প্রকাশ্যে আসলেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম নায়ক মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক
বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সলঃ মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক। একজন জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তাঁকে বানানো হয়েছে জঙ্গী। এ জঙ্গী ট্যাগ দিয়ে তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন। সেনাবাহিনীর তাঁর কলিগ এবং সহপাঠী-বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনরা মনে করেছিলেন, তিনি আর বেঁচে নেই; তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেছেন, তিনি গুম করেছেন। প্রায় এক যুগেরও মতো সময় ধরে তিনি ছিলেন আড়ালে। কেউ কখনো কল্পনা করতে পারেনি, তিনি বেঁচে আছেন।
গত ৩০ অক্টোবর দেশপ্রেমিক ও সাহসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের প্রকাশিত একটি ভিডিও’র পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসে মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হকের নাম। এ ভিডিওতে তিনি প্রথমেই মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হকের কথা তুলে ধরেন। তাঁর অবদানের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনীর একমাত্র সদস্য তিনি যিনি অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার জন্য ক্যু করেছিলেন। কিন্তু সেই ক্যু ব্যর্থ হয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন নিখোঁজ। প্রায় তেত্রিশ মিনিটের এই ভিডিওতে তিনি প্রথম আলোর দেশবিরোধী নানামাত্রিক ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন। এই ভিডিওটি পুরো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এ ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর আবারো আলোচনায় চলে আসে মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হকের নাম। পুরো সোশ্যাল মিডিয়ার টক অব ইস্যু হয়ে যায় মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হকের বন্ধু ৪১ লং কোর্সের বন্ধু বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা খিজির হায়াত খান এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমান একটি ভিডিওতে উল্লেখ করেন-মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক বেঁচে আছেন। তাঁর সাথে কথা হয়েছে, এমন বক্তব্যও তিনি দেন। তিনি উল্লেখ করেন, মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক ২০১১ সালেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, সশস্ত্র বিপ্লব ছাড়া অবৈধ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাকে নামানো সম্ভব নয়। এ বিপ্লবকে তিনি অপরিকল্পিত উল্লেখ করে জিয়াকে স্যালুট জানান। তিনি মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হককে আমাদের গণঅভ্যুত্থানের প্রথম হিরো হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি তাঁর পক্ষে আওয়াজ তুলার জন্য সবাইকে আহবান জানান।
সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হকের সম্পর্কে তাঁর বন্ধু বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের প্রথম স্পোর্টস-ফিল্ম নির্মাতাখ্যাত খিজির হায়াত খান নিজের ভেরিফাউড ফেইসবুক আইডিতে লিখেন, ‘আমার বন্ধু মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক বেঁচে আছে আলহামদুলিল্লাহ। শেখ হাসিনার সরকার ওকে জঙ্গী আখ্যা দিয়ে মারতে পারে নাই। লেটস ব্র্রিং আওয়ার বয় ব্যাক টু লাইফ উইথ অনার বাংলাদেশ। তার ১১ বছরের ফেরারি জীবনের অবসান হোক। ব্যস, এটুকুই চাই।’
পুরো সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হককে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, ঠিক একই সময় গত ৪ নভেম্বর আল জাজিরার প্রখ্যাত সাংবাদিক জুলকারনায়েন শায়ের তার ইউটিউব চ্যানেলে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন। এই অডিও সাক্ষাৎকারটি ছিল স্বয়ং মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হকের। এ অডিও সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন, কর্মজীবনসহ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। শুরুতেই তিনি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক সম্পর্কে তাঁর শিক্ষক লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন উজ্জ্বল অফিসার ছিল। সে ছিল আমার প্রিয় ছাত্রদের অন্যতম। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ)-এর বারো বছরের ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হককে দেখেছি। সে ছিল মেধা, প্রজ্ঞা এবং চরিত্রের সমন্বয়ের একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। আমি বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে আমার প্রিয় ছাত্র বিগেডিয়ার জেনারেল আজমী এবং মেজর জিয়ার সন্ধান চেয়ে ফেইসবুকে লিখেছি। জিয়া ছিল অত্যন্ত মেধাবী সেনা অফিসার। সে ছিল তাঁর তরুণ সোর্ড অব অনার অফিসার এবং সিনিয়রদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। আমি বিশ্বাস করি, সে আবার দেশে আসবে এবং এ দেশের মানুষের সেবায় নিয়োজিত হবে।
মেজর জিয়া সম্পর্কে তাঁর বাবা সৈয়দ জিল্লুল হক বলেন, ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর সাংবাদিক সন্ত্রাসী কায়েদায় আমার কাছ থেকে সাক্ষাৎকার নেন। আমাকে বাধ্য করেন আমার ছেলে সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তব্য দিতে। অন্যথায়, আমাকে আয়নাঘর কিংবা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হতে হতো। প্রথম আলোর একটি মিথ্যা রিপোর্টে তছনছ হয়ে যায় মেজর জিয়ার পুরো পরিবারের জীবন।
উল্লেখ্য, মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক ৪১ লং কোর্সে কর্মরত ছিলেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে ‘জঙ্গী’ আখ্যা দিয়ে চাকুরিচ্যুত করে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বলে দাবি করা হয়। শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার তাকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। যদিও এগুলোর সবকিছু ছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের ষড়যন্ত্র। তাঁর বিরুদ্ধে করা গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিখোঁজ হয়ে যান মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক। তাঁর বিষয়টি সামনে আসার পর দেশপ্রেমিক জনতার একটিই প্রশ্ন-মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক কবে একেবারে জনসম্মুখে আসবেন? এমনটিই প্রত্যাশা করছেন তাঁর বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, সহপাঠী এবং আত্মীয়-স্বজনরা।