চাপের মুখে পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক

অবশেষে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার সরকারের সিটি মিনিস্টার ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সাথে আর্থিক যোগসূত্র নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠায় চাপের মুখে পদত্যাগ করেন তিনি। টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।
মূলত, টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য, তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেয়া। কিন্তু বাংলাদেশে এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি। এছাড়া নিজের সকল আর্থিক বিষয়াবলীর ব্যাপারে তদন্তকারীকে তথ্য দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন টিউলিপ।
মন্ত্রী থাকলে সরকার তার কাজে মনযোগ দিতে পারবে না উল্লেখ করে টিউলিপ বলেছেন, ‘এ কারণে আমি আমার মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, পেনসনমন্ত্রী এমা রেনল্ডস টিউলিপের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
গত সপ্তাহে টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। যদিও হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের ৪২ বছর বয়সী এমপি টিউলিপ দাবি করেছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। এছাড়া, টিউলিপ সিদ্দিককে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানায় দেশটির দুর্নীতিবিরোধী জোট ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন।
সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, ‘স্যার কেয়ার স্টারমার তার মন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা ধরে রেখেছেন। যদিও টিউলিপকে বরখাস্ত করতে নতুন করে চাপের মুখোমুখি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে টিউলিপের পারিবারিক সম্পর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ওপর এই চাপ তৈরি হয়েছে।’
উল্লেখ্য, আর্থিক দুর্নীতির এক মামলায় বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার খালা শেখ হাসিনাসহ পরিবারের আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের এই মন্ত্রী ব্যাপক চাপে আছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
৪২ বছর বয়সী টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন, যেখানে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button