রাজশাহীতে র্যাব-পুলিশের গুলিতে শিবিরকর্মী নিহত
রাজশাহীতে হরতালের সমর্থনে আয়োজিত ১৮ দলীয় জোটের মিছিল-সমাবেশে পুলিশ ও র্যাবের গুলিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম রাশেদুল ইসলাম রান্টু। এসময় ২০ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরীর কাজলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও কিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত রাশেদুল ইসলাম নগরীর ধরমপুর এলাকার আমিনুল ইসলাম টুকুর ছেলে এবং বিনোদপুর ইসলামীয়া কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। রাশেদুল ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক ডাশমারি অঞ্চল শাখার সভাপতি ছিলেন। তার সাংগঠনিক মান সাথী। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- শিবির নেতা তোহা, শিবলী, নূর, মিজানুর রহমান, আদনান, লালন ও লিটন। এছাড়া এ ঘটনায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আশরাফুল হাসান বাচ্চু আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেশব্যাপী ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের সমর্থনে শনিবার বিকেল চারটায় রাজশাহী নগরীর কাজলা এলাকায় মিছিল-সমাবেশের আয়োজন করে ১৮ দলীয় জোট। এর আগে বিকেল তিনটা থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা যোগ দিতে থাকেন সমাবেশে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। মতিহার থানা বিএনপির সভাপতির বক্তৃতা চলাকালে সেখানে কয়েক ভ্যান পুলিশ ও র্যাব সদস্য অকস্মাৎ উপস্থিত হয়ে সমাবেশ ভণ্ডুল করতে একযোগে সমাবেশস্থলে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিপে করতে থাকে। এসময় সমাবেশে অংশ নেয়া নেতা-কর্মীসহ আশপাশের এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করতে থাকে। মুহূর্তেই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় পুলিশ ও র্যাবের গুলিতে শিবিরকর্মী রাশেদুল ইসলাম রান্টু ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ১৮ দলীয় নেতা-কর্মীরা র্যাব-পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। দ্রুত আরো পুলিশ এসে মারমুখি অ্যাকশনে নামে। তাদের আক্রমণের মুখে টিকে থাকতে না পেরে ১৮ দলীয় নেতা-কর্মীরা স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। এ ঘটনায় ২০ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়।
শিবিরকর্মী রাশেদুল ইসলাম রান্টু নিহত হবার সত্যতা স্বীকার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশের গুলিতে নয়, নিজেদের ছোঁড়া বোমা বিস্ফোরণে রান্টু নিহত হয়েছেন। বর্তমানে ওই এলাকায় পুলিশের অভিযান চলছে বলে তিনি জানান।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবদুস সোবহান জানান, মিছিল থেকে পুলিশের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। জবাবে পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিপে করে। তবে কোনো শিবিরকর্মী নিহত হওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
শিবিরের প্রতিবাদ: শান্তিপূর্ণ সমাবেশে র্যাব-পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির। রাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি আশরাফুল আলম ইমন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শোয়েব শাহরিয়ার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ১৮ দলীয় জোটের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পেছন থেকে গুলি চালিয়েছে র্যাব-পুলিশ সদস্যরা। এতে শিবিরকর্মী রাশিদুল ইসলাম শাহাদাত বরণ করেন। এছাড়াও প্রায় ২০ শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। তারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, আইনশৃংখলা রাকারী বাহিনী দলীয় কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছে। তারা ১৮ দলীয় জোটের শান্তিপুর্ণ সমাবেশে গুলি চালিয়ে শিবিরকর্মীকে হত্যা করেছে। শিবির নেতৃবৃন্দ তদন্তের মাধ্যমে সমাবেশে হামলাকারী পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের বিচারের দাবি জানান।