নেতৃত্বে ড. মুহাম্মদ ইউনূস
বাংলাদেশের নতুন যাত্রা
শপথ নিলো নবীন-প্রবীণের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নিয়েছে নতুন সরকার। দ্বিতীয় স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম সরকার এটি। এ এক নতুন সূর্যোদয়। লাল-সবুজের বাংলাদেশের নতুন পথ চলা। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের কবর রচনা। অতঃপর যাত্রা শুরু নতুন স্বপ্ন সারথীর।
গতকাল রাত সোয়া ৯টায় দেশী-বিদেশী ৪ শ’ অতিথির উপস্থিতে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরপর শপথ গ্রহণ করেন দু’জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ ১৩ জন। তাদেরও শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় ফারুক ই আযম, বিধান রঞ্জন রায় ও সুপ্রদীপ চাকমা উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিতে পারেন নি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্য উপদেষ্টারা হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’র প্রধান অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ, অবসরপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি ‘বেলা’র প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো: নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন, নারী নেত্রী ফরিদা আখতার, বাংলাদেশী সুন্নি দেওয়াবন্দী ইসলামিক ব্যক্তিত্ব ড. আ.ফ.ম খালিদ হাসান, গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক নুরজাহান বেগম এবং ‘ব্্রতী’র প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ।
শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি’র প্রেসিডিয়াম মেম্বার ড.মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, এলডিপি’র চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি (জেপি)র চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি’র সভাপতি আ.স.ম. আব্দুর রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান ড. নূরুল আমীন বেপারি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মহাসচিব প্রিন্সিপাল ইউনূস আহমাদ, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বামপন্থি রাজনীতিকদের মধ্যে মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম, রুহিন হোসেন প্রিন্স ও জোনায়েদ সাকি সহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতা, সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের সচিব, পদস্থ কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগ এবং দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কোনো নেতাকে শপথ অনুষ্ঠানে দেখা যায় নি। এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ইরান, আর্জেন্টিনা, ফিলিস্তিন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ উপস্থিত ছিলেন।
শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ড. মাহবুবুর রহমান। যথারীতি জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শপথের মূল আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমেই দু’বার শপথ গ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথমত: প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ, দ্বিতীয়ত: রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার শপথ।
অন্তর্বর্তী সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয় পেলেন: বাংলাদেশের নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বণ্টন করা হয়েছে। শুক্রবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেনের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ মন্ত্রণালয়গুলো বণ্টন করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস
১. মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; ২. প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; ৩. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; ৪. শিক্ষা মন্ত্রণালয়; ৫. সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; ৬. খাদ্য মন্ত্রণালয়; ৭. গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; ৮. ভূমি মন্ত্রণালয়; ৯. বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়; ১০. কৃষি মন্ত্রণালয়; ১১, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; ১২. রেলপথ মন্ত্রণালয়; ১৩. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; ১৪. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; ১৫. নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়; ১৬. পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; ১৭. মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়;
১৮. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; ১৯. তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; ২০. প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; ২১. বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; ২২, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; ২৩. সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়; ২৪. বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; ২৫. মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; ২৬. পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ২৭. প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।
উপদেষ্টাগণ যে মন্ত্রণালয় পেলেন- সালেহ উদ্দিন আহমেদ : অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আসিফ নজরুল : আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আদিলুর রহমান খান : শিল্প মন্ত্রণালয়, হাসান আরিফ : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, তৌহিদ হোসেন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, শারমীন এস মুরশিদ : সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন : ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ফরিদা আখতার : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নুরজাহান বেগম : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নাহিদ ইসলাম : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।