চিকিৎসায় গাফিলতির জন্য ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দন্ড
চিকিৎসায় গাফিলতির ঘটনায় যুগান্তকারী রায় দিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতার এএমআরআই হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে ৩৬ বছর বয়সে মারা যান ডা. কুণাল সাহার স্ত্রী অনুরাধা সাহা। এ জন্য আদালত ওই হাসপাতাল ও এর তিন চিকিৎসককে দোষী সাব্যস্ত করে কুণালকে পাঁচ কোটি ৯৬ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এস জে মুখোপাধ্যায় ও ভি গোপালা গাওদার নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ এ রায় দেন। আট সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ভারতের ইতিহাসে চিকিৎসায় গাফিলতির জন্য এটাই সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের ডা. কুণাল তাঁর স্ত্রী অনুরাধাকে নিয়ে ১৯৯৮ সালের মার্চে কলকাতায় নিজেদের বাড়িতে ছুটি কাটাতে আসেন। একই বছরের ২৫ এপ্রিল চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে অনুরাধা এএমআরআই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সুকুমার মুখার্জিকে দেখান। চিকিৎসক অনুরাধাকে কোনো ওষুধ না দিয়ে শুধু বিশ্রাম নিতে বলেন। তবে ৭ মের মধ্যে অনুরাধার পুরো শরীরে চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ে। ১১ মে ডা. সুকুমার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন এবং ডিপোমেডরোল নামের একটি ইনজেকশন দিতে বলেন। ওই ইনজেকশন দেওয়ার পর অনুরাধার অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে। পরে তাঁকে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওই হাসপাতালে পরীক্ষার পর জানা যায়, অনুরাধা টঙ্কি এপিডারমাল নেক্রোসিস নামের বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ মে তিনি মারা যান। অনুরাধা নিজেও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ১৯৯৮ সালেই কুণাল এএমআরআইয়ের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ১৫ বছরের লড়াইয়ের পর গতকাল আদালত এ রায় দিলেন। আট সপ্তাহের মধ্যে দোষী চিকিৎসক ডা. বলরাম প্রসাদ ও ডা. সুকুমারকে ১০ লাখ করে এবং ডা. বৈদ্যনাথ হালদারকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে হবে। বাকি অর্থ দেবে এএমআরআই হাসপাতাল।
ডা. কুণাল বলেন, ‘রায়ে আমি খুশি। আমরা এখানে প্রতিদিন চিকিৎসার গাফিলতির কথা শুনি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দোষীরা ছাড়া পেয়ে যায়। আমি দেখতে চাই এবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেয়।’ সূত্র : পিটিআই।