সৌদি-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে

সৌদি আরবে ৫০টি ব্রিটিশ কোম্পানি আঞ্চলিক সদর দপ্তর স্থাপন করেছে

সৌদি আরবের অর্থনীতিতে শক্তিশালী বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির কারণে ৫০টি ব্রিটিশ কোম্পানি দেশটিতে তাদের আঞ্চলিক সদর দপ্তর স্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে দেশটিতে ১,৩০০টিরও বেশি ব্রিটিশ কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে, জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এক উচ্চপদস্থ বাণিজ্য কর্মকর্তা।
যুক্তরাজ্য নিজেকে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক রূপান্তরের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করছে। বর্তমানে উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৭ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২২.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছাড়িয়েছে, এবং এটি ভিশন ২০৩০-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের জন্য যুক্তরাজ্যের ডেপুটি বাণিজ্য কমিশনার পিটার অ্যাশবি আল-ইকতিসাদিয়াহকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে উষ্ণ ও গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক উপভোগ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এক দৃঢ় ভিত্তি থেকে এবং পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধার জায়গা থেকে কাজ শুরু করছি।”
উভয় সরকার “ভিশন ২০৩০ এবং যুক্তরাজ্যের আসন্ন শিল্প কৌশলের আওতায় নতুন খাতে মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে একসঙ্গে কাজ করছে।”
তিনি আরও জানান, সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল-কাসাবি এবং যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও ব্যবসায় বিষয়ক সচিব জোনাথন রেনল্ডসের নেতৃত্বে গঠিত ইউকে-সৌদি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ কাউন্সিল এই দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু।
‘গ্রেট ফিউচারস’ উদ্যোগ
এই পার্টনারশিপের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো ‘Great Futures’ প্রচারণা, যা বাণিজ্য, পর্যটন, উদ্ভাবন এবং সাংস্কৃতিক অংশীদারত্ব প্রচারে নিবেদিত একটি যৌথ কর্মসূচি। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের মতো অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতে চুক্তির ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।
অ্যাশবি জানান, “এই ক্যাম্পেইন চলমান এবং এটি যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করছে। এর আওতায় ‘UK-Saudi Skills Forum’, ‘Human Capability Initiative’ ও ‘EDGEx Education Global Exhibition’ এর মতো ইভেন্ট আয়োজিত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই প্রচারণার প্রাথমিক ইভেন্টে ৫০টিরও বেশি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মূল্য ছিল ৭.৭ বিলিয়ন পাউন্ড এবং যা দুই দেশে প্রায় ৪,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এইসব ঘোষণা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে হয়েছিল।”
এই চুক্তির মধ্যে অন্যতম ছিল যুক্তরাজ্যের হাইড্রোজেনভিত্তিক কোম্পানি HYCAP-এর একটি চুক্তি, যার মাধ্যমে সৌদি অংশীদারদের সঙ্গে মিলে ৭৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি বিনিয়োগে হাইড্রোজেন ভিত্তিক পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এই প্রকল্পে যুক্তরাজ্যের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১,০০০ এর বেশি কর্মসংস্থান হবে।
ভিশন ২০৩০-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য
অ্যাশবি বলেন, যুক্তরাজ্য তার প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০-এর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলোর সঙ্গে কৌশলগতভাবে সামঞ্জস্য করছে, বিশেষ করে অ-তেল খাতে রূপান্তরকে সমর্থন করতে।
যুক্তরাজ্য বর্তমানে এমন খাতগুলোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছে যেখানে তারা বৈশ্বিক নেতৃত্বে আছে—যেমন: শক্তি, আর্থিক পরিষেবা, পরিষ্কার প্রযুক্তি, উন্নত উৎপাদন, ডিজিটাল উদ্ভাবন, স্বাস্থ্যসেবা, বায়োটেক, সৃজনশীল শিল্প এবং প্রতিরক্ষা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button