জুডিশিয়াল হত্যাকান্ডের দায় সরকারকে বহন করতে হবে : সেইভ বাংলাদেশ
জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার রায়কে জুডিশিয়াল হত্যা প্রচেষ্টা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক নাগরিক সংগঠন ‘সেইভ বাংলাদেশ’ নেতৃবৃন্দ বলেছেন অবিলম্বে সরকারকে যুদ্ধপরাধ ট্রাইব্যুনাল বন্ধ করে দিতে হবে। গত ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই আহ্বান জানান সেইভ বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্ত্বে ও মাহিম মজুমদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামা ইউরোপের আমীর মুফতি শাহ সদর উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যরিস্টার আবু বকর মোল্লা, খেলাফত মজলিস ইউকের আমীর, অধ্যাপক আব্দুল কাদির সালেহ, সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী সিরাজুল ইসলাম শাহীন।
সমাবেশ শেষে একটি প্রতিনিধি দল ব্রিটিশ প্রধনমন্ত্রীর বরাবরে একটি স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারক লিপিতে, বাংলাদেশে বিরোধী নেতৃবন্দকে বিচারিক হত্যাকান্ড বন্ধে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
এদিকে সমাবেশে বক্তারা বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে দেশের বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু দেশের জনগন তাদের এই দূরভিসন্ধি বাস্তবায়িত হতে দেবেনা। নেতৃবৃন্দ বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লাহর বিরুদ্ধে কোন অপরাধই প্রমাণ করতে পারেনি তথাকথিত ট্রাইব্যুনাল। কেবলমাত্র একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আপীল বিভাগ। বিচারিক প্যানেলের মধ্যে ছিল মানিকের মতো চিহ্নিত দলবাজ আর স্কাইপগেট কেলেংকারীর অন্যতম হোতা এস কে সিনহা। কট্টর দলবাজ এইসব বিচারকরাই সরকারের নীল নকশা অনুযায়ী অন্যায়ভাবে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। তারা বলেন, বিচারিক আদালতে যেখানে মুত্যুদন্ড দেয়নি সেখানে প্রথম বারের মতো সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের মৃত্যুদন্ড প্রদান বাংলাদেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন। তাছাড়াও স্কাইপ কেলেঙ্কারির পরও ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন প্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড প্রদান আইনেরর শাসনের পরিপন্থী। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার যে জুডিশিয়াল কিলিং করার ষড়যন্ত্র করছে তার প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন রায় দেয়ার পর কিছু ভাড় কে দিয়ে শাহবাগে নাটক মঞ্চায়ন করে সরকার নিজের পক্ষে আপীল করার অধিকার নিশ্চিত করে অবৈধ আইন তৈরী করেছে। মামলার রায় হওয়ার পর আইন পিরবর্তন করে তা ভূতাপেক্ষভাবে প্রয়োগ করে আব্দুল কাদের মোল্লাহর মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করা হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে কোন বিচার নয়, সরকারের ইচ্ছাই এখানে প্রাধান্য পাচ্ছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে আব্দুল কাদের মোল্লাহর রায় বাতিল করে তাকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়ার দাবী জানান।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, একই কায়দায় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার নিরপরাধ মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু দেশের মানুষ তা যেকোন মূল্যে প্রতিহত করবে। তারা বলেন, সরকারের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। কোন ষড়যন্ত্রই আর আওয়ামী দুঃশাসনকে ফিরিয়ে আনতে পারবেনা ।
সেভ বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে দেশ থেকে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নির্বাসনে পাঠিয়েছে। এখন একতরফা নির্বাচন করার অপচেষ্টা চালিয়ে দেশকে রক্তাক্ত করার চক্রান্ত করছে। বর্তমান সরকারের নিকট দেশের সংবিধান ও জনগণের মতামতের কোন মূল্য নেই। তারা ক্ষমতার দাপটে ধরাকে সরাজ্ঞান করে গায়ে পড়ে বিরোধীদলগুলোর সাথে সংঘাত ও সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু দেশের জনগণ সরকারের একতরফা নির্বাচন করার খায়েস কখনো পূরণ করতে দিবে না। সরকার সংবিধান বহির্ভূত সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়ে এবং আলোচনার কথা বলে জনগণের আন্দোলন বানচাল করার কৌশল গ্রহণ করেছে। দেশের জনগণ সরকারের ঐ কূটকৌশল কখনো বাস্তবায়িত করতে দিবে না। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আদায় করবে। জনগণ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তারা বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে পরিচালিত প্রহসনের নীলনকশার নির্বাচনে দেশের জনগণ অংশ নিবে না। বরং সেই নির্বাচন জনগণ প্রতিহত করবে।
সমাবেশ শেষে একটি প্রতিনিধি দল ব্রিটিশ প্রধনমন্ত্রীর বরাবরে একটি স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারক লিপিতে, বাংলাদেশে বিরোধী নেতৃবন্দকে বিচারিক হত্যাকান্ড বন্ধে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানায়। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ব্রিটেন বাংলাদেশের উন্নয়নে বৃহ্ত্তম দাতাদেশ। দেশটির সাথে ব্রিটেনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিদ্যমান। ব্রিটেন মৃত্যুদন্ডের বিরোধী। কমন ওয়েলথের নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে ব্রিটেন বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলাপ করতে পারে এবং তার উদ্বেগ জানাতে পারে। স্মারকলিপিতে, বাংলাদেশের চলমান বিতর্কিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জাতিসংঘের তত্ত্ববধানে একটি আন্তজার্তিক মানের ট্রাইব্যুনালের অধীনে বিচার অনুষ্ঠানের জন্য বিট্রিশ প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ গ্রহনের আহ্বান জানানো হয়।