হোয়াইট চ্যাপেলে ইউকেবিএ’র সাড়াশী অভিযান : ৩০ বাংলাদেশী আটক

Whitechapelসৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: বৃহস্পতিবার বেলা দুটোর কিছু পরে লন্ডনের জনবহুল এবং অতি পরিচিত খোলা বাজার এলাকায় চতুর্দিক থেকে পুলিশের পিকআপ ভ্যান, গাড়ী, প্রভৃতি যানবাহন দিয়ে ঘিরে অতর্কিতে সার্চ করতে আসে। প্রায় ৪০ জনেরও অধিক মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্য পুরো হোয়াইট চ্যাপেলের বাঙালি অধ্যুষিত খোলা বাজার এলাকা ঘিরে দোকানে দোকানে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। এসময় পুলিশ দোকানগুলো থেকে মোবাইল সামগ্রী, টেলিফোন কার্ড, বাংলাদেশের মোবাইলের সিম কার্ড, মানি ট্রান্সফার সামগ্রী,ট্র্যাভেল এজেন্টের ব্যবসায়ী সামগ্রী, পান-সুপারী, জর্দা, সাদা ইত্যাদি সামগ্রী ব্যাপকহারে জব্দ করে নিয়ে যায়। জনবহুল এলাকায় পুলিশী অভিযানের সময় ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পুরো এলাকা পুলিশ কর্ডন দিয়ে ঘিরে তল্লাশি চালায়। তল্লাশীকালে ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো বাংলাদেশীদেরকে বিভিন্ন দোকান থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। মোবাইল ও উপরি দোকানের লোকদের ব্যাপক তল্লাশি করে পুলিশের লোকজন। দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী পথচারী জানান, পুলিশী তল্লাশির সময় তিনি কাছে থেকে নিজে দেখেছেন, বহু লোককে ধরে নিয়ে যেতে। তাদের সকলেই বাংলাদেশী এবং অধিকাংশই তখন শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছিলেন। প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চান্ন মিনিট পর্যন্ত পুলিশ হোয়াইট চ্যাপেলের এই জনবহুল খোলা দোকানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে বলে প্রত্যক্ষদর্শী বাজার করতে আসা জনৈক মহিলা ও পথচারীগণ জানালেন। বিভিন্ন দোকানের ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, মোবাইলজাত পণ্য, কার্ড ব্যবসায়ের সামগ্রী প্রচুর পরিমাণে জব্দ করে নিয়ে গেছে পুলিশ।
অভিযান চলাকালীন সময়ে হোয়াইট চ্যাপেলের দুই দিকের রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ডানে এলএমসি সংলগ্ন সংযোগ সড়ক থেকে শুরু করে বাম দিকে সেইন্সবাড়ি শপিং এর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত পুলিশ বেষ্টনী ছিলো।
Whitechapel 2পুলিশী অভিযানের সময় কাছে থাকা টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কোন বাঙালি কর্মকর্তাকে বা কাউন্সিলরদের কাউকে দেখা যায়নি।
পুলিশী অভিযানের কিছু পরেই টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান হোয়াইট চ্যাপেল এলাকা ভিজিট করেন। তিনি প্রকাশ্যেই টেলিভিশন সাক্ষাতকারে পুলিশের এই রকম ভীতি সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীদের অঙ্গনে অভিযানের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, পুলিশের কাজ হলো সমাজে ও ব্যবসা অঙ্গনে শান্ত-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, জনমনে বা ব্যবসায়ী মহলে কোনরূপ ভীতি সৃষ্টি করা উচিৎ নয়। তিনি এধরনের অভিযানের নিন্দা জানান। এবং মালামাল সামগ্রী জব্দের প্রতিবাদ করেন। তবে গ্রেপ্তারকৃত কারো মুক্তি তিনি দাবী করেননি।
হোয়াইট চ্যাপেল খোলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির জনৈক সদস্য বলেছেন, তারা হিসেব করে দেখছেন, পুলিশ কি পরিমাণ ক্ষতি ও কেমন ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তারই আলোকে তারা আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করবেন।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে স্থানীয় ইংরেজি দৈনিকে টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় অবৈধ টেলিফোন, নেট ওয়ার্কিং, মানি ট্র্যান্সফার আর টেলিফোন কার্ড ও অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের কর্তৃক ব্যবসা ও নিরাপদ স্থান হিসেবে বেশ কয়েকটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, সেই সব রিপোর্টের প্রেক্ষিতেই টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার হোয়াইট চ্যাপেলের বাঙালি অধ্যুষিত খোলা বাজারে পুলিশের এই সাঁড়াশি অভিযান।
এছাড়া, বর্তমানে কোয়ালিশন সরকারের অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং যখন তখন পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button