চীনে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে
অবৈধভাবে বিক্রি বাড়ানো এবং ওষুধের দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চীনের কর্মকর্তা ও ডাক্তারদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের বিরুদ্ধে। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে এসব ঘুষ দেওয়া হচ্ছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, এর ফলে ২০১০ সালের পর থেকে চীনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্পোরেট তদন্ত শুরু হয়েছে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনকে (জিএসকে) নিয়ে। ২০১০ সালের মার্চে ঘুষ নেওয়া এবং বাণিজ্যিক গোপনীয়তা বিনষ্টের জন্য শীর্ষ খনিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রিও টিন্টোর চার কর্মকর্তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
চীনের জনসাধারণের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন আর্থিক অপরাধ তদন্ত দলের প্রধান গাও ফেং এ ব্যাপারে জানান, ২০০৭ সালের পর থেকে সাত শতাধিক ট্র্যাভেল এজেন্সি ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৪৯ কোটি ডলার স্থানান্তর করেছে জিএসকে।
এদিকে, জিএসকে চীনের আটক হওয়া চার কর্মকর্তার মধ্যে জিএসকে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার লিয়াং হোং এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মানবসম্পদ পরিচালক ঝাং গুওই রয়েছেন। গত সপ্তাহে তারা ঘুষ ও কর অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন।
লিয়াংয়ের সঙ্গে কাজ করেছেন, এমন এক ট্র্যাভেল এজেন্টকেও আটক করা হয়েছে। ওই এজেন্ট ঘুষের টাকা আয়োজন করা ও পৌঁছে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। আর যে ওষুধ তৈরিতে ৩০ ইউয়ান (চীনের মুদ্রা) খরচ হতো, সেটা রোগীদের কাছে ৩০০ ইউয়ানে বিক্রি করা হতো বলে জানিয়েছেন লিয়াং।
এ বিষয়ে জিএসকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে জানায়, তদন্তের মাধ্যমে শনাক্ত করা ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোর সঙ্গে তারা আর কাজ করবে না। তৃতীয় পক্ষের সব এজেন্সি ও ট্র্যাভেল এজেন্সি সম্পর্কিত সব লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তারা আরো উল্লেখ করেন, ‘জিএসকে চীনের কর্তৃপক্ষের মতোই দুর্নীতির মূলোৎপাটন চায়। অভিযোগগুলো লজ্জাজনক এবং আমরা এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’
পরামর্শ সেবার নামে ডাক্তার ও কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারে গাও ফেং বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে এসব লেনদেন অবৈধভাবে হয়েছে। ট্র্যাভেল এজেন্সি ও জিএসকে কে অপরাধ পার্টনারও বলা যেতে পারে। আর এ ধরনের অপরাধ সংঘটনে একজন নেতা থাকে, জিএসকে হচ্ছে সেই নেতা।’
কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারটা ঠিক কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে তা না জানালেও ফেং আরো জানান, যৌন সম্পর্কিত ঘুষ দেওয়ারও আলামত পাওয়া গেছে। তবে এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত বলেননি।
জিএসকের পাশাপাশি আরো কিছু কোম্পানির বিরুদ্ধেও এ ধরনের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া চীনে জিএসকে’র ফিন্যান্স ডিরেক্টর স্টিভ নেশেলপুট সপ্তাহ তিনেক আগে দেশ ত্যাগ করতে চাইলেও তদন্ত চলাকালে তাকে চীনেই অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে জিএসকে চীনে ১১৫ কোটি ডলারের ওষুধ ও প্রতিষেধক বিক্রি করে, যা তাদের বৈশ্বিক বিক্রির প্রায় সাড়ে তিন ভাগ। তারা চীনে ফুসফুসজনিত সমস্যা ও ক্যান্সারের মতো রোগের ওষুধ সরবরাহ করে।
এ ব্যাপারে ব্রিটেনে জিএসকে’র হেডকোয়ার্টার থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে চীনের পুলিশ।
এর আগে ব্রিটেনে নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও বাজারে কমদামের জেনেরিক ওষুধ না আনার জন্য অন্যান্য ছোট ওষুধ কোম্পানিকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল জিএসকে’র বিরুদ্ধে।