকার করে দেখার ভুল নীতি গ্রহণের কারণে আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে সমাজে উত্তেজনা ও সংঘাত বেড়েছে। এতে করে জঙ্গীবাদ বিরোধী কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে বাংলাদেশ এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমাদের সরকারের আমলে আমরাই এর সূচনা করেছি। আগামীতে এ লড়াই কেবল অব্যাহতই থাকবে না, সন্ত্রাস বিরোধী আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে অন্যান্য দেশ ও সংস্থার সঙ্গে মিলে এই সহযোগিতা আরো বাড়াবার উদ্যোগ আমরা নেব। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ শান্তি ও স্থিতিশীলতার শত্রু। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে ব্যাহত করে। সর্বোপরি, এই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ আমাদের জাতীয় স্বার্থকে বিপন্ন করে, আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম পবিত্র ইসলাম ও মুসলমানদের সুনাম ক্ষুন্ন করে। আন্তর্দেশীয় এই অপরাধ বাংলাদেশের শুধু নয়, বিশ্বের নাগরিকদের জীবনমানকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশের মাটিকে দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অথবা অন্য কোনো ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতায় কখনো ব্যবহার করতে না দেয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সমবেত সাংবাদিকবৃন্দ, এ প্রসঙ্গে আমি আরো কিছু কথা আজ দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই। বিশ্বের প্রায় ছয়-ভাগের একভাগ মানুষ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাস করে। ভুগোল, সীমানা পেরিয়ে প্রবহমান নদ-নদী, ইতিহাস, অভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা এবং পরিচিতিবোধ আমাদেরকে সেতুবন্ধনে আবদ্ধ করেছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর কোনোটিই নিজেদেরকে সরিয়ে নিতে কিংবা বিচ্ছিন্ন রাখতে পারবে না। তাই আমরা জনগণের সমর্থনে আগামীতে সরকারে গেলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মিলে আমরা একযোগে কাজ করবো। বিদ্যমান সম্পর্ক বহাল রাখার পাশাপাশি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক খাতে সহযোগিতা বাড়াবার নতুন পথের সন্ধান আমরা করবো। আমি বিশ্বাস করি, শান্তি, স্থিতি, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা এই অঞ্চলের জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ও বিকাশের ভিত্তি। এই চারটি বিষয়কে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের অভিন্ন স্বপ্ন রূপায়নের অপরিহার্য উপাদান বলেও আমি মনে করি। একথা অস্বীকার করার জো নেই যে, এই অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নানা রকম সমস্যা রয়ে গেছে। এবং কিছু সমস্যা হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে এটা কোনো আলাদা চিত্র নয়। তবে একই সঙ্গে আমি মনে করি, কোনো সমস্যাই সমাধানের অযোগ্য নয়। পারষ্পরিক স্বার্থ ও মর্যাদা বজায় রেখে আন্তরিক সংলাপ ও অব্যাহত মত বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যকার বিরাজমান সমস্যাবলী নিরসন করতে পারি। তবে সমস্যা নিরসনের জন্য কেবল সরকারের সঙ্গে সরকারের আলোচনাই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন পারষ্পরিক আস্থা গড়ে তোলা এবং এক্ষেত্রে জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক স্থাপনকে আমরা গুরুত্ব দেব। আমরা যদি আগামীতে সরকারে যেতে পারি তাহলে আমরা কোনো দলের সরকার হবার বদলে জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি হবো। আমাদের আগামী প্রজন্ম যাতে একটি উন্নত জীবনমান পায় আমরা সে ধরণের নীতিমালার বাস্তবায়ন করবো। আমরা পশ্চাৎমুখী হবো না। আমাদের দৃষ্টি হবে সম্মুখপ্রসারী। আমরা এমন সব নীতিমালা গ্রহণ করবো যাতে সমাজের সকল স্তরে ও খাতে টেকসই উন্নয়ন ঘটতে পারে। আজকের দুনিয়া একটি বিশ্ব-সমাজে পরিণত হয়েছে। কোনো দেশ ও অঞ্চলই এখন আর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে থাকতে পারে না। তাই আমাদেরকে বিশ্ব-সমাজের শরিক হিসেবে ভূমিকা ও অবদান রাখতে হবে। বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে দক্ষিণ এশিয়া অস্থিতিশীল হবে। আর দক্ষিণ এশিয়া অস্থিতিশীল হলে বিশ্বসমাজে তার প্রভাব পড়বে। সে কারণেই আমরা এমন নীতি গ্রহণ করবো যা দেশের এবং আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা জোরদার