আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে লন্ডনের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন
মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষায় ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে জীবন উৎসর্গকারী ছাত্র—জনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অমর একুশের প্রথম প্রহরে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল রোডস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হন টাওয়ার হ্যামলেটস সহ লন্ডনের বিভিন্ন বারা ও বাইরে থেকে আসা সর্বস্তরের জনসাধারণ সহ বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষজন।
মধ্যরাতের এই শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কমিটি।
টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধিবৃন্দ, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এবং সব বয়সের বাসিন্দারা প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়া উপেক্ষা করে আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের (ইউএন) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেন।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, যা শহীদ দিবস হিসেবেও পরিচিত, প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি সারা পৃথিবীজুড়ে ভাষার সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরতে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা, শিক্ষা উন্নত করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সহায়তা করতে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়।
২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ১৯৫২ সালের সেই ঘটনার বার্ষিকী, যখন মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করায় বেশ কয়েকজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়। ১৯৫৩ সাল থেকে এটি বাংলাদেশে সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে নির্মিত শহীদ মিনারের অনুকরণ সংস্করণ হোয়াইটচ্যাপেলের আলতাব আলী পার্কে স্থাপন করা হয়, যা টাওয়ার হ্যামলেটসে জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের কেন্দ্রবিন্দু।
এ বছর উদযাপনের থিম হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজত জয়ন্তী উদযাপন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) দ্বারা ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বছর ভাষাগত বৈচিত্র সংরক্ষণ এবং মাতৃভাষার প্রচারের জন্য একটি চতুর্থাংশ শতাব্দী উদযাপন করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মতে, মাতৃভাষা শিক্ষা শেখানো, সাক্ষরতা এবং অতিরিক্ত ভাষা অর্জনে সহায়ক।
অমর একুশের প্রথম প্রহরে টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন এবং যারা তাদের মাতৃভাষার স্বীকৃতির জন্য অসামান্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের স্মরণ করার সুযোগ পেয়ে গর্বিত। টাওয়ার হ্যামলেটস এমন একটি বারা যেখানে বিভিন্ন পটভূমির মানুষকে স্বাগত জানানো হয়। এই বছরের স্মরণের মূল বিষয় হলো ভাষাগত বৈচিত্র উদযাপনের গুরুত্ব তুলে ধরা।”
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার আবিদা ইসলাম বলেন, “যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার হিসেবে, টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র এবং ব্রিটিশ—বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো একটি মহান সম্মানের বিষয় ছিল। এই অনুষ্ঠানটি আরও গভীর তাৎপর্য বহন করে, কারণ আমরা ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির রজত জয়ন্তী পালন করছি, যা ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্থায়ী গুরুত্বের একটি শক্তিশালী প্রমাণ।”