আলতাব আলী পার্কে সেইভ বাংলাদেশের সমাবেশে বক্তারা : অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারকে দ্রুত বিদায় নিতে হবে
২৪ অক্টোবরের পর শেখ হাসিনা সরকারকে অবৈধ আখ্যায়িত করে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবী জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য ভিত্তিক নাগরিক সংগঠন ‘সেইভ বাংলাদেশ’ নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার বাদ জুমআ লন্ডনের ঐতিহাসিক আলতাব আলী পার্কে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে ১৮ দলীয় ঐক্যজোট যুক্তরাজ্য শাখার নেতৃবৃন্দ সহ কয়েক হাজার প্রতিবাদী জনতার সমাগম ঘটে। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি থাকায় বাদ জুমআ পূর্ব লন্ডনের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মুসল্লিরা এসে সমবেত হন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধিন সরকার দেশে হত্যা, সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে বিগত পাঁচটি বছর যে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে এর বদলা নেয়ার সময় এসেছে। সরকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে দেশে অঘোষিত বাকশাল কায়েম করে বিরোধীদল গুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে দেয়নি। দশ-বিশ জনের একটি মিছিল বের হলে সরকারী বাহিনী এবং দলীয় সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য জীবন কেড়ে নিয়েছে।
বক্তারা শেখ হাসিনাকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, ২৪ অক্টোবরের পর আপনার সব কার্যক্রম অবৈধ। নিজের ইচ্ছে মাফিক কায়দায় সংবিধান কাটাছেড়া করে এখন সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছেন। সময় থাকতে সরে দাঁড়ান। নইলে জনগণ সেই সব ক্ষমতালোভীদের মত অবস্থা করবে, যাদের মহাক্ষমতাও অপমানজনক পরিণতি থেকে রেহাই দেয়নি।
বিশিষ্ট আইনজীবী, সেইভ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মাহি মজুমদারের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অথিতির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট আইনজিবী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ।
বিশেষ অতিথীর বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামা ইউরোপের আমীর আল্লামা মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালিক, খেলাফত মজলিস ইউকের আমীর অধ্যাপক আব্দুল কাদির সালেহ, সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী সিরাজুল ইসলাম শাহীন ।
বক্তব্য রাখেন, ফ্রি সাঈদী ফেডারেশনের সেক্রেটারী আখতার হোসেন কাউসার, মাওলানা সৈয়দ জামাল আহমদ প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ২৪ তারিখের পর সরকারের যাবতীয় কর্ম-কান্ড অবৈধ। সংবিধানের দোহাই দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতা যেভাবে আকড়ে ধরে আছেন সেটা তিনি নিজেই সংবিধান লংঘন করছেন। তিনি বলেন, যারা দেশে আলেম-উলামা মাদ্রাসা ছাত্র, দেশপ্রেমিক ইসলামপ্রিয় জনতার রক্ত ঝড়িয়েছে, তাদের কোন ক্ষমা নেই। অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় জনরোষে পড়ে সব হাড়াতে হবে। ২৪ তারিখের পর শেখ হাসিনাকে অবৈধ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, যদি এর পর সরে না যান তবে একদিন প্রতিটা মিনিটের জন্য হিসেবে দিতে হবে।
প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন আল্লামা মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন, আওয়ামীলীগকে হুশিয়ারী বলেন, দেশপ্রেমিক ঈমানদার আলেম-উলামাকে বন্দুকের ভয় দেখাবেন না, ক্ষমতার বাহাদুরী দেখালে জনগণ আর বসে থাকবে না। ইসলাম, পবিত্র কোরআন এবং রাসুল (সাঃ) কে অপমানকারী নাস্তিক-মুরতাদদের অনেক প্রশ্রয় দিয়েছো। এবার বিচারের পালা শুরু হবে। অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় না নিলে জনগণ এ্যাকশনে নেমে যাবে। আল্লামা শাহ ছদর উদ্দিন যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত করে দেশের শীর্ষ আলেম-উলামা এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে বন্দী রেখে, ফাঁসী দিয়ে আবারো আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে উল্লেখ করে বলেন, তৌহিদী জনতা প্রস্তুন নিন, জালিমদের বিদায় না করে যেন আমাদের ঘরে ফেরা না হয়।
জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, আওয়ামীলীগ মানবতার দুশমন এবং ফ্যাসিস্ট আখ্যায়িত করে বলেন, পাঁচ বছর দেশকে হত্যা এবং সন্ত্রাসের জনপদে পরিণতকারীদের বিরুদ্ধে এবার প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। এদের একটাও যেন পালাতে না পারে।
ব্যারিস্টার মোল্লা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করে বলেন, সরকার ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির নেতৃবৃন্দের উপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে তা ইতিহাসের ঘৃণ্য অভিচার বললেও কম হবে। তিনি ট্রাইব্যুনাল বন্ধ, শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানিয়ে বলেন, অন্যথায় যে কোন পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতৃবৃন্দ দায়ী থাকবেন।
লেখাফত মজলিস ইউকের আমীর আব্দুল কাদির সালেহ বলেন, ২৪ তারিখ থেকে শেখ হাসিনা অবৈধ সরকার পরিচালনা করছে। গত পাঁচটি বছর দেশে তাওহিদী জনতার উপর ইতিহাসের ঘৃণ্য বর্বরতা চালিয়েছে। কোরআন ও রাসূল (সাঃ) এর উপর কুৎসা রটানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় মদদে। এখন সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে বদলা নিতে হবে। তিনি বলেন, এখন আর দলের কথা চিন্তা করবেন না, দেশকে হাসিনার কবল থেকে মুক্ত করার শপথ নিন।
সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, শেখ হাসিনাকে কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, পাঁচ বছর দেশে রক্তের হোলি খেলেছো। এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে না সরলে জনগণ গণধোলাই দিয়ে বিদায় জানাবে। তিনি যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ করে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানিয়ে বলেন, যদি নেতৃবৃন্দের কোন ক্ষতি হয়, তবে আওয়ামীলীগের কবর হয়ে যাবে। তিনি কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানিয়ে বলেন, অন্যথায় বিচারের জন্য প্রস্তুত হোন।