করবে। শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ এক বিশ্বসমাজ গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ও আমাদের প্রতিবেশী সকল দেশ যাতে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে আগামীতে আমাদের সরকার সে-ভাবেই কাজ করবে। সাংবাদিক বন্ধুগণ, বাংলাদেশী হিসেবে আমরা নানা গৌরবগাঁথায় পরিপূর্ণ এবং উজ্জল ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় এক মহান জাতি। সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক, ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে আমাদের সকলের পরিচয় আমরা বাংলাদেশী। এদেশের প্রতিটি নাগরিকের সংবিধান ও আইনের আওতায় সুরক্ষা ও নিরাপত্তা পাবার অধিকার সম্পূর্ণ সমান। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় পরিচয়ে যারা সংখ্যায় কম, সেই নাগরিকরা অনেক সময় অরক্ষিত হয়ে পড়েন। কখনো কখনো তারা নিরাপত্তা-ঝুঁকিতে থাকেন। আইনের আওতায় তারা যথাযথ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পান না। তাদের বাড়ি-ঘর ও উপসনালয়ে হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। তাদের সম্পদ দখল করা হয়। তারা নিজেরাও আক্রান্ত ও হেনস্তার শিকার হন। এটা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। আমরা সরকারে গেলে সকল নাগরিকের সমনিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। কোনো সম্প্রদায়ের জীবন, সম্পদ, উপাসনালয় ও সম্ভ্রমের ওপর হামলা হলে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনামলে এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। সাম্প্রতিককালে বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য আমরা বারবার আহ্বান জানিয়েছি। বর্তমান সরকার তা করেনি। আমরা সরকারে গেলে এ জাতীয় সকল ঘটনার ব্যাপারে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে অপরাধীদের চিহ্নিত ও শাস্তিবিধান নিশ্চিত করা হবে। সংযম ও সহিষ্ণুতাই হচ্ছে সভ্যতার লক্ষণ। আমাদেরকে সর্বোচ্চ সংযম ও সহিষ্ণুতা অর্জন করতে হবে। আমরা যে সমাজে বাস করি সেখানে কেবল ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকাই যথেষ্ট নয়। চিন্তার বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্যকে আমাদের স্বাগত জানাতে হবে এবং ভিন্নমতকে সম্মান দিতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই বৈচিত্র্যের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত নির্ভর করে এমন এক বাংলাদেশ গড়ার ওপর, যেখানে ধর্ম, গোত্র, নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ও রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে সকল নাগরিক তাদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সমান সুযোগ ও অধিকার পাবে। যেখানে প্রত্যেকে বাস করতে পারবে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশে। যেখানে প্রত্যেকের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা হবে সম্পূর্ণ হুমকিমুক্ত। আমি বহুবার বলেছি, আজ আবারো বলছি, আমরা বাংলাদেশের কোনো নাগরিক কিংবা গোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু বলে বিবেচনা করি না। আমাদের সকলের অভিন্ন পরিচয় আমরা বাংলাদেশী। সাংবাদিক ভাই-বোনেরা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে তাঁর ভাষণেও আমার, আমার সরকার, দল, পরিবার ও রাজনৈতিক কার্যালয় সম্পর্কে অনেক কুৎসা রটিয়েছেন। আমি এর পাল্টা বক্তব্য দিতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী, তার পরিবারের সদস্যবর্গ ও আত্মীয়-স্বজন সম্পর্কে বিস্তার অভিযোগ ও তথ্য থাকা সত্বেও আমি এ নিয়ে কোন কথা বলতে চাইনা। আমি মনে করি, অনেক হয়েছে। বাংলাদেশের সুরুচিবান মানুষ আর এসব শুনতে চান না। আমাদেরকে এই অপ-সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে জাতির আশা-আকাঙ্খার আলোকে, সময়ের দাবি অনুযায়ী নতুন ধারার রাজনীতি প্রবর্তন করতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বদল করার, উন্নত করার এখন সময় এসেছে। এর সূচনা কাউকে না কাউকে করতেই হবে। আজ আমি আপনাদের সামনে সেই পরিবর্তনের আহ্বান নিয়ে এসেছি। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবেই। বিতর্কের মধ্য দিয়ে আমরা মতৈক্যে পৌঁছাবার চেষ্টা করবো। কিন্তু সেই বিতর্কে অনেক সময় শোভনীয়তার সীমা ছাড়িয়ে যায়। পারষ্পরিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করে। এই ধারার পরিবর্তন করতে হবে। রাজনীতির পরিভাষা শোভন, মার্জিত ও যুক্তিনিষ্ঠ হতে হবে। রাজনৈতিক বিতর্কে অতীতচর্চ্চা, ব্যক্তিগত ও অশালীন আক্রমণ বন্ধ করা দরকার। তার বদলে আমরা বিতর্ক করবো আমাদের রাজনৈতিক দর্শনের উৎকর্ষতা নিয়ে। বাংলাদেশের বিরাজমান সমস্যা ও সংকট সমাধানের পন্থা নিয়ে আমরা বিতর্ক করবো। ব্যক্তিগত আক্রমণ কোনো সুফল বয়ে আনেনা। এতে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের নাগরিকেরা। কারণ রাজনৈতিক অঙ্গনের ব্যক্তিগত রেষারেষিতে সরকারের করণীয় প্রধান কাজগুলো কম গুরুত্ব পায় এবং এতে হিংসা ও হানাহানি প্রশ্রয় পায়। রাজনীতি অস্থির ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আপনারা জানেন এবং আমি নিজেও বুঝি যে, পরিবর্তনের কথা কেবল মুখে বলাই যথেষ্ট নয়। কেননা এদেশের জনগণ অতীতেও পরিবর্তনের অঙ্গীকার রাজনীতিকদের কণ্ঠে শুনেছে। সে কারণে আজ আমি আপনাদের মাধ্যমে খুব স্পষ্ট করে একটি কথা বলে এই পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটাতে চাই। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে, যারা আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অতীতে নানা রকম অন্যায়-অবিচার করেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন, আমি তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করছি। আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। সরকারে গেলেও আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেবো না। আমি কথা দিচ্ছি, আমার দৃষ্টি নিবন্ধ থাকবে বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জল ও অধিক নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার কাজে। প্রতিশোধ নেয়ার, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মতো কোনো ইচ্ছা ও সময় আমার নেই। আমি প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা মেটাবার জন্য কোনো সময় ব্যয় করবো না। আমি আশা করি, একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ, শান্তিময় ও নিরাপদ আবাসভূমি গড়ে তুলতে আগামী দিনে আমরা সকলে মিলে একসাথে কাজ করবো। আমি তাদের সকল ইতিবাচক ধ্যান-ধারণা, পরামর্শ এবং অবদান ও অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাবো। সুচিন্তা ও ভালো পরিকল্পনা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের একার এখতিয়ারে নেই। আমরা যদি জাতি হিসাবে আমাদের সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই, আমরা যদি নাগরিকদের উন্নত জীবনের সন্ধান দিতে চাই, তাহলে রাজনৈতিক, নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় পরিচয়ে পরিচিত সমাজের প্রতিটি অঙ্গনের নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সকলের ভাবনা থেকে উপকৃত হবার সদিচ্ছা আমাদের থাকতে হবে। আগামীতে আমাদের সরকার হবে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার। আমাদের সরকার হবে মেধা ও মনণশীলতার সরকার। জাতীয় ঐক্যের সরকার। যারা সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারেন, যারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনেন, যারা সৎ-যোগ্য-দক্ষ, যারা সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারেন, যারা নেতৃত্ব দিতে পারেন, রাজনৈতিক মত-ধর্ম-নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নির্বিশেষে সেই সব মেধাবী ও যোগ্য নাগরিকদেরকে আমি আগামী দিনের জাতীয় ঐক্যের সরকারের সঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, মানুষ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। এবং একথা স্বীকার করতে আমার কোনো দ্বিধা নেই যে, অতীতে আমাদেরও ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। তবে একই সঙ্গে আমি বলতে চাই যে, আমরা ঐসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আগামীতে একটি উজ্জল, অধিক স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আমরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি সেই প্রবচনের সঙ্গে একমত যে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তাই আমরা অতীতের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করবো না।
সাংবাদিক ভাই-বোনেরা, আমরা সকলে জানি, এখন সারা দেশ পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ। গণতান্ত্রিক ধারাকে অক্ষুন্ন রেখে শান্তিপূর্ণপন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে হলে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের কেনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যই জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আমরা তুলেছি। সকল বিরোধীদল ও দেশের জনগণের বিপুল সমর্থনে এই দাবি আজ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে যা-কিছু বলেছেন তা জাতির আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কেননা এতে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন ও সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তিনি সংবিধানের যে দোহাই দিচ্ছেন, তা তারা নিজেরাই যথেচ্ছা রদবদল করে সংকট সৃষ্টি করেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করেছেন এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণের সুযোগ তৈরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তাবে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের যে অষ্পষ্ট ধারণা তুলে ধরেছেন তাতে সেই অন্তবর্তী সরকার প্রধান কে হবেন তা খোলাসা করেননি। এতে নাগরিকদের মধ্যে এই সংশয় রয়ে গেছে যে, তিনি সংসদ বহাল ও নিজের হাতে ক্ষমতা ও প্রশাসন কুক্ষিগত রেখে বিরোধী দলকে এক অসম প্রতিযোগিতায় আহ্বান জানাচ্ছেন। এটি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তিনি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের গণদাবি সম্পর্কে কোনো আলোচনার অবকাশ না রেখে একতরফাভাবে শুধুমাত্র নিজের সুবিধা অনুযায়ী একটি প্রস্তাব তুলেছেন। তিনি কেবল নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিরোধীদলের পরামর্শ চেয়েছেন। তাঁর এ বক্তব্যে জাতি হতাশ হয়েছে। আমি এখনো মনে করি, আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টির সুরাহা করা দরকার। এবং সেটা যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল। সে জন্য বিএনপি ও ১৮ দলের পক্ষ থেকে জনগণের আশা-আকাক্সার আলোকে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আমি এখন উপস্থাপন করছি। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক দুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই দুটি সরকারের উপদেষ্টারা তাদের নিরপেক্ষতার জন্য সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছিলেন। ঐ দুটি নির্বাচনে একবার আওয়ামী লীগ ও একবার বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। আমি প্রস্তাব করছি, ওই দুই সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল ৫ জন এবং বিরোধী দল ৫ জন সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন। তারাই আসন্ন নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা হবেন। আমার প্রস্তাব, সরকারী ও বিরোধীদলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন সম্মানিত নাগরিককে এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে নির্ধারণ করা হবে। আমি আশা করি শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি, তিনি এব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে দ্রুত আলোচনার কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। সাংবিধানিকভাবে এই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্যও আমি তাঁর প্রতি উদাত্ত্ব আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আরও বলতে চাই যে, বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে যাবার আগে প্রয়োজন বোধে ঐ অন্তবর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচিত করে দিতে পারে। সংসদ যেভাবে রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যদের নির্বাচিত করে থাকে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আমি আশা করি, বিপর্যয় মোকাবিলায় সক্ষম এ জাতি অচিরেই এ রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পাবে। সেই লক্ষ্যেই আমি এ প্রস্তাব তুলে ধরলাম। আমরা সংঘাত নয়, সমঝোতা চাই। স্বৈরশাসন নয়, গণতন্ত্র চাই। আমরা লগি-বৈঠার তান্ডব, গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে বাস যাত্রীদের হত্যা, অফিস যাত্রীদের দিগম্বর করার কুসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি এবং পরিবর্তনের প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে আছে। আসুন, আমরা সকলেই তাদের সেই প্রত্যাশার প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেই। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
আল্লাহ হাফেজ।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